রাজস্থান বেড়াতে গেলে ভ্রমণ তালিকায় জায়পুর রাখবেন না উদয়পুর? ছবি: সংগৃহীত।
রাজস্থান মানেই ইতিহাস, কত-শত কাহিনি, দুর্গ। ভূগোলের বইয়ে পড়া মরুভূমি, ইতিহাস বইয়ের সেই রাজপুত-যোদ্ধা— সবই যেন এখন কালের নিয়মে থমকে গিয়েছে। তবে বাংলা এবং বাঙালির সঙ্গে এ রাজ্যের আলাদা যোগসূত্র তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তাঁর জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘সোনার কেল্লা’-র কথা এখনও জয়সলেমেরের গাইডদের মুখে মুখে ঘোরে।
সেই রাজ্যে ভ্রমণ কি ৪-৫ দিনে হয়? রাজস্থানের নামজাদা পর্যটন স্থানগুলি ঘুরে দেখতে গেলে খুম কম করেও দিন ১৫ লাগবেই। তবে এখন আর লম্বা সফরের সময়-সুযোগ সকলের হয় না। কেউ কেউ চান, একটি শহরে থেকে দিন চার-পাঁচ যা সময় মেলে, তাতে সেই স্থানটি যথা সম্ভব ভাল করে ঘুরে দেখবেন।
আপনিও সেই তালিকায় থাকলে প্রথম বার ঘোরার জন্য বেছে নেবেন কোন শহর, জয়পুর না উদয়পুর?
দুই শহর দুই রকম : জয়পুর রাজস্থানের রাজধানী, পুরোদস্তুর ব্যস্ত এক শহর। এই শহরের অলিতেগলিতে ইতিহাসের ছোঁয়া। আছে দর্শনীয় নানা স্থান। অমের প্যালেস, হাওয়া মহল, যন্তর মন্তর, জলমহল-সহ অনেক কিছু। দোকানপাট থেকে সিনেমা হল— সর্বত্রই ব্যস্ততা, ভিড়ভাট্টা। ঝাঁ চকচকে রেস্তরাঁ, বিলাসবহুল হোটেল। ঐতিহাসিক শহরের সঙ্গে পরতে পরতে মিশে আধুনিকতা। কোনও দুর্গের মাথা থেকে শহরটি দেখায় গোলাপি, তাই একে 'গোলাপি শহর'-ও বলা হয়।
আধুনিক হয়ে উঠেছে উদয়পুরও। তবে এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে রোম্যান্টিকতা। এই শহর হ্রদের। মহারানা উদয় সিংহ মোগলদের হাত থেকে তাঁর পুরনো রাজধানী বাঁচাতে আরাবল্লি পাহাড়ের গায়ে দুর্গ তৈরি করেন। ইতিহাস বলছে, মেবারের রানা দ্বিতীয় উদয় সিংহ ১৫৫৯ সালে উদয়পুর তৈরি করেন। হ্রদ, প্রাসাদ এবং মন্দির— তিন নিয়ে একেবারে অন্য রকম এক আবহ এই শহরের।
জয়পুরের আমের দুর্গ। ছবি: সংগৃহীত।
স্থাপত্য এবং আকর্ষণ
হ্রদের শহর উদয়পুর। ছবি: সংগৃহীত।
জয়পুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানটি বোধ হয় আমের ফোর্ট। পাহাড়ের উপর দুর্গ। এক এক মহলের সৌন্দর্য এক এক রকম। হাওয়া মহল, সিটি প্যালেস, যন্তর-মন্তর এখানকার বিভিন্ন স্থাপত্যে রাজপুত এবং মোগল আমলের নকশা চোখে পড়ে। দুই স্থাপত্যের সৌন্দর্যই এখানে উপভোগ্য।
উদয়পুরের সৌন্দর্যের একটি বড় অংশই হল হ্রদ। পিছোলা লেক, জগ মন্দির, লেক প্যালেস— সবই যেন জলের উপরে। সবুজ আরাবল্লি পাহাড় যেন বেড় দিয়ে রেখেছে হ্রদগুলিকে। আর সেই জলাশয় ঘিরেই তৈরি হয়েছে প্রাসাদ, মহল, মন্দির।
সংস্কৃতি
জয়পুর শহর। ছবি: সংগৃহীত।
জয়পুর সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে যথেষ্ট উচ্চমানের। এখানে আন্তর্জাতিক স্তরের সাহিত্য উৎসব হয়। রাজস্থানের বিবিধ সংস্কৃতি রয়েছে। পুতুলনাচ থেকে, বাঁধনি কাপড়ের কাজ, রাজস্থানি লোকসঙ্গীত, এখানকার খাবার— সবেতেই রয়েছে নিজস্বতা। এখানকার চোখি ধানি সাংস্কৃতিক গ্রামে এই সবের সমন্বয় দেখতে পান পর্যটকেরা। এই শহর সংস্কৃতির। এই শহরে রয়েছে প্রাণময়তা, উচ্ছ্বলতা, গতি।
উদয়পুর শহর উপভোগ করা যায় হ্রদ ভ্রমণে। এখানে খুব সুন্দর কয়েকটি ঘাট রয়েছে। পড়ন্ত বিকেলে হ্রদের ধারে বাঁধানো ঘাটে বসে সিটি প্যালেস, লেক প্যালেস দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা। রয়েছে উন্মুক্ত পরিবেশে সাজানো-গোছানো ক্যাফে। ঘাট ধরে হাঁটাও যায়। ক্যামেরাবন্দি করার জন্য এখান থেকে বহু জায়গাই মিলবে। আর গোধূলিবেলায় পিছোলা হ্রদে নৌকাবিহারের অভিজ্ঞতা আজীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকতে পারে। পিছোলা হ্রদের একপাশে গঙ্গোরী ঘাটের কাছেই রয়েছে বাগোর কি হাভেলি। এটি এখন একটি সংগ্রহশালা। অষ্টাদশ শতকে এটি নির্মিত হয়েছিল। এই শহর একটু অন্য ভাবে উপভোগের জন্য। এই শহর প্রিয় মানুষটিকে কিছুটা সময় একান্তে কাটানোর।
খাবার
উদয়পুরের দুর্গ। ছবি:সংগৃহীত।
রাজস্থানি খাবার দুই শহরেই মেলে। রাজস্থানে পুরনো দোকানের পাশাপাশি ঝাঁ-চকচকে রেস্তরাঁর আধিক্য। রাজস্থানি থালি, লাল মাস অনেক কিছুই চেখে দেখার মতো এই শহরে।
উদয়পুরে রয়েছে ভাসমান রেস্তরাঁ। একাধিক জায়গায় হ্রদের ধারে উন্মুক্ত পরিবেশে নৈশভোজের আয়োজন করে বেশ কিছু রেস্তরাঁ। পড়ন্ত বিকেলে পাহাড়ের বুকে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে বা আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠা শহর প্রত্যক্ষ করে সঙ্গীর সঙ্গে মোমের আলোয় আহার করার আলাদা তৃপ্তি থাকে। হেরিটেজ হোটেলে রাজকীয় খানা উপভোগ করা যায় এখানেও। তবে ছোট ছোট দোকানে ডাল-বাটি-চুরমার স্বাদও অনবদ্য।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
জয়পুরে আন্তর্জাতির বিমানবন্দর আছে। রেলপথ, সড়কপথেও এই শহর দেশের অন্য প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত। উদয়পুর তুলনামূলক ছোট শহর। বিমানবন্দর থাকলেও উড়ানের সংখ্যা কম। রেলপথ আছে। সড়কপথেও যোগাযোগ ভাল। দুই শহরেই থাকার বিভিন্ন মানের হোটেল আছে।