‘ইচ্ছে মতো খেয়ে এসো’, কার্ডের ফটোকপি বিলি!

তাঁর হয়ে নিমন্ত্রণপত্রের রঙিন ফটোকপি অঢেল বিলিয়ে বেরিয়েছেন এক যুবক। এমনকী, ফেসবুক-হোয়াটস অ্যাপেও সকলকে ডেকে ডেকে বলছিলেন, ইচ্ছে মতো পাত পেড়ে খেয়ে এসো।

Advertisement

নির্মল বসু 

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১০
Share:

বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস। তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটা নেওয়া।

দরাজ মনে নিমন্ত্রণ।

Advertisement

যাঁর বাড়ির অনুষ্ঠান, তিনি অবশ্য ভেবেচিন্তেই তালিকা অনুযায়ী কার্ড ছাপিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, তাঁর হয়ে নিমন্ত্রণপত্রের রঙিন ফটোকপি অঢেল বিলিয়ে বেরিয়েছেন এক যুবক। এমনকী, ফেসবুক-হোয়াটস অ্যাপেও সকলকে ডেকে ডেকে বলছিলেন, ইচ্ছে মতো পাত পেড়ে খেয়ে এসো।

নিমন্ত্রণ কোনও আনন্দ অনুষ্ঠানেরও নয়। বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাসের মা লীলাদেবী মারা গিয়েছেন সম্প্রতি। কাল, ১৫ নভেম্বর নিয়মভঙ্গ। সেই উপলক্ষে হাজার তিনেক মানুষকে নিমন্ত্রণ করবেন বলে ঠিক করেছেন বিধায়ক।

Advertisement

কিন্তু ট্যাটরার বাসিন্দা উজ্জ্বল বিশ্বাস অযাচিত ভাবে বিধায়কের হয়ে নিমন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে যাকে-তাকে বলে বেরিয়েছেন, সবান্ধবে চলে আসতে বিধায়কের বাড়ির অনুষ্ঠানে। জল এতটাই ঘোলা হয়েছে, বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন দীপেন্দু। জালিয়াতির অভিযোগে শেষমেশ গ্রেফতার করা হয়েছে উজ্জ্বলকে।

পুলিশ জানতে পেরেছে, এর আগে দীপেন্দুর নামে টাকা তোলার অভিযোগ ছিল উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে। তবে লিখিত অভিযোগ হয়নি সে সময়ে।

উজ্জ্বলের দাবি, টাকা তোলার অভিযোগ মিথ্যা। এমনকী, বিধায়কের মায়ের কাজে কাউকে সে নিমন্ত্রণ করেছে বলেও মানতে চায়নি।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ অবশ্য মনে করছে, অসাধু উদ্দেশ্যেই এই কাজ করেছে উজ্জ্বল। তিন হাজার নিমন্ত্রিতের কাজে যদি সংখ্যাটা বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তা হলে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। খাবারে টান ধরতে কত আর দেরি লাগবে! দীপেন্দু নিজেও এমনটাই মনে করছেন।

কিন্তু বিধায়কের বাড়ির কাজে গোল বাধিয়ে উজ্জ্বলের কী লাভ, তা অবশ্য এখনও বুঝে উঠতে পারেননি তদন্তকারী অফিসারেরা। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘সীমান্তবর্তী এলাকায় কত কিছু জাল হতে দেখলাম।

কখনও জন্মের শংসাপত্র, কখনও আধার কার্ড-ভোটার কার্ড। জাল টাকাও তো কম দেখলাম না চাকরি জীবনে। কিন্তু তা বলে নিমন্ত্রণপত্রও জাল!’’ গোটা ঘটনায় উজ্জ্বল একাই জড়িত, নাকি আরও কোনও ‘বড় মাথা’ কাজ করছে, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

দীপেন্দুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ নভেম্বর নিয়মভঙ্গের কাজে অতিথিদের বসিরহাটের নৈহাটিতে বিদ্যুৎ সঙ্ঘের মাঠে আসার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের কাছে ১০টি করে কার্ড দিয়েছিলেন দীপেন্দু। ওই কার্ড বিলি করতে বলা হয়েছিল।

বিধায়কের কথায়, ‘‘কয়েক দিন আগে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জানান, ওই নিমন্ত্রণপত্র রঙিন ফটোকপি করে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ এবং বসিরহাটের একাংশের মানুষকে বিলি করা হচ্ছে।’’

স্থানীয় কিছু মানুষজনকে খোঁজ-খবর করতে বলেছিলেন দীপেন্দু। খবর আসে, জাল নিমন্ত্রণপত্র বানিয়েছিল উজ্জ্বল। তাকে ধরে এনে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

থানা-পুলিশ তো হল। গ্রেফতারও হল এক জন। কিন্তু ভুয়ো নিমন্ত্রণপত্র পেয়ে হিসেবের বাইরে অতিথি হাজির হলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন