সাবির আলি মণ্ডল।
দু’টি মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে। একটি ধর্ষণ, অন্যটি পকসো বা শিশু যৌন নিগ্রহ। প্রথম মামলায় জামিন পেয়েছে গোপালনগরের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সাবির আলি মণ্ডল। অন্যটিতে জামিন না পেয়েও কী করে জেল হেফাজত থেকে বেরোল, তাই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বৃহস্পতিবার বনগাঁ আদালতে দেখা যায় সাবিরকে। এরপরেই বনগাঁ উপসংশোধনাগারের জেলরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হন আদালতের আইনজীবী ও ল’ক্লার্করা। প্রতিবাদ মিছিল করেন তাঁরা। সংশোধনাগারের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। জেলরকে অপসারণের দাবিও ওঠে।
বনগাঁ আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী তথা বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর দাসের অভিযোগ, ‘‘২৮ অগস্ট বিচারক সাবিরকে ধর্ষণের মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন। পকসো মামলায় জামিন পায়নি অভিযুক্ত। কিন্তু উপসংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ অর্থের বিনিময়ে তাকে বেআইনি ভাবে ছেড়ে দিয়েছে।’’ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক তথা উপসংশোধনাগারের সুপারিন্টেন্ডেন্ট কাকলি মুখোপাধ্যায়। যাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ, সেই জেলর নীলকণ্ঠ গঙ্গোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘যা হয়েছে আইন মোতাবেক। এর বেশি কিছু বলব না।’’
বিক্ষোভ: আদালত চত্বরে আইনজীবীরা।
পুলিশ ও আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সাবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে গোপালনগর এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা ও তাঁর নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। ২২ জুলাই পুলিশ সাবিরকে গ্রেফতার করে পৃথক দু’টি মামলা রুজু করে। মায়ের ক্ষেত্রে ধর্ষণ ও নাবালিকার ক্ষেত্রে পকসো আইনে মামলা হয়।
প্রথম কয়েক দিন সাবির ছিল পুলিশি হেফাজতে। পরে তাকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বনগাঁ আদালতের বিচারক। এত দিন সে ছিল বনগাঁ উপসংশোধনাগারে।
বৃহস্পতিবার সকালে ছিল সাবিরের আদালতে হাজিরার দিন। কিন্তু জেল থেকে পুলিশের গাড়িতে আসার পরিবর্তে সাবির নিজেই ঢোকে আদালতে। কয়েকজন আইনজীবী তাকে চিনতে পারেন। তখনই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। আইনজীবীদের তরফে সমীর বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি বিচারককে জানানো হয়েছে। বিচারক জেলরের কাছে লিখিত রিপোর্ট চেয়েছেন।’’
সাবিরের বক্তব্য, ‘‘জেল থেকে বুধবার ছাড়া পেয়েছি। কাউকে কোনও টাকাপয়সা দিতে হয়নি সে জন্য। মামলার তারিখ ছিল, তাই আদালতে এসেছিলাম।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নাবালিকা মেয়েটি আগে সাবিরের কাছে পড়ত। অভিযোগ, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ফোন করে সাবির তাকে অশ্লীল প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি মেয়েটি। একদিন রাত ৮টা নাগাদ সাবির তাদের বাড়িতে হাজির হয়। মেয়েটি একাই ছিল বাড়িতে। অভিযোগ, তাকে সাবির ধর্ষণ করে। পরে মেয়েটির বাবা ঘটনার কথা জানতে পেরে ওই শিক্ষকের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁকে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কয়েক বছর আগে মেয়েটির মাকেও ওই শিক্ষক বাড়িতে এসে ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ। মহিলার দাবি, সেই ছবি সাবির মোবাইলে তুলে রেখেছিল। সে সব ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আরও কয়েকবার তাকে ধর্ষণ করেছিল।
ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক