পড়ুয়া ছাড়াই ‘চলছে’ স্কুল

বরাহনগরের কুঠিঘাটের ঠিক বিপরীতে প্রায় এক বিঘা জমির উপরে রয়ে‌ছে ১৫২ বছরের পুরনো এই স্কুল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ২০০৬-এ শেষ শোনা গিয়েছিল পড়ুয়াদের আওয়াজ।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০১:২৭
Share:

খাঁ খাঁ: পড়ুয়া-শূন্য ভিক্টোরিয়া হাইস্কুল। বরাহনগরে। নিজস্ব চিত্র

খাতায়কলমে আজও বেঁচে আছে। কিন্তু প্রকারান্তরে সে মৃত!

Advertisement

গঙ্গার পাড় ঘেঁষে সেই জমিদারি আদলের বাড়িটিতে এখন পায়রা চরে। বট, অশ্বত্থের শাখা-প্রশাখায় ঘেরা বিশাল সেই বাড়ির পরিচয়, ভিক্টোরিয়া হাই স্কুল!

বরাহনগরের কুঠিঘাটের ঠিক বিপরীতে প্রায় এক বিঘা জমির উপরে রয়ে‌ছে ১৫২ বছরের পুরনো এই স্কুল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ২০০৬-এ শেষ শোনা গিয়েছিল পড়ুয়াদের আওয়াজ। এখনও রোজ স্কুল খোলা হয় নির্দিষ্ট সময়ে। ছুটিও হয় বিকেল সাড়ে চারটেয়। নিয়মিত আসেন শিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মীরা। যদিও সব ক্লাসঘরেই মরচে পরা তালা। কারণ স্কুলের রেজিস্টারে পড়ুয়া সংখ্যা শূন্য। তিনতলা এই স্কুলবাড়িতে ৩৪টি ক্লাস ঘর, পরীক্ষাগার, গ্রন্থাগার, মেহগনি গাছে ঘেরা খেলার মাঠ— সব থাকলেও দীর্ঘ দিন অব্যবহারে ও সংস্কারের অভাবে সবটাই খণ্ডহরে পরিণত হয়েছে।

Advertisement

রাজ্য জুড়ে যেখানে সব বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার, সেখানে বরাহনগরের এত পুরনো একটি স্কুল দিনের পর দিন কী ভাবে এমন অবস্থায় পড়ে থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন স্থানীয়দের। বরাহনগরের বিধায়ক তথা বিধানসভার উপমুখ্যসচেতক তাপস রায় বলেন, ‘‘দেড়শো বছরের পুরনো স্কুলটি বাঁচানোর জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে ব্যক্তিগত ভাবে এবং বিধানসভার প্রশ্নোত্তরেও বলেছি। আমরা মিলিত ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি স্কুলের হারানো গৌরব ফিরিয়েআনতে।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুলটি সম্পর্কে জানি। আমরা স্কুলটিকে বাঁচিয়ে তুলতে চেষ্টা করছি। নিশ্চয় ভাল কিছু হবে।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৮৬৬ সালে কয়েক জন বাসিন্দা মিলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করেছিলেন ‘বরাহনগর হিন্দু স্কুল’। পরে রানী ভিক্টোরিয়ার নামে নামকরণ হয় স্কুলটির। এমনকী ওই স্কুল তৈরির জন্য দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বহু বিখ্যাত মানুষ আর্থিক সহযোগিতাও করেছিলেন। ১৯৯০ পর্যন্ত এই স্কুলে প্রাথমিক বিভাগও চলেছে। এছাড়া পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা বিভাগের পঠনপাঠন হত। পুরনো নথি থেকে জানা যায়, কংগ্রেস আমলের শিক্ষামন্ত্রী রায় হরেন্দ্রনাথ চৌধুরী, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পণ্ডিত বিনোদানন্দ ঝাঁ-সহ বহু সাহিত্যিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, পুলিশকর্তা এই স্কুলের ছাত্র।

কয়েক বছর আগেও ছিলেন কয়েক জন শিক্ষিক-শিক্ষিকা। তাঁরা অবসর নেওয়ায় এখন স্কুলে রয়েছেন এক জন মাত্র শিক্ষিকা, এক জন গ্রন্থাগারিক, এক জন ক্লার্ক। রোজ সকাল ১১টায় চলে আসেন তাঁরা স্কুলে। নিজেরাই টেবিলের ধুলো ঝেড়ে বসে থাকেন কয়েক ঘণ্টা। কিছু ঘরে ভাঙা বেঞ্চ, টেবিল স্তূপ হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের টেবিলে থাকা টেলিফোনে জমেছে ধুলোর আস্তরণ।

শতাব্দী প্রাচীন এই বা়ড়িতে কবে সে সবের আবার ব্যবহার হবে, কবে শোনা যাবে পড়ুয়াদের কলতান, সেই আশায় দিন গুনছেন স্থানীয়েরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন