Anganwadi center

বাজার দর আগুন, কোপ পড়ছে খাবারে

পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্লক প্রশাসনের তরফে বাসন্তী ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মা ও শিশুদের মাথাপিছু বরাদ্দ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানালেন অনেক কর্মী।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৩ ০৯:০৯
Share:

সমস্যায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। — ফাইল চিত্র।

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির চলছে ধুঁকতে ধুঁকতে। পরিকাঠামোগত সমস্যা তো আছেই, পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জেরে কোপ পড়ছে মা-শিশুদের পাতে।

Advertisement

বাসন্তীর বেশ কিছু অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী জানালেন, গত দু’মাসে ডিমের দাম অনেকটা বেড়েছে। ফলে কাজ চালাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ডিমের দামের তুলনায় অনেক বেশি দামে বাজার থেকে ডিম কিনতে হচ্ছে। আর্থিক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্লক প্রশাসনের তরফে বাসন্তী ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মা ও শিশুদের মাথাপিছু বরাদ্দ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানালেন অনেক কর্মী। প্রসূতি মায়েদের ১১০ গ্রাম চালের খাবারের পরিবর্তে ৯২.৫ গ্রাম এবং শিশুদের ৭৫ গ্রামের পরিবর্তে ৬২.৫ গ্রাম চালের খাবার দেওয়ার নির্দেশ মেলে। বলা হয়, যে টাকা বাঁচবে তা দিয়ে ডিমের দামের ঘাটতি সামাল দেওয়া যাবে।

Advertisement

দিন কয়েক আগে বাসন্তীর ২০৪ নম্বর কেন্দ্রের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী লিপিকা নস্কর সেই নির্দেশিকা ঠিক মতো বুঝতে না পেরে পুরনো বরাদ্দ অনুযায়ী খাবার বিতরণ করায় তাঁর কেন্দ্রে খাদ্যসঙ্কট দেখা দেয়। পর পর তিন দিন সেখানে খাবার না পেয়ে গ্রামবাসীরা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। পরে অবশ্য সিডিপিওর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অভিযোগ, মাঝে মধ্যেই নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। অভিযোগ, সরকারের বরাদ্দ টাকায় সব কিছু নিয়ম মেনে চালানো যথেষ্ট সমস্যার। অন্য দিকে, সরকারি বরাদ্দ মেনে খাবার না দিলে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ক্যানিং ১ ব্লকের এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে যে দামে বাজার থেকে ডিম কিনেছি, সরকারি বরাদ্দ তার থেকে কম। এ ছাড়া আনাজ, জ্বালানি বাজার থেকে কিনতে গিয়ে বেশিরভাগ সময়ে সরকার ধার্য দামের থেকে অনেক বেশি খরচ হয়ে যায়।’’ এক কর্মী বলেন, ‘‘প্রায়ই নিজেদের পকেট থেকেই ডিম, আনাজ, জ্বালানি কাঠ কিনে সেন্টার চালাতে হয়। পরে সেই বিল জমা দিলে আমরা টাকা পাই। হাতে টাকা না থাকলে সমস্যায় পড়তে হয়।’’

কোনও কেন্দ্রে ৫০ জন পর্যন্ত উপভোক্তা থাকলে দৈনিক ১৯ টাকা মেলে জ্বালানি খরচ হিসাবে। ৫০-৭০ জন উপভোক্তার ক্ষেত্রে মেলে দৈনিক ২১ টাকা। উপভোক্তার সংখ্যা সত্তরের বেশি হলে মেলে ২৩ টাকা।

বাসন্তী ব্লকের এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বলেন, ‘‘বাইরে থেকে কমপক্ষে ৮০০ টাকা কুইন্টাল দরে কাঠ কিনতে হয়। যে টাকা জ্বালানির জন্য বরাদ্দ, তার থেকে অনেক বেশি খরচ হয় রান্না করতে। তাই বাধ্য হয়ে কখনও অর্ধেক ডিম, কখনও খিচুড়িতে আনাজ কম দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। এতে অনেক সময়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়ি আমরা।’’

ক্যানিং ১ ব্লকের সিডিপিও শ্যামল মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিটি কেন্দ্রের মা ও শিশুকে সরকারি বরাদ্দ মতো খাবার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। তবে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেলে সমস্যায় পড়তে হয় সকলকেই। সে ক্ষেত্রে বিকল্প পথ অবলম্বন করতে হয়।’’ বাসন্তীর সিডিপিও দীপঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘ডিমের দাম মাঝখানে অনেকটা বেড়ে যায়। সে সময়ে ডিমের দাম কম পেয়েছেন কর্মীরা। তাই খাবারের বরাদ্দ সামান্য কমিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এ ব্যবস্থা সাময়িক। আশা করছি, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আমাদের চেষ্টা থাকে, যাতে সমস্ত কেন্দ্রে মা-শিশুরা সঠিক পরিমাণে খাবার পান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন