কোথাও মণ্ডপ হয়েছে নেপালের বৌদ্ধমন্দির বা রাজস্থানের কৃষ্ণ মন্দিরের আদলে, কোথাও দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের অনুকরণে মণ্ডপ!
আলোতে পালকির গান আছে, গ্রাম বাংলার প্রকৃতি আছে, আছে অলিম্পিকও!
কালীপুজোয় থিমের ছোঁয়ায় ভাসছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ব্লক বাগদা। ছোটবড় মিলিয়ে বাগদায় এ বার একশোরও বেশি কালীপুজো হচ্ছে। আকর্ষণের কেন্দ্রভূমি অবশ্য হেলেঞ্চা এলাকা। প্রায় প্রতিটি পুজোর উদ্যোক্তারা নানা বাউল কবিগান-সহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। থাকছে সমাকজকল্যাণমূলক কর্মসূচিও।
কালীপুজোই এই ব্লকের মূল উৎসব। গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরেন। ব্লকের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। অনেকে অবশ্য বিদেশে বা ভিন্ রাজ্যে ঠিকা শ্রমিকের কাজের জন্য বছরভর বাইরে থাকেন। তাঁরা কালীপুজোতেই বাড়ি ফেরেন। পুজোর কেনাকাটা সবই হয় কালীপুজোর জন্যই। স্থানীয়েরা জানান, পাশেই বনগাঁ শহরের দুর্গাপুজো বিখ্যাত। অতীতে প্রতি বছরই দুর্গাপুজোর আগে বাগদার খেত জলের তলায় চলে যেত। মানুষের মুখে হাসি থাকত না। কালীপুজোর সময় গ্রামবাসীরা সেই ক্ষতি কিছুটা সামলে নিতে পারতেন। সে কারণেই এখানকার কালীপুজোকে ঘিরেই আনন্দের আয়োজন। এ বার থিমপুজেো সংখ্যায় বেড়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রাস্তায় বসছে বড় বড় আলোর তোরণ।
প্রায় প্রতিটি পুজো মণ্ডপই থিমের চমকে দর্শক টানতে জোর তৎপর। হেলেঞ্চা সবুজ সঙ্ঘ নেপালের একটি বৌদ্ধমন্দিরের আদলে টিন দিয়ে ৫৭ ফুট উঁচু মণ্ডপ তৈরি করেছে। মণ্ডপের মাথায় শিব। থাকছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির, ওষুধ বিতরণ। আলোতে দেখা যাবে দক্ষিণেশ্বর মন্দির। পুজো উপলক্ষে ‘সবুজের বার্তা’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। নবারুণ সঙ্ঘ রাজস্থানের একটি মন্দিরের আদলে প্লাস্টিক পাতা ও চট দিয়ে মণ্ডপ বানিয়েছে। মণ্ডপে শ্যামা মায়ের পাশে দেখা যাবে তারাপীঠের মা তারা এবং দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কালীমূর্তিকে।ও থাকবেন বামাক্ষ্যাপা এবং শ্রীরামকৃষ্ণও।চন্দননগর থেকে আনা হয়েছে আলো। বাগদা পল্লি উন্নয়ন তরুণ সঙ্ঘের মণ্ডপ হয়েছে স্পেনের একটি বিজনেস কমপ্লেক্সের আদলে। মণ্ডপটি ৯০ ফুট উঁচু, ১০০ ফুট চওড়া। কৃষ্ণনগরের প্রতিমা। বাগদা একাদশ ক্লাবের মণ্ডপ যেন বাউলদের আখড়া! পুজোর সময় বাউল গান শোনা যাবে। দেখা যাবে জীবন্ত মডেলের মাধ্যমে গ্রামবাংলার ঢেঁকি বোনা, তাঁত বোনা। নাটাবেড়িয়া আমরা সবাই ক্লাবের মণ্ডপ হয়েছে দক্ষিণের ভারতের একটি মন্দিরের আদলে। প্রতিমার থিম ‘সিদ্ধগঙ্গা’।
হেলেঞ্চা স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে দু’ভাবে। ভিতরটা রাজস্থানের মন্দিরের আদলে। বাইরেটা রাজস্থানের কৃষ্ণ মন্দিরের আদলে। আলোর থিম ‘কৃষ্ণ’। মাদুর কাঠি দিয়ে উত্তরপ্রদেশের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ বানিয়েছে যোগেন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘ। রামকৃষ্ণ স্মৃতি সঙ্ঘের মণ্ডপে যেন ময়ূরের আদল। তৈরি হয়েছে ফাইবাবের জাল দিয়ে। দিঘিরপাড় যুবগোষ্ঠীর মণ্ডপ পাটের। হোগলা পাতার মণ্ডপ গড়েছে আপনজন। এ ছাড়াও মণ্ডপঘাটা ১১ স্টার, শিবশক্তি স্পোর্টিং ক্লাব, বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব, বকুলতলা বালক সেবা সঙ্ঘ, নব জাগরণ সঙ্ঘ, নব মিলন সঙ্ঘ, হেলেঞ্চা যুব গোষ্ঠীর পুজোর আয়োজনও নজরকাড়া।
সব মিলিয়ে থিমের জোয়ারে ভাসছে বাগদা।