নারী পাচার সন্দেহে মারধরের অভিযোগ

হাসপাতালের শৌচাগারে রোগীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার

স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর তিনেক আগে আনোয়ারাকে তাঁর মামি সাজিদা পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে দিল্লিতে একটি হোটেলে বিক্রি করে দিয়ে আসেন।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০২:৫০
Share:

জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উৎপল। নিজস্ব চিত্র

নারী পাচারকারী সন্দেহে এক যুবককে মারধরের অভিযোগ উঠল তারই নিকট আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ক্যানিংয়ের আঁধলা গ্রামে। বৃহস্পতিবার সকালে উৎপল বিশ্বাস নামে ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের শৌচাগার থেকে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫ জুলাই উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থানা এলাকার গোপালনগর দাসপাড়া থেকে স্ত্রী ও দুই বছরের পুত্রকে নিয়ে ক্যানিংয়ের আঁধলা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন উৎপল। বুধবার রাতে উৎপলের মামাশ্বশুর মজিদ শেখ, মামি সাজিদা মণ্ডল ও তাদের অনুগামীরা মেয়ে পাচারের অপবাদ দিয়ে হঠাৎ বেধড়ক মারধর করেন উৎপলকে। স্বামীকে বাঁচাতে এসে অভিযুক্তদের মার খান উৎপলের স্ত্রী আনোয়ারাও। দু’জনকেই স্থানীয় মানুষ রাতে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আনোয়ারাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও উৎপলকে ভর্তি রাখা হয় হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে। সেখানেই বৃহস্পতিবার সকালে বাথরুমের মধ্যে জানালার সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। আনোয়ারা বলেন, “অপমান সহ্য করতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন উনি।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর তিনেক আগে আনোয়ারাকে তাঁর মামি সাজিদা পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে দিল্লিতে একটি হোটেলে বিক্রি করে দিয়ে আসেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর উৎপলের হাত ধরেই তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন। আনোয়ারাকে উদ্ধার করে তাঁকে হিন্দু মতে বিয়ে করেন উৎপল। তাঁদের একটি বছর দু’য়েকের পুত্র সন্তানও রয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টি সাজিদা ও তার পরিবার ভাল চোখে দেখেননি বলে অভিযোগ আনোয়ারার। নানা অছিলায় আনোয়ারার পরিবারের সঙ্গে গণ্ডগোল করার পরিকল্পনা করত সাজিদা বলে অভিযোগ।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, দিন দু’য়েক আগে সাজিদার পরিবারের এক নাবালিকা অন্যত্র চলে যায়। সেই ঘটনায় উৎপলকে সন্দেহ করে বুধবার রাতে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে সাজিদার পরিবার। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছে ক্যানিং থানার পুলিশ।

ক্যানিংয়ের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দেবীদয়াল কুণ্ডু বলেন, ‘‘ঠিক কী কারণে আত্মহত্যা করলেন ওই যুবক সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।’’

এ দিকে হাসপাতালের বাথরুমে রোগীর আত্মহত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে। হাসপাতালে রোগীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন রোগীর আত্মীয়রা। রোগীর আত্মীয় সবিতা সর্দার, রবি মণ্ডলরা বলেন, ‘‘এই হাসপাতালে রোগীদের কোনও নিরাপত্তা নেই। না হলে কী ভাবে একজন রোগী বাথরুমের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন?” যদিও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি হাসপাতাল সুপার অর্ঘ্য চৌধুরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন