পাহাড় উপভোগ করার জন্য কোন মাধ্যম সেরা? ছবি: সংগৃহীত।
হিমালয় ভ্রমণ মানে কেবল পাহাড়ি শহরে পৌঁছে যাওয়া নয়, বরং যাত্রাটাই আসল। আর এই যাত্রা প্রায়শই দু’ধাপে হয়। যেমন, কলকাতা থেকে দার্জিলিং যেতে হলে, প্রথমে ট্রেন, তার পর সড়ক। কলকাতা থেকে পশ্চিম হিমালয়ের কোনও কোনও শৈলশহরে যেতে হলে প্রথমে ট্রেন, তার পর গাড়ি ধরতে হয়। তবে দিল্লিতে থাকলে এই সমস্ত পাহাড় ভ্রমণ সুবিধাজনক। অনেকেই ট্রেনের বদলে গোটা রাস্তাই গাড়িতে ঘুরতে পছন্দ করেন। তাতে কিছু সুবিধা তো আছে বটেই। আবার অসুবিধাও আছে। তাই হিমালয়ের অপরূপ দৃশ্য সম্পূর্ণ উপভোগ করতে হলে কোন মাধ্যম ভাল, তা আগে জেনে নিতে হবে। ট্রেনে করে অর্ধেক রাস্তা যাবেন, না কি সড়কপথেই সমগ্র সফর বেছে নেবেন? কোনটির কী সুবিধা এবং অসুবিধা, তুলনা করে নিলে যে কোনও পরিস্থিতি সামলে নেওয়া যায়।
ট্রেনে ভ্রমণের সুবিধা
কম ক্লান্তিকর: হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারবেন ট্রেনে। আরাম করে স্লিপার ক্লাস বা এসিতে ঘুমিয়েও নিতে পারবেন। তুলনামূলক ভাবে তা আরামদায়ক। অন্য কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই। আর যদি পাহাড়ের উপর দিয়ে যাওয়া কোনও ট্রেনে চড়েন, তা হলেও জানলা দিয়ে দৃশ্য দেখতে দেখতে যেতে পারবেন। গাড়িতে একটানা বসে থাকার কষ্ট থাকবে না।
পাহাড়ের উপর দিয়ে যাওয়া কোনও ট্রেনে চড়লে জানলা দিয়ে দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। ছবি: সংগৃহীত।
সাশ্রয়ী: বিমানে বা গাড়িতে সফরে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, স্লিপার বা এসিতে ক্লাসে যাত্রা করলে তার থেকে অনেক কম খরচে ঘুরে আসতে পারবেন।
অভিজ্ঞতা: ট্রেনের একটানা দুলুনি অনেকের কাছেই উপভোগ্য। তা ছাড়া পাহাড়ি রেলপথের অভিজ্ঞতা অন্তত এক বার হওয়া উচিত। ছোট ছোট স্টেশন দেখার সুযোগও মিলবে। পাহাড়ের উপরে বানানো রেললাইন, সেই আঁকাবাঁকা পথে যেতে যেতে মনে হতে পারে, কোনও অচেনা জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটছে।
ট্রেনে ভ্রমণের অসুবিধা
ট্রেনে করে সব জায়গায় পৌঁছতে পারবেন না। পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছে আবার সেই গাড়ির বন্দোবস্তই করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকায় ট্রেন যায় না। তা ছাড়া রাস্তায় কোথাও নেমে ধানক্ষেতের ধারে বসে চা খেতে ইচ্ছে করলে, তা অসম্ভব। পাহাড়ি ট্রেনেও সেই একই সমস্যা।
সড়কপথে ভ্রমণের উপকারিতা
যাত্রায় বিরতি: অবাধে গাড়ি থামিয়ে যে কোনও সুন্দর জায়গার ছবি তুলতে পারবেন। কোথাও বসে চা-জলখাবার খেতে ইচ্ছে করলে তাতেও বাধা নেই। কারণ গাড়ি তো আপনি বুক করে নিয়েছেন। ইচ্ছে হলে অচেনা রাস্তাও ধরে নেওয়া যেতে পারে। যদিও শেয়ার গাড়িতে গেলে সে সুবিধা সব সময়ে মেলে না।
গাড়িতে চেপে বেড়াতে যাওয়া মানেই হইহুল্লোড়, খাওয়াদাওয়া, পছন্দমতো গান চালানো। ছবি: সংগৃহীত।
প্রত্যন্ত বা দুর্গম জায়গায় ভ্রমণ: হিমালয়ের দুর্গম, প্রত্যন্ত বা স্বল্পচেনা জায়গায় যেতে হলে গাড়িই একমাত্র উপায়। যেমন ধরা যাক, স্পিতি ভ্যালি, লাদাখ, তাওয়াং ইত্যাদি জায়গায় যেতে হলে গাড়ি ছাড়া গতি নেই। সড়কই একমাত্র রাস্তা।
অভিজ্ঞতা: গাড়িতে চেপে বেড়াতে যাওয়া মানেই হইহুল্লোড়, খাওয়াদাওয়া, পছন্দমতো গান চালানো। এই সমস্ত মুহূর্ত স্মৃতিতে থেকে যাবে। ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরও মধুর।
সড়কপথে ভ্রমণের অসুবিধা
পাহাড়ি রাস্তায় আঁকাবাঁকা পথে অনেকেরই বমি পাওয়ার সমস্যা থাকে। তা ছাড়া, বৃষ্টি হলে ধসের ঝুঁকি থেকে যায়। কখনও বা গাড়ির জ্যামও থাকে রাস্তায়। তা ছাড়া গোটা গাড়ি বুক করে যাওয়ার জন্য বেশ ভাল অঙ্কের টাকাও খসবে।
ট্রেন-সড়ক, না কি কেবলই সড়ক— কোনটি উপযুক্ত?
ট্রেন-সড়ক না কি পুরোটাই সড়ক, এই সিদ্ধান্ত নিজের পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভর করে। আরামদায়ক, নিরিবিলি, রোমাঞ্চকর সফরের চাহিদা থাকলে খানিক দূর পৌঁছে যাওয়ার জন্য ট্রেনই সেরা। আবার অচেনা পাহাড়ি গ্রাম বা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে চাইলে, অথবা নিজের মতো পরিকল্পনা করতে হলে কেবল সড়কপথেই ভ্রমণ করা উচিত। অনেক পর্যটকই এক শহর থেকে হিমালয়ের কোনও এক শহরে পৌঁছে যান ট্রেনে চেপে। তার পর বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছোনোর জন্য গাড়ি বুক করে নেন। ফলে দুই-ই মাধ্যমই প্রয়োজনীয়।