অগ্নিদগ্ধ ষোলো বছরের বধূ

বুধবার ঘটনাস্থল গাইঘাটার শেরগড় এলাকা। জখম মাম্পি বিশ্বাসের শরীরের বেশির ভাগই পুড়ে গিয়েছে। তাকে পাঠানো হয়েছে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার করতে করছিল মেয়েটি। শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশী যুবক। ঝড়ের বেগে মেয়েটি বেরিয়ে আসে বেড়ার ঘরের বাইরে। তার সারা গা তখন জ্বলছে। প্রতিবেশী যুবককে জড়িয়ে ধরেছিল মেয়েটি। অগ্নিদদ্ধ হয়েছেন তিনিও। দু’জনকেই নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।

Advertisement

বুধবার ঘটনাস্থল গাইঘাটার শেরগড় এলাকা। জখম মাম্পি বিশ্বাসের শরীরের বেশির ভাগই পুড়ে গিয়েছে। তাকে পাঠানো হয়েছে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে। প্রতিবেশী দিবাকর বিশ্বাস বারাসত জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে গিয়ে পুলিশ মাম্পির বয়ান রেকর্ড করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই স্থানীয় চণ্ডীগঢ়ের বছর কুড়ির যুবক ভাস্কর মজুমদারের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। মাস পাঁচেক আগে পালিয়ে বিয়ে করে দু’জন।

Advertisement

কিছু দিন ওই দম্পতি কলকাতায় ছিলেন। একটা সময়ে ফিরে আসেন এলাকায়। মাম্পির বাবা মনু বিশ্বাস চাষবাস করে সংসার চালান। তাঁর অভিযোগ, মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করলেও বিয়ের পর থেকে পণের জন্য চাপ আসতে শুরু করে। শ্বশুরবাড়িতে শুরু হয় নির্যাতন। মনুবাবু বলেন, ‘‘মেয়ের শাশুড়ি উঠতে বসতে গঞ্জনা দিত। বলত। তোমার বাবাকে তো কোনও খরচপাতি করতে হল না। এ বার অন্তত টাকা, গয়না কিছু নিয়ে এসো।’’

অশান্তি দিন দিন বাড়ছিল। অভিযোগ, মাম্পির সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে ভাস্করের সঙ্গেও তারা সম্পর্ক ছিন্ন করবে বলে জানিয়েছিল ছেলেটির পরিবার।

দিন কয়েক আগে নাবালিকা মেয়ে ও জামাইকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন মনু। ভাস্কর সেলাই কারখানায় কাজ করে। মঙ্গলবার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল। তারে ফিরে আসে। তারপরে বুধবার সকালে ওই কাণ্ড।

পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার সময়ে মাম্পির বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। মাম্পির আর্তনাদ শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশী দিবাকর বিশ্বাস। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মাম্পি ঘর থেকে বেরিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরায় তিনি কোনও রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছু দূরের ধান খেতের জমা জলে ঝাঁপ দেন। জ্ঞান হারান। পাড়া-পড়শি এসে বালতি করে জল এনে মাম্পির গায়ের আগুন নেভান। মাম্পিও জ্ঞান হারায়। ঘটনার পর থেকে উধাও ভাস্কর। মাম্পির মা দুর্গাদেবী সে সময়ে মুদির দোকানে গিয়েছিলেন। বললেন, ‘‘দোকান থেকে ফেরার পথে দেখি জামাই সাইকেল চালিয়ে চলে গেল। তখনও কিছু বুঝতে পারিনি। বাড়ির কাছে এসে মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই।’’ মনুবাবুর অভিযোগ, জামাই-ই মেয়ের গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ হয়নি। তবে পুলিশ ইতিমধ্যেই মাম্পির শাশুড়িকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন