Social Media

সমাজ মাধ্যম ব্যবহারের সময় সতর্কতা জরুরি, পাঠ পুলিশের 

কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা প্রায় সকলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১৬
Share:

নহাটায় কলেজে বনগাঁ সাইবার ক্রাইম থানার সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান। —নিজস্ব চিত্র।

প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে ফেসবুকে এক যুবক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। সুদর্শন যুবকের ছবি দেখে তরুণী রিকোয়েস্ট গ্রহণ করেন। কথাবার্তা শুরু হয়। ফোন নম্বর আদান-প্রদান হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই যুবকের সঙ্গে তরুণীর রীতিমতো প্রেম দানা বাঁধে। যুবকটি তরুণীর কিছু খোলামেলা ছবির স্ক্রিনশট রেখে দেয়। এরপরেই যুবকের আসল চেহারা সামনে আসে। ওই ছবি দেখিয়ে তরুণীকে ব্ল্যাকমেল শুরু করে সে। হাজার হাজার টাকা দাবি করে। তরুণী সাইবার ক্রাইম থানার দ্বারস্থ হন। পুলিশ পরে যুবককে গ্রেফতারও করে।

Advertisement

এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এমন দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়ে অনেকে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞেরা।

কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা প্রায় সকলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে। কলেজ পড়ুয়াদের সাইবার প্রতারণা নিয়ে সচেতন করতে এগিয়ে এল বনগাঁ সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ এবং গোপালনগরের নহাটা যোগেন্দ্রনাথ স্মৃতি কলেজ কর্তৃপক্ষ। বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার কলেজে আয়োজন করা হয়েছিল সাইবার ক্রাইম সচেতনতা কর্মশালা। সেখানে প্রায় দু’শো জন তরুণ-তরুণী ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ পাপুন বিশ্বাস। প্রাক্তন পড়ুয়াদের সংগঠনের পক্ষে প্রদীপ সরকার বলেন, "এখনকার সময়ে ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যকেই প্রায় অনলাইন মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। সাইবার অপরাধের খপ্পরে পড়ছেন কলেজ পড়ুয়ারা। তাই এ বিষয়ে সচেতন করতে আমাদের এই পদক্ষেপ।"

Advertisement

বনগাঁ সাইবার ক্রাইম থানার আইসি সুদীপ্ত দে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের সাইবার অপরাধ সম্পর্কে বোঝান। সুদীপ্ত জানান, কর্মশালা উপস্থিত এক জনও পাওয়া যায়নি, যিনি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন না। সুদীপ্ত বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে পড়ুয়াদের সচেতন করেন। জানান, ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার দেখে কখনওই অচেনা কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত নয়। কিছু দিন আগে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তিনি। জানান, গাইঘাটা থানা এলাকার বাসিন্দা বছর বাইশের এক তরুণীকে এক যুবক ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। ওই যুবকের প্রোফাইলে লেখা ছিল, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। তরুণীর সঙ্গে আলাপ জমে ওঠে। ভিডিও কলে খোলামেলা ছবি আদান-প্রদান হয়। পরে ওই ব্যক্তি ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল শুরু করে। তদন্তে নেমে সাইবার ক্রাইম থানায় পুলিশ জানতে পারে, ওই যুবক বাংলাদেশের এক বিখ্যাত স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের ছবি ও প্রোফাইল ব্যবহার করেছিল। পুলিশ যুবককে গ্রেফতার করে। জানা যায়, সে একটি হোটেলে রান্নার কাজ করে।

অচেনা নম্বর থেকে আসা ভিডিয়ো কল রিসিভ করা উচিত নয় বলে জানান সুদীপ্ত। তিনি বলেন, "এক ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপে অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ আসে। হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইলের ডিপিতে এক সুন্দরী মহিলার ছবি ছিল। এরপরে তাঁদের বন্ধুত্ব হয়। ভিডিয়ো কল এলে ওই ব্যক্তি দেখেন, এক মহিলা পোশাক বদল করছেন।’’ ওই ব্যক্তি মহিলাকে দেখছেন, এমন দৃশ্য সেই মহিলা স্ক্রিন শট তুলে রাখে। পরে একটি নম্বর থেকে ‘ডিএসপি সাইবার ক্রাইম, দিল্লি’ বলে পরিচয় দিয়ে ফোন আসে। বলা হয়, আপনি মহিলার নগ্ন দৃশ্য দেখছেন, এই ছবি ইউটিউবে আপলোড হচ্ছে। ৬০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। আপনি ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। একটি নম্বর দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তি সেই নম্বরে ফোন করলে অন্য প্রান্ত থেকে বলা হয়, ইউটিউব থেকে বলছি। নগ্ন ছবি দেখার দৃশ্য আপলোড হচ্ছে। তা ডিলিট করতে হলে ২০ হাজার টাকা পাঠান। ওই ব্যক্তি টাকা পাঠান এবং প্রতারিত হন।" সুদীপ্ত বলেন, "রাজস্থানের ভরতপুর জেলায় এমন একটি চক্র সক্রিয়। সকলকে সচেতন থাকতে হবে।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন