21 July

21 July TMC Rally: শ্রাবণ-দিনে আগাম শারদীয়ার জনতরঙ্গ

সকাল থেকে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল জনজোয়ারে। এগোতে না-পেরে দাঁড়িয়ে পড়ে বাস, ছোট লরি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২২ ০৬:৩৮
Share:

n একুশের সমাবেশে বৃহস্পতিবার ধর্মতলা চত্বরে জনসমাগম। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

রোদ ছিল। সঙ্গত করছিল ঝমাঝম বৃষ্টিও। তারই মধ্যে কারও কারও মনে হল, মহানগরে মহাষ্টমী বা মহানবমীর রাতের জনস্রোত আগাম এসে পড়েছে বৃহস্পতিবারের সকালে! আবার রীতিমতো তর্ক জুড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে কেউ কেউ দাবি করলেন, ‘‘এত ভিড় পুজোতেও দেখা যায় না।’’

Advertisement

ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য তখন শেষ পর্যায়ে। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের দিক থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তুলে একটি দলকে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতে দেখা গেল। শহিদ মঞ্চের পিছনের পথে গিজগিজ করছে কালো মাথা। অনেকই বললেন, ‘‘দেখেছ! এখনও লোক আসছে! এটা দিদির টান।’’ নেতা-মুরুব্বি গোছের কেউ কেউ ভিড়ের কারণ বিশ্লেষণে মেতে উঠলেন। কারও কারও মন্তব্য, “এটা ‘দুয়ারে সরকার’-এর ম্যাজিক!” কারও সহাস্য উক্তি, “সামনে কিন্তু পঞ্চায়েত ভোট। এই উপস্থিতি সেই টিকিট পাওয়ার চাবিকাঠি নয়তো!”

এ দিন সকাল থেকে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল জনজোয়ারে। এগোতে না-পেরে দাঁড়িয়ে পড়ে বাস, ছোট লরি। তা থেকে নেমে মিছিল করে ধর্মতলায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের কেউ কেউ পৌঁছতে পেরেছেন, বেশির ভাগই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে আটকে গিয়েছেন, সামনের ভিড়ের দেওয়ালে। অগত্যা রাস্তার ধারের জায়ান্ট স্ক্রিনে ‘দিদি’-কে দেখে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছেন অসংখ্য কর্মী-সমর্থক। বড় পর্দায় দলনেত্রী। সেটিকে রেখে নিজস্বী তুলছিলেন মাথাভাঙার সুবীর চৌধুরী। হেসে বললেন, ‘‘দিদির সঙ্গে ছবি তুলে নিলাম।’’ সভা শুরুর মুখে উল্টো পথেও হাঁটলেন অনেকে। কলকাতা ঘুরে দেখার তাগিদ তাঁদের বেশি।

Advertisement

পাতালপথেও জনতার ঢল। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কালীঘাটের দিক থেকে ধর্মতলায় এসে থামল দক্ষিণেশ্বরমুখী মেট্রো। হুড়মুড়িয়ে নামলেন এক দল যুবক। তাঁদের গন্তব্য শহিদ মঞ্চ। ধর্মতলা মেট্রো স্টেশনের সাবওয়ে এ দিন কার্যত ছোটখাটো জনসভাস্থলের চেহারা নিয়েছিল। ভিড়ের চাপে বন্ধ রাখতে হয়ে চলমান সিঁড়ি। মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট যাত্রীর সংখ্যা ৩,৫২,৮৪৪। তার মধ্যে এসপ্লানেড থেকে যাত্রী হয়েছে ৪০,২৬৯। দমদমে সেটা ৪৪,৭৭৫, চাঁদনি চকে ১৫,৩৮৬।

সভা চলাকালীন কিছু ক্ষণের জন্য বৃষ্টি নামলেও দমানো যায়নি জনতাকে। মাথায় জোড়া ফুলের পতাকা বেঁধে কিংবা এক ছাতার তলায় ঠাসাঠাসি করে চার জনে ঢুকেই তাকিয়ে থেকেছেন দূরের মঞ্চের দিকে। সেখান থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ছাতা সরিয়েই কথা বলি? আপনাদেরও কিন্তু ছাতা সরাতে হবে।’’ নেতার সে-কথা শুনেই হইহই রব উঠল। দেখা গেল, ছাতার বদলে দ্রুত ফিরে এসেছে কালো মাথা। যা ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। তবে অনেকেই মাথা বাঁচাতে আশ্রয় নেন এসপ্লানেড মেট্রোর পাতালপথে। সেই ভিড়কে কাটিয়ে যাতায়াত করতে বেগ পেতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। যাঁরা সভায় এসেছেন, তাঁরাও বেরোতে পারেননি কিছু ক্ষণ। স্কুলশিক্ষক পিনাকী দে মেট্রো থেকে নেমে আটকে গেলেন বেরোনোর রাস্তায়। ভিড় ঠেলে এগোতে না-পেরে বলেন, ‘‘বৃষ্টি পড়ছে তো কী হয়েছে! সভায় এসেছি, এক বার তো বাইরে যেতেই হবে। নইলে আর এলাম কেন!’’

ধর্মতলায় পৌঁছনোর বিভিন্ন রাস্তাতেই এ দিন মাটিতে বসে ভাত, ডিমের ঝোল খেতে দেখা গিয়েছে কর্মী-সমর্থকদের। কেউ কেউ ভিড় করেন ডেকার্স লেন এবং চাঁদনি চকের আশপাশের রেস্তরাঁতেও। বিরিয়ানি বা চিকেন রেজালা মুখে তোলার ফাঁকেই তাঁদের মন্তব্য, ‘‘পেটে ছুঁচো ডন মারছে। তাই খাওয়াও হচ্ছে, দিদির বক্তব্যও শোনা হচ্ছে মাইকে।’’

পেটপুজোর পাশাপাশি তৃণমূলের শহিদ দিবসকে কেন্দ্র করে ধর্মতলা চত্বরের ইতিউতি বসে গিয়েছিল হরেক পসরা। কোথাও বিকোচ্ছে ৩০ টাকার রেনকোট, কোথাও চুলের রাবার ব্যান্ড, ২০০ টাকায় জুতো।

শহর জুড়ে এই জনসমুদ্রের ধাক্কায় ভোগান্তি হয়েছে নিত্যযাত্রীদের। বাস, ট্যাক্সি মেলেনি হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশনে। যে-ক’টি বাস উল্টোডাঙা মোড় দিয়ে যাচ্ছিল, সেগুলিতে বাদুড়ঝোলা অবস্থা। সেক্টর ফাইভের কয়েক জন অফিসযাত্রী জানান, আধ ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরে দু’টি বাস আসে। কিন্তু এত ভিড় যে, তাঁরা উঠতে পারেননি।

রাজ্যে এখন অতিমারির চতুর্থ ঢেউ চলছে। কিন্তু এ দিন সেই ঢেউকে উপেক্ষা করেই মেতেছিল জনতা। সভার শেষে যখন ঘোষণা হচ্ছিল ‘এ বার জায়গাটা ফাঁকা করে দিন। আপনারা ধীরে ধীরে চলে যান’, তখনও মঞ্চকে পিছনে রেখে নিজস্বী তুলতে দেখা গেল অনেককেই। তাঁদের কথায়, ‘‘মঞ্চের সামনেই ছিলাম— পাড়ায় গিয়ে দেখাতে হবে তো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন