সুন্দরপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র

কবে চালু হবে শয্যা

মুখ থুবড়ে পড়েছে বনগাঁর সুন্দরপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যে কারণে সামান্য কারণেও মানুষকে অনেক সময়ে ছুটতে হচ্ছে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

বেহাল: অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। নিজস্ব চিত্র

মুখ থুবড়ে পড়েছে বনগাঁর সুন্দরপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যে কারণে সামান্য কারণেও মানুষকে অনেক সময়ে ছুটতে হচ্ছে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। যেমন ধরা যাক, রাউতারা গ্রামের এক মহিলার কথা। দিন কয়েক আগে প্রসব বেদনা শুরু হয়েছিল। তখন সবে ভোর হয় হয়। মহিলাকে নিয়ে যেতে হয় বনগাঁ হাসপাতালে। ভাড়া গুণতে হয় পাঁচশো টাকা। অথচ তাঁর বাড়ির কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই সুন্দরপুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু সেখানে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা নেই।

Advertisement

বনগাঁ ব্লকের প্রধান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বলতে সুন্দরপুরই। বহির্বিভাগে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কিছু রোগের চিকিৎসা হয় বটে। কিন্তু এ ছাড়া তেমন কোনও পরিষেবা মেলে না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন।

বাসিন্দারা জানালেন, অতীতে বহির্বিভাগেও রোজ চিকিৎসক পাওয়া যেত না। এখন অবশ্য সপ্তাহে চিকিৎসক পাওয়া যায় ওই বিভাগে। বিনা মূল্যে ওষুধ মেলে। কিছু দিন আগে পর্যন্তও লাইগেশন হতো। ইদানীং তা-ও বন্ধ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগে অ্যাম্বুল্যান্স ছিল। সেটি পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

মিঠুন চক্রবর্তী, সৈকত চট্টোপাধ্যায়, সফিকুল মণ্ডলের মতো স্থানীয় যুবকেরা জানালেন, জরুরি কোনও পরিষেবা পাওয়া যায় না। কোনও দুর্ঘটনা হলে বা কেউ বিকেলের পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে ভরসা বলতে সেই বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল।

এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে পাটশিমুলিয়া, সুন্দরপুর, রাউতারা, গ্রাম ট্যাংরা, পেটাঙ্গি, উদয়পুর, বাঙলানি-সহ প্রায় পঞ্চাশটি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। স্থানীয় বাসিন্দা তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সর্বক্ষণের চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা এবং শয্যা চালু করে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করার দাবিতে আমরা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি দিয়েছি। প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু মেলেনি।’’ এলাকার বাসিন্দা মানুষের বক্তব্য, কিছু না হোক প্রসূতিদের স্বাভাবিক প্রসবটুকু অন্তত চালু হোক। না হলে রাতবিরেতে প্রসূতিদের নিয়ে পরিবারের লোকেদের প্রচুর দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাধীনতার কিছু দিনের মধ্যে ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হয়েছিল। প্রাথমিক অবস্থায় রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা অতীতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনেই থাকতেন। সেটাও পরে বন্ধ হয়ে যায়। পুরনো জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে ২০০৬ সালে নতুন ভবন তৈরি হয়। তখন স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, ১৫ শয্যার রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। ২৪ ঘণ্টার জন্য চিকিৎসক থাকবেন। রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদল হলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোনও পরিবর্তন ঘটেনি।

এলাকাটি বাগদা বিধানসভার মধ্যে পড়ে। বিধায়ক দুলাল বর বলেন, ‘‘শয্যা চালু করে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা চালু করার বিষয়টি আমি বিধানসভাতেও তুলেছি।’’ বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা, জরুরি পরিষেবা বা শয্যা চালু করার বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শয্যা চালু করার বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন