Death. Gosaba

উদ্ধার হল অজয়ের দেহ, ত্রাণের লাইনে দাঁড়ালেন বাবা

রবিবার বেলা ১০টা নাগাদ কচুখালি গ্রামের মনসা মেলার চর থেকে উদ্ধার হয় দেহ। গোসাবা থানার পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

গোসাবা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০৫:৩৬
Share:

মিলল অজয়ের মৃতদেহ।

নদীতে তলিয়ে যাওয়া অজয়ের দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। শনিবার দুপুরে পাশের দ্বীপ বিজয়নগর থেকে ত্রাণ আনতে সাঁতরে নদী পার হওয়ার সময়ে দুর্গাদোয়ানি নদীতে তলিয়ে যান গোসাবার কাটাখালি গ্রামের যুবক অজয় বারিক। ঘটনার পর থেকেই দুর্গাদোয়ানি নদীতে তল্লাশি অভিযান শুরু করে গোসাবা থানার পুলিশ। গোসাবা ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি শুরু হয় আশপাশের নদীগুলিতেও।

Advertisement

রবিবার বেলা ১০টা নাগাদ কচুখালি গ্রামের মনসা মেলার চর থেকে উদ্ধার হয় দেহ। গোসাবা থানার পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

ছেলের মৃত্যুর পরে এ দিনই খাবারের খোঁজে ত্রাণের লাইনে দাঁড়ান অজয়ের বাবা সুধীর বারিক। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে বৌমা, নাতি, নাতনি রয়েছে। ওদের জন্যই আসা। কাল থেকে কারও খাওয়া হয়নি। খাবার না নিয়ে গেলে ওরা কি খাবে?’’

Advertisement

দীর্ঘ লকডাউনের জেরে রাজ্যের নানা জায়গার মতোই সমস্যায় পড়েন গোসাবার কাটাখালি গ্রামের মানুষ। তার উপরে আসে ঘূর্ণিঝড় আমপান। ঝড়ের দাপটে বাড়িঘর ভেঙেছে বহু মানুষের। প্রায় দেড় মাস কেটে গেলেও এখনও নিজেদের বাড়িঘর ঠিক করে উঠতে পারেননি অনেকে। গ্রামে পঞ্চাশটির বেশি আদিবাসী পরিবারের বাস। দু’বেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমসিম খাচ্ছেন তাঁরা। যদি কেউ ত্রাণ নিয়ে আসেন, এই আশায় তাই প্রতিদিন সকাল হলেই নদীর পাড়ে হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন ওঁরা।

শনিবার সকাল থেকে অজয়-সহ গ্রামের অন্যেরা বসেছিলেন নদীর পাড়ে। কিন্তু বেলা গড়িয়ে গেলেও ওই দিন কাটাখালি গ্রামে কোনও ত্রাণের নৌকো থামেনি। তবে উল্টো দিকের বিরাজনগর গ্রামে ত্রাণ দিতে আসে একটি বেসরকারি সংস্থা। স্থানীয় মানুষজন এবং পরিবার-পরিজন পুলিশকে জানিয়েছেন, অজয় ঝাঁপ দেন নদীতে। ভেবেছিলেন, নদী সাঁতরে ত্রাণ সংগ্রহ করে এনে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেবেন। সঙ্গীরা বারণ করলেও শোনেননি। নদীর স্রোতে তলিয়ে যান তিনি।

নদীর পাড়ের ছবিটা বদলায়নি এ দিনও। ত্রাণের আশায় অনেকেই ভিড় করেছিলেন। একটি সংস্থার তরফে ত্রাণও দেওয়া হচ্ছিল এ দিন। সেই ত্রাণ নিতেই এসেছিলেন অজয়ের বাবা সুধীর। এলাকার বাসিন্দা মঙ্গল সর্দার, সাধনা সর্দাররা বলেন, ‘‘সরকারি যা সাহায্য পেয়েছি, তাতে দু’চার দিন চলেছে। এখনও আমাদের কাজকর্ম ঠিক মতো হচ্ছে না। তাই খাবারের আশায় প্রতিদিন নদীর পাড়ে বসে থাকি। আমাদের চোখের সামনেই অজয় ওপার থেকে ত্রাণ আনার জন্য নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল। অনেক বারণ করলেও শোনেনি। তলিয়ে গেল নদীতে।’’ গ্রামের আরও এক বাসিন্দা নিরাপদ বারিক বলেন, "আমাদের গ্রামের বহু মানুষের ঘর ভেঙেছে। কিন্তু সরকারি সাহায্য হাতে গোনা দু’একজন পেয়েছে মাত্র।’’ অজয়ের বাড়িঘরও ভেঙেছিল ঝড়ে। ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে জানিয়েছে পরিবারটি।

গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, ‘‘সরকারি যা সাহায্য এসেছে, সেগুলি সমস্ত দুর্গতদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও ওই গ্রামে ত্রাণ দিয়ে সাহায্য করেছে। আর ক্ষতিপূরণের টাকা ব্যাঙ্কে ঢুকতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মানুষ পেয়েছেন। বাকি যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরাও ক্ষতিপূরণ পাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন