পানিহাটি পৌরসভা।—ফাইল চিত্র।
পানিহাটির পুর প্রধান হিসেবে তাঁর মেয়াদ ফুরিয়েছে গত ২০ অক্টোবর। অথচ ডিসেম্বরে জমা পড়া মিউটেশন ফি মকুব করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ‘নিজের ক্ষমতাবলে’। আরও গোল বেধেছে অন্যত্র। ওই আবেদনে তিনি সই করেছেন অক্টোবরের তারিখ দিয়ে! পুর প্রধান স্বপন ঘোষের সেই ‘নোট’-এর ভিত্তিতে দু’জনের মিউটেশন ফি মকুবও করে দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। সেই বিষয়টি সামনে আসার পরে শোরগোল শুরু হয়েছে। পানিহাটির প্রাক্তন কাউন্সিলর সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভার প্রশাসক, ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসকের কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মহকুমাশাসক আবুল কালাম আজাদ ইসলাম বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পুর প্রধান বলছেন, ‘‘কোন তারিখের আবেদন, কত তারিখে সই করা, এ সব নিয়ে আমি কিছু বলব না। যিনি অভিযোগ করেছেন, আর যাঁর আবেদন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।’’ এর আগেও সন্ময়বাবু মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরনোর পরেও পুর প্রধান পুরনো অফিসে নিয়মিত বসছেন। বিভিন্ন ফাইলে, বিশেষ করে বিল্ডিং প্ল্যান পুরনো তারিখে ‘পাস’ করে দিচ্ছেন। সপ্তাহ তিনেক আগে করা সেই অভিযোগের তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে প্রাক্তন পুর প্রধানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ফের এল। এ বার অভিযোগের সঙ্গে প্রমাণপত্রও দিয়েছেন ওই প্রাক্তন কাউন্সিলর।
অভিযোগে বলা হয়েছে, দুই মহিলা ১৫ ডিসেম্বর পুরসভায় জমির মিউটেশনের জন্য আবেদন করেন। ১৮ তারিখে পুরসভা ওই দুই মহিলাকে মিউটেশনের জন্য ৮৯০০ টাকা জমা দেওয়ার জন্য নোটিস পাঠায়। পুরসভা সূত্রের খবর, সেই নোটিসের উপরে স্বপনবাবু ২৯০০ টাকা মকুব করার নির্দেশ দিয়ে ‘নোট’ দেন। দুই মহিলা সেই নোটিসের কপি পুরসভায় জমা দেন। পরে ২৯০০ টাকা ছাড় দিয়ে ওই দু’জনের জমি মিউটেশন করে দেয় পুরসভা। বিষয়টি সম্প্রতি জানাজানি হয়। তার পরেই পুরসভায় হইচই শুরু হয়। এমন বেআইনি নির্দেশ কেন পুর আধিকারিকেরা মেনে নিলেন, তা নিয়ে পুরসভার মধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়। স্বপনবাবুর অক্টোবরের তারিখ দেওয়া ডিসেম্বর মাসের নির্দেশ, ওই পুর আধিকারিক কী ভাবে কার্যকর করেছেন, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হন পুর কর্মীদের একাংশ।
বিষয়টি জানার পরেই সন্ময়বাবু বুধবার মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘‘এর আগেও মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এ বার নথি দিয়ে অভিযোগ করেছি। এ বারও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে প্রশাসনের উঁচুতলার দ্বারস্থ হতে হবে। তা-ও কাজ না হলে আদালতে যাব।’’এক পুর আধিকারিক বলেন, প্রাক্তন কাউন্সিলর হিসেবে মিউটেশন ফি কমানোর প্রস্তাব করতে পারেন যে কেউ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুরনো তারিখ দেওয়া মানেই তো নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করা! পুর কর্মীদের একাংশ বলছেন, হয়তো ভয়ে বা অন্য কারণে আধিকারিক স্বপনবাবুর নির্দেশ কার্যকর করেছেন।