Brick Kiln

ইটভাটায় বিক্রি ভিন্‌ রাজ্যের ১৭ শ্রমিককে

তাঁদের বন্দি করে রেখে সারা দিন ধরে কাজ করানো হচ্ছে। অথচ বিনিময়ে মজুরি মিলছে না। ঠিক মতো খেতেও দেওয়া হচ্ছে না।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভিন্‌ রাজ্য থেকে এনে বিক্রি করে দেওয়া এবং বন্দি করে রেখে কাজ করানোর অভিযোগ। কোনও অজ পাড়াগাঁ নয়। কলকাতা সংলগ্ন বারুইপুরের একটি ইটভাটায় গত চার মাস ধরে এমন ভাবেই ছত্তীসগঢ়ের ১৭ জন শ্রমিককে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে! অভিযোগ পাওয়ার পরে অবশ্য বারুইপুর থানা তড়িঘড়ি চার শ্রমিক ও তাঁদের সঙ্গে থাকা দু’টি শিশুকে উদ্ধার করে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করেছে। বাকিরাও কোনও ভাবে ইটভাটা থেকে পালিয়ে অন্যত্র লুকিয়ে ছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁরাও ছত্তীসগঢ় পৌঁছে গিয়েছেন। তবে এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন পুলিশ বা প্রশাসন কেন এমন কারবারের বিন্দুবিসর্গও জানতে পারল না?

Advertisement

অভিযোগ, শুধু আটকে রেখে কাজ করানোই নয়। দিনভর খাটুনির পরেও ১৭ জনকে ঠিক মতো খেতে দেওয়া হত না। মিলত না ইটভাটার বাইরে যাওয়ার অনুমতি। উল্টে বাড়ি যেতে চাওয়ায় জুটেছিল বেধড়ক মার। যার জেরে এক শ্রমিকের পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। আরও অভিযোগ, ওই শ্রমিকদের সঙ্গে থাকা ছ’মাস এবং চার বছরের দু’টি শিশুকেও ঠিক মতো খেতে দিত না ইটভাটার মালিক।

এমনই একাধিক অভিযোগ-সমেত গত ৪ জানুয়ারি ছত্তীসগঢ়ের কোরবা জেলার কালেক্টরেটের অফিস থেকে একটি চিঠি এসে পৌঁছয় বারুইপুরের জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে। কানহাইয়া গান্ধর্ব নামে এক ব্যক্তি তাতে অভিযোগ করেন, তাঁর ভাই সন্তোষ এবং আরও ১৬ জনকে পশ্চিমবঙ্গের একটি ইটভাটায় কাজ দেওয়ার নাম করে এনে বারুইপুরের হিমচিতে একটি ইটভাটার মালিকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

তাঁদের বন্দি করে রেখে সারা দিন ধরে কাজ করানো হচ্ছে। অথচ বিনিময়ে মজুরি মিলছে না। ঠিক মতো খেতেও দেওয়া হচ্ছে না। সন্তোষ তাঁর দাদাকে আরও জানিয়েছিলেন, বাড়ি যাওয়ার কথা বলায় মালিকের লোকজন মারধর করত তাঁদের। বিষয়টি জানতে পেরে কোরবার জেলাশাসকের দফতরে অভিযোগ দায়ের করেন কানহাইয়া। তার ভিত্তিতেই কোরবার কালেক্টরেট অফিসার বারুইপুর পুলিশ সুপারের অফিসে ৪ জানুয়ারি ওই চিঠি পাঠান।

অভিযোগ পেয়ে ২৯ জানুয়ারি দুই শিশু-সহ এক মহিলা ও তিন শ্রমিককে উদ্ধার করে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করে বারুইপুর থানা। গ্রেফতার করা হয় ইটভাটার মালিক সালিম মোল্লা, ম্যানেজার বইগিড হোসেন মণ্ডল এবং এক দালাল সন্তোষ দাসকে। তাদের বিরুদ্ধে পাচার, জোর করে আটকে রাখা, মারধর এবং ‘বন্ডেড লেবার অ্যাবলিশন’ আইনে মামলা রুজু হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কয়েক মাস ধরে ইটভাটায় ১৭ জনকে বন্দি করে রেখে কাজ করানো হচ্ছে, প্রশাসনের কাছে সেই খবর পৌঁছল না? তা হলে কি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় থাকা ইটভাটাগুলিতে শ্রম দফতর এবং জেলা প্রশাসনের নজরদারি নেই? এ ব্যাপারে উত্তর ২৪ পরগনার ‌এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানাচ্ছে, রাজারহাট ও নারায়ণপুরে তাদের মতো বেশ কিছু সংস্থা কাজ করায় ব্লক অফিসার বা পঞ্চায়েতের লোকজনের যাতায়াত লেগে থাকে। তবে শ্রম দফতরের নজরদারি রয়েছে বলে তাদের জানা নেই। এই বক্তব্যের সত্যতা ধরা পড়েছে শ্রম দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি গোপা লামহার কথায়। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি জানি না।’’ তবে বারুইপুরের জেলা পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান বলেন, ‘‘জেলায় প্রচুর ইটভাটা রয়েছে। সেখানে বহু শ্রমিক কাজ করেন। আগে এমন অভিযোগ কখনও আসেনি। এ বার অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েক জন শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে অভিযুক্তদের। ওই শ্রমিকদের যে এখানে নিয়ে এসেছিল, সে-ও ছত্তীসগঢ়ের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।’’ ধৃতদের সোমবার বারুইপুর আদালতে তোলা হলে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন