Amit Shah

বাংলায় সরকার গড়তে না পারলে বাকি সব মূল্যহীন: মমতাকে উৎখাতের ডাক শাহের

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ দিন মূলত তিনটি অভিযোগ তুলে তোপ দেগেছেন অমিত শাহ। এবং তার ভিত্তিতেই তৃণমূল সরকারের অবসান ঘটানোর ডাক দিয়েছেন।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ১৯:০১
Share:

মঞ্চে তখন অমিত শাহ। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

দেশের ১৯ রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে দলটা। শাসন কাঠামোর ৭০ শতাংশ দখলে। সেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীতে দাঁড়িয়ে বলে গেলেন, ‘‘১৯টা রাজ্যের সরকারের কোনও মূল্য নেই, যত ক্ষণ না পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সরকার তৈরি হচ্ছে।’’ মেয়ো রোডে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা (বিজেওয়াইএম) আয়োজিত যুব স্বাভিমান সমাবেশ থেকে অমিত শাহের জোরালো আহ্বান— পশ্চিমবঙ্গ থেকে উৎখাত করতেই হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে।

Advertisement

স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই শনিবারও স্লোগান তুলে ভাষণ শুরু করেছেন অমিত শাহ। ‘‘এত জোরে বলুন, যাতে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত, বাংলা থেকে গুজরাত পর্যন্ত শোনা যায়’’— সমাবেশের উদ্দেশে এমনই আহ্বান রেখে স্লোগান তুলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। আর উত্তরোত্তর গলা চড়িয়ে জবাব দিয়েছে সমবেত জনতা। তার পরেই বিজেপি সভাপতি বলেছেন, ‘‘এই র‌্যালিই বুঝিয়ে দিচ্ছে, বাংলায় পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ দিন মূলত তিনটি অভিযোগ তুলে তোপ দেগেছেন অমিত শাহ। এবং তার ভিত্তিতেই তৃণমূল সরকারের অবসান ঘটানোর ডাক দিয়েছেন।

Advertisement

অমিতের সভায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। ছবি: পিটিআই।

অমিত শাহের প্রথম অভিযোগ, দুর্নীতি। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুর্নীতিতে ডুবতে শুরু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, অভিযোগ অমিত শাহের। বিজেপি সভাপতির কথায়, ‘‘নারদ কেলেঙ্কারি, সারদা কেলেঙ্কারি, রোজভ্যালি কেলেঙ্কারি, ভাইপোর দুর্নীতি, সিন্ডিকেট দুর্নীতি— দুর্নীতির সিরিজ চলছে।’’ ‘কয়লা মাফিয়া, বন্দর মাফিয়া, গরু মাফিয়া’দের নিয়েই চলছে তৃণমূল— তোপ অমিত শাহের।

আরও পড়ুন
মুখ্যমন্ত্রীর সভায় অমিল মানপত্র

অমিত শাহের দ্বিতীয় অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়া। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে-পরে মিলিয়ে কত জন বিজেপি কর্মীকে খুন হতে হয়েছে, এ দিনের সভায় তার হিসেব তুলে ধরে তোপ দাগেন অমিত শাহ। রাজ্যে তৃণমূল দুষ্কৃতী-রাজ কায়েম করেছে— অমিত শাহের সারকথা অনেকটা এ রকমই। তিনি বলেন, ‘‘যে বাংলায় আগে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা যেত, রামকৃষ্ণের ভজন শোনা যেত, চৈতন্য মহাপ্রভুর কীর্তন শোনা যেত, সেই বাংলায় এখন শুধু বোমার আওয়াজ।’’ অমিত শাহের কথায়, ‘‘রোজ খবর পাওয়া যায়, এখানে পিস্তলের কারখানা, সেখানে বোমা তৈরি হচ্ছে। রাজ্যে সব কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর একের পর এক বোমা-পিস্তলের কারখানা খোলা হচ্ছে।’’

শহিদ ক্ষুদিরাম প্রতিকৃতিকে মাল্যদান অমিত শাহের। ছবি: পিটিআই।

অমিত শাহের তৃতীয় অভিযোগ, তোষণের রাজনীতি। এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে ধরে রাখতে নিরন্তর তোষণ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মোদীর প্রধান সেনাপতির অভিযোগ। এই প্রসঙ্গ তুলেই মেরুকরণ উস্কে দেওয়ার পথে হেঁটেছেন অমিত শাহ। মহরমের কারণে দুর্গার বিসর্জন পিছিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনেছেন। বলেছেন, ‘‘বাংলায় দুর্গাপুজো হবে না, সরস্বতী পুজো হবে না, শুধু বাংলাদেশি অনুপ্রেবশকারীদের ঢোকানো হবে।’’ বিজেপি সভাপতির মন্তব্য: ‘‘আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, বিজেপির সরকার বানান, বিজয়া দশমীতে দুর্গামায়ের বিসর্জন কেউ আটকাতে পারবে না।’’ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে বিজেপি সভাপতির হুঁশিয়ারি, ‘‘মমতাজি, আগামী বার আর যেন দুর্গাপুজোর বিসর্জন আটকানোর হিম্মত করবেন না।’’ দুর্গাপুজোর বিসর্জন আটকে দেওয়া হলে বিজেপি ময়দানে নামবে বলে অমিত শাহ শাসিয়ে গিয়েছেন।

আরও পড়ুন
চমকে দেওয়া উত্থান সত্ত্বেও উত্তর-পূর্বে কয়েক বছরেই উজাড় জোড়াফুলের বাগান

অমিত শাহের আগে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভানেত্রী পুনম মহাজনও একই বিষয় নিয়ে আক্রমণ করেন মমতাকে। রাজ্য বিজেপির হেভিওয়েটরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নিশানায় রেখেছিলেন দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং তোষণ ইস্যুতেই। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের তোপ— দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়ালেও তাদের কারও গায়ে হাত দেয় না পুলিশ। আর মুকুল রায়ের দাবি— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে, তাঁর পরিবারের ঘোষিত সম্পত্তির পরিমাণ এখন ১২০০ কোটি টাকা! মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করে মুকুল রায়ের মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেনে রেখে দাও, ২২টা নয়, ২০১৯ সালে এ রাজ্যে তার চেয়েও বেশি আসন বিজেপি পাবে। আর ২০২১ নয়। তার আগেই পশ্চিমবঙ্গে তোমার সরকারটা ভাঙবে।’’

মঞ্চে অমিত শাহের সঙ্গে দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং পুনম মহাজন। ছবি: পিটিআই।

এ দিন দিলীপ-মুকুলদের ভাষণেরই আরও বিশদ রূপ ছিল অমিত শাহের বক্তৃতা। তবে শাহের সুরটা ছিল দিলীপ-মুকুলদের তুলনায় অনেক চড়া। ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২১-এর বিধানসভা, আসন্ন দু’টি নির্বাচনেই বাংলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিজেপির জন্য, অমিত শাহের ভাষণে এ দিন তা খুব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এক যুব কার্যকর্তা বলছিলেন, দেশের ১৯টি রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায়, দেশের ৭০ শতাংশ বিজেপির শাসনে। কিন্তু তৃণমূল বলছে, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় নেই। আমি তাই আজ আমাদের সমস্ত কার্যকর্তাকে বলছি, যত ক্ষণ না বাংলায় বিজেপির সরকার তৈরি হচ্ছে, তত ক্ষণ ওই ১৯টা সরকারের আর কোনও মূল্য নেই।’’ এত বড় চ্যালেঞ্জের সামনে অমিত শাহ আগে কখনও নিজের দলকে দাঁড় করিয়েছেন কি না, তা নিয়ে বিজেপি নেতাদেরও সংশয় রয়েছে। রাজ্য বিজেপি বলছে, অমিত শাহের এই মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বাংলা জয়টাকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিজেপি।

শনিবারের মেয়ো রোড। ছবি: পিটিআই।

তবে অমিত শাহ এ দিন বার বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্য বিজেপির কোনও নেতাকে সামনে রেখে নয়, নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখেই এ রাজ্যে ভোটে যাবে বিজেপি। সমাবেশের উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, ‘‘বাংলায় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির সরকার গড়ুন।’’ কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল, তিন দলকেই সুযোগ দিয়েছেন, এ বার নরেন্দ্র মোদীকে সুযোগ দিন— এ ভাবেই এ দিন জনতার উদ্দেশে আহ্বান জানান বিজেপি সভাপতি। কর্মীদের উদ্দেশে বার বার বার্তা দিয়েছেন, উৎখাত করতেই হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন