Barrackpore commissionarate

ভাঙছে ব্যারাকপুর কমিশনারেট

 ডিসি বা ডেপুটি কমিশনারদের এলাকা এতে কমছে। এক জন বাড়তি ডেপুটি কমিশনার পাচ্ছে কমিশনারেট। প্রশাসনিক যুক্তি, গত লোকসভা ভোটের পর থেকে ব্যারাকপুরের বেশ কিছু এলাকা ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩০
Share:

ফাইল চিত্র

জেলা ভাগ করে কমিশনারেট তৈরি হয়েছিল। যুক্তি ছিল, তাতে কাজের সুবিধা হবে। সেই একই যুক্তিতে এ বার ভেঙে ফেলা হল কমিশনারেটও। দুই জোনের ব্যারাকপুর কমিশনারেট এ বার থেকে তিন জোনের।

Advertisement

ডিসি বা ডেপুটি কমিশনারদের এলাকা এতে কমছে। এক জন বাড়তি ডেপুটি কমিশনার পাচ্ছে কমিশনারেট। প্রশাসনিক যুক্তি, গত লোকসভা ভোটের পর থেকে ব্যারাকপুরের বেশ কিছু এলাকা ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। সামনেই পুরভোট এবং পরে বিধানসভা ভোট রয়েছে। ভোটকে কেন্দ্র করে এলাকায় রাজনৈতিক গোলমাল আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। সে জন্যই কমিশনারেট ভেঙে ফেলা হল। সেই একই যুক্তিতে জগদ্দল থানা ভেঙে ভাটপাড়াকে পূর্ণাঙ্গ থানা তৈরি করা হয়েছে।

বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল কার্যত পুলিশ দিয়েই রাজনৈতিক প্রভাব ধরে রাখতে চাইছে। সে জন্যই তারা এলাকা ভেঙে পুলিশ দিয়ে পার্টি চালানোর বন্দোবস্ত করছে। তাদের অভিযোগ, বিজেপিকে ভয় পেয়েছে বলেই প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Advertisement

শুরুর সময় থেকে ব্যারাকপুর জোন ১ এবং জোন ২-এ বিভক্ত ছিল। জোন ১-এ ছিল বীজপুর, নৈহাটি, জগদ্দল, নোয়াপাড়া, ব্যারাকপুর এবং টিটাগড় থানা। পরে জগদ্দল থানাকে ভেঙে দু’টি থানা তৈরি করা হয়। ফলে ভাটপাড়া এখন জোন ১-এর পৃথক থানা। অন্য দিকে খড়দহ, ঘোলা, বেলঘরিয়া, বরানগর, নিমতা, দমদম ছিল জোন ২-এর অন্তর্গত। এখানে ঘোলা থানা ভেঙে নিউব্যারাকপুর থানা তৈরি হয়।

মঙ্গলবার নতুন যে নির্দেশ জারি হয়েছে, তাতে কমিশনারেটকে নর্থ, সাউথ এবং সেন্ট্রাল জোন-এ ভাঙা হয়েছে। নর্থ জোনে থাকছে বীজপুর, নৈহাটি, ভাটপাড়া, জগদ্দল এবং নোয়াপাড়া থানা। সেন্ট্রাল জোনে থাকছে ব্যারাকপুর, টিটাগড়, খড়দহ, ঘোলা এবং নিউব্যারাকপুর। সাউথ জোনে থাকছে নিমতা, বেলঘরিয়া, বরানদর এবং দমদম থানা।

নতুন নির্দেশে জোন ১-এর ডিসি অজয় ঠাকুরকে নর্থ জোনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতির পরে তিনি অবশ্য যুগ্ম নগরপাল বা জয়েন্ট সিপি পদে থাকছেন। জোন ২-এর ডিসি আনন্দ রায় সাউথ জোনের দায়িত্বে থাকছেন। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমনদীপ হচ্ছেন ডিসি সেন্ট্রাল।

প্রত্যেকটি জোনেই একাধিক এসিপি থাকছেন। এ বার তাঁদের অধীনে কার্যত দু’টি বা তিনটি থানার ভার থাকছে। কাজের সুবিধা হবে বলে প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হলেও, পুলিশ-মহল অবশ্য তেমন খুশি নয়। কারণ, তাদের এলাকা কমছে। তবে প্রকাশ্যে অফিসারেরা কিছু বলছেন না।

লোকসভা ভোটের পরে ভাটপাড়া, জগদ্দল, কাঁকিনাড়া কার্যত উপদ্রুত হয়ে পড়েছিল। অঘোষিত কার্ফু চলছিল সেখানে। টানা চার মাস বন্ধ ছিল দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গুলি-বোমার তাণ্ডবে মানুষ রাস্তায় বেরোতে ভয় পেতেন। সে সময়ে ভাটপাড়াকে নতুন থানা ঘোষণা করা হয়।

প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, ওই পর্বে পুলিশ কর্তারা সকলেই ভাটপাড়ায় পড়েছিলেন। এরই মধ্যে ব্যারাকপুর এবং টিটাগড়ে কয়েকটি বড় গোলমাল হয়। সে সময়ে পুলিশ কর্তারা অসুবিধায় পড়েন। এ বার থেকে তেমন অসুবিধা সামাল দিতে সুবিধা হবে বলে জানান কমিশনারেটের এক কর্তা।

ব্যারাকপুরের সাংসদ বিজেপির অর্জুন সিংহ বলেন, ‘‘তৃণমূল এখন সবেতেই বিজেপির ভূত দেখছে। সেই জন্যই এমন পুলিশি আয়োজন। রাজনৈতিক ভাবে আমাদের সঙ্গে পেরে উঠবে না বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতেও অবশ্য বিজেপিকে রোখা যাবে না।’’

নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অপরাধ, গোলমাল যারা করে না, তারা পুলিশকে অহেতুক ভয় পেতে যাবে কেন? যারা বাহুবলে এলাকা দখল করার চেষ্টা করে, তাদের তো অসুবিধা হবেই। মানুষ যাতে আরও ভাল পুলিশ সহায়তা পায়, সে জন্যই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন