Durga Puja 2020

পুজোর অনুদানেও কাটমানির অভিযোগ

কোনও পোস্টারে লেখা ছিল, “দুর্গাপুজোর ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা কাটমানি কেন নেওয়া হল টিএমসি জবাব দাও।” আবার কোনও পোস্টারে লেখা ছিল, “কাটমানির নায়ক টিএমসি নেতা সুনীল সিং মুর্দাবাদ।” 

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০ ০২:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

অন্তত পক্ষে দশ বছরের পুরনো দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে রাজ্য সরকার ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেবে বলে ঘোষণা করেছিল। তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয় রাজ্য রাজনীতিতে। টাকা খরচ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে নির্দেশিকা জানিয়ে দেয় হাইকোর্ট। সেই নির্দেশিকা কোথায় কতটা মানা হয়েছে, প্রশ্ন উঠছে সে সব নিয়েও। তারই মধ্যে নতুন এক অভিযোগ সামনে এল হাসনাবাদে। দশ বছরের পুরনো নয়, এমন কিছু ক্লাবকে সরকারি অনুদানের টাকা পাইয়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য ৫ হাজার টাকা করে কাটমানি নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এই নিয়ে এলাকায় পোস্টার পড়েছে।

Advertisement

অভিযোগ অস্বীকারও করছেন না হিঙ্গলগঞ্জের পাটলি খাঁপুর পঞ্চায়েতের সদস্য সুনীল সিংহ। তবে হঠাৎ হইচই শুরু হওয়ার পিছনে দলের গোষ্ঠীকোন্দলকেই দায়ী করছেন। বেগতিক বুঝে এখন বলছেন, টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির পরিষদীয় দলনেতা তথা ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি আনন্দ সরকার বলেন, ‘‘এরাই দলের ক্ষতি করছে। এ ভাবে কাটমানি নেওয়ার কাজ খুবই লজ্জাজনক। এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতেই হবে।’’ মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা দেখেন, ঘুনি চত্বরে একটি ক্লাব ঘরের দেওয়ালে ও রাস্তার পাশের একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে পোস্টার পড়েছে। খলিসাখালি চত্বরেও পোস্টার পড়ে। কোনও পোস্টারে লেখা ছিল, “দুর্গাপুজোর ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা কাটমানি কেন নেওয়া হল টিএমসি জবাব দাও।” আবার কোনও পোস্টারে লেখা ছিল, “কাটমানির নায়ক টিএমসি নেতা সুনীল সিং মুর্দাবাদ।”

পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা স্থানীয় দু’টি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত কৃষ্ণা দাস বলেন, ‘‘পোস্টার কারা মেরেছে জানি না। তবে চৈতন্য সঙ্ঘ ও দক্ষিণ মহিষপুকুর মহিলা সমিতি এই দুই ক্লাবের সঙ্গে আমি যুক্ত। আমি শুনেছি, এই দুই ক্লাব থেকে সুনীল ৫ হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন। ৫০ হাজার টাকার চেক পেতে সাহায্য করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। তবে সমালোচনা শুরু হওয়ায় শুনলাম টাকা ফেরত দিয়েছেন।”

Advertisement

টিয়ামারি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির সভাপতি ভবেশ হাউলি বলেন, ‘‘আমাদের থেকেও সুনীল সিংহ ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন পুজোর ৫০ হাজার টাকার চেক পাইয়ে দেওয়ার জন্য। তবে পোস্টার কারা মেরেছে জানি না।” আরও একটি ক্লাবের পদাধিকারী জানান, তাঁদের থেকেও কাটমানি নেওয়া হয়েছে।

ভবেশ খোলাখুলিই জানালেন, তাঁদের ক্লাবের পুজো ১০ বছর পেরোয়নি। তবে ছোট পুজোয় সরকারি অনুদান পেলে সুবিধা হবে, এই মনে করেই টাকার জন্য আবেদন করেছিলেন। আর সাহায্য করেছিলেন সুনীল। যে ক্লাবগুলির হয়ে ‘তদ্বির’ করেছিলেন সুনীল, সেগুলি ইতিমধ্যে অনুদানের চেক পেয়ে গিয়েছে বলেও জানিয়েছে। তবে টাকা হাতে পায়নি বলে দাবি। সুনীল বলেন, “এই পঞ্চায়েত এলাকায় ৯টি দুর্গাপুজো হয়। তার মধ্যে ৪টি পুজো ১০ বছর হয়নি। তাই ঘুরপথে হলেও তাঁরা যাতে সরকারি অনুদান পান, সে জন্য সামান্য কিছু টাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছিলাম। একে ওকে তাকে ম্যানেজ করার ব্যাপার ছিল। তাই ওই সামান্য খরচ নেওয়া হয়।’’ কয়েক দিন আগে সুনীলের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই কিছু সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন। তারপরেই এই ঘটনা। সুনীলের দাবি ‘‘দলে আমার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা আমার সম্মানহানির জন্য পোস্টার মেরেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন