পুজোর খরচ সামলে সন্তানের জামা জোটে না

ওরা আর পাঁচটা শিশুর মতো বাবা মায়ের কাছে আবদার করে জানতে চায় না, এ বারে পুজোয় কী দেবে বাবা! কারণ ওই শিশুরা জানে, পাড়ার পুজোর চাঁদার টাকাটাও বাবার দিনমজুর খাটা টাকা থেকে সঞ্চয় করা।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৬
Share:

মগ্ন ডোমপা়ড়ার শিল্পী।

ওরা আর পাঁচটা শিশুর মতো বাবা মায়ের কাছে আবদার করে জানতে চায় না, এ বারে পুজোয় কী দেবে বাবা! কারণ ওই শিশুরা জানে, পাড়ার পুজোর চাঁদার টাকাটাও বাবার দিনমজুর খাটা টাকা থেকে সঞ্চয় করা। তাই নতুন জামাকাপড় কেনার বিলাসিতা দেখানোর অবস্থা নেই পরিবারে। উস্তির নৈনানপুর ডোমপাড়ার ছেলেমেয়েদের এটাই অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।

Advertisement

তবু কেন এত কষ্ট করে পুজো করে ডোমপাড়া?

এর পিছনে আছে এক নির্মম ইতিহাস। বছর দ’শেক আগে পর্যন্ত আশেপাশের পাড়ার পুজোতে যোগ দেওয়ার অধিকার ছিল না ডোম পাড়ার লোকজনের। প্রতিমা দেখতে গেলে দুর্ব্যবহার করা হতো বলে অভিযোগ। চোখভরা জল নিয়ে অনেকে ফিরত বাড়িতে।

Advertisement

এটা মেনে নিতে পারেননি ডোমপাড়ার লোকজন। তাঁরা ঠিক করেন, নিজেরাই পুজো করবেন। ন’বছর আগে, সেই শুরু।

পাড়ায় মেরেকেটে ৪০-৪৫ ঘর বসবাস করে। পেশা বলতে দিনমজুরি, বাঁশের ঝুড়ি তৈরি। এখানে তৈরির ঝুড়ির অবশ্য কদর আছে।

দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, আদ্যাপীঠে যায় ডোমপাড়ার তৈরি ঝুড়ি। দেবদেবীর প্রসাদের ঝুড়ি বুনে দিন কাটালেও দেবীর আশীর্বাদ যেন অধরাই থেকে গিয়েছে হতদরিদ্র মানুষগুলোর কাছে। এখনও গ্রামের রাস্তাঘাট বেহাল। পানীয় জলের নলকূপ নেই। স্কুলের নলকূপ থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয় বাসিন্দাদের।

তবে কিছু না পাওয়ার মধ্যেও প্রাপ্তিও আছে কিছু। উস্তি থানা এলাকায় সর্বজনীন পুজোর প্রতিযোগিতায় তাঁরাই গত কয়েক বছর ধরে সেরার স্বীকৃতি পেয়ে আসছেন।

এ বার বাঁশের বাখারি দিয়ে প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতার মন্দিরের আদলের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। মাস তিনেক ধরে দিন-রাত এক করে নিজেরাই মণ্ডপ সাজিয়ে তোলার কাজ করেছেন সকলে। পাড়ার বৌরাও হাত লাগিয়েছেন তাতে। প্রায় লক্ষাধিক টাকা বাজেটের পুজো এ বারও ভিড় টানবে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের।

এত টাকা চাঁদা তুলে আসে?

প্রশ্ন শুনে জয়দেব সেনাপতি, পরেশ সাঁতরাদের সোজাসাপ্টা জবাব, ‘‘বাইরের কারও থেকে একটা টাকাও চাঁদা তুলি না আমরা জনা কুড়ি সমবয়সী রয়েছি এলাকায়। সারা বছর ধরে সামান্য রোজগারের টাকা থেকে সঞ্চয় করি। আমরা যতই দুঃস্থ হই না কেন, পুজোর জন্য সকলেই চাঁদার পয়সা উজাড় করে দেয়। তাই তো মায়ের আরাধনার করতে পারি।’’

তবে আক্ষেপ একটাই, বাড়ির কচিকাঁচাদের নতুন জামাকাপড় দিতে পারেন না প্রায় কেউই। একজন বললেন, ‘‘প্রতিমা দেখতে অন্য পাড়া থেকে যখন চেলেমেয়েরা নতুন জামা পরে আসে, আমাদের সন্তানরা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সেটা দেখতে বড্ড কষ্ট হয়।’’

কিন্তু তবু অন্যের গঞ্জনা সহ্য না করে নিজেদের পুজোর গর্বই আলাদা— বলতে বলতে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে ডোমপাড়ার যুবকের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement