বসিরহাটে চলল মারধর, ভাঙচুর

মনোনয়ন নিয়ে অশান্তি অব্যাহতই

এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ মনোনয়নপত্র জমা দিতে বসিরহাট ১ ব্লকের পিঁফার রামনগরের বাসিন্দা আব্দুল গিয়েছিলেন মহকুমাশাসকের দফতরে।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২৭
Share:

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে সোমবারও অশান্তি অব্যাহত বসিরহাটে।

Advertisement

অভিযোগ, মহকুমাশাসকের দফতরের ভিতরেই বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী আব্দুল সামাদ মণ্ডলকে মারধর করে তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। প্রার্থীদের নথিপত্র নিয়েও চম্পট দেয় তারা।

এই ঘটনার কথা অবশ্য জানেন না মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি। তাঁর কথায়, ‘‘পৌনে ১১টা থেকে দফতরে কর্মীরা মনোনয়ন নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। কেন সাত সকালে ওই ব্যক্তি এসেছিলেন, তা বলতে পারব না। কেউ কাউকে দফতরের মধ্যে মারধর করেছে বলেও আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি।’’

Advertisement

এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ মনোনয়নপত্র জমা দিতে বসিরহাট ১ ব্লকের পিঁফার রামনগরের বাসিন্দা আব্দুল গিয়েছিলেন মহকুমাশাসকের দফতরে। অভিযোগ, সেখানে দুষ্কৃতীরা তাঁর উপরে চড়াও হয়। সামাদ বলেন, ‘‘আমাদের মারধর করে দুষ্কৃতীরা প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে পালায়। মনোনয়ন জমা দিলে খুনের হুমকি দিয়ে ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। তা সত্ত্বেও ফের নথি জোগাড় করে মনোনয়ন জমা দিয়েছি।’’

জেলা কংগ্রেসের (গ্রামীণ) সভাপতি অমিত মজুমদার জানান, ঘটনাটি জানার পরে বসিরহাট থানার আইসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। বসিরহাটের আইসি বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এ দিকে, সিপিএম জেলা কমিটির সদস্য তথা হাসনাবাদের তালপুকুর গ্রামের বাসিন্দা সুবিদ আলি গাজির অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতিতে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় রবিবার রাতে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ির সামনে দু’টো বোমাও মারে। দরজা-জানলার কাচ ভাঙে।

সন্দেশখালির গ্রামেও শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। বেলা ১০টা নাগাদ প্রায় ৪০ জন মোটরবাইক আরোহী সন্দেশখালির দাউদপুর বাজারে বিজেপির কার্যালয় ভাঙচুর করে। ভাঙচুর চালানোও হয় বটু দাস নামে এক যুবকের দোকানেও। এ দিন গাববেড়িয়া বাজারে বিজেপির কার্যালয়েও ভাঙচুর চলে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার মণ্ডল, জগন্নাথ দাসের বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট হয়েছে। এরপরে দুষ্কৃতীদের দলটি সুখদুয়ানি বাজারে গিয়ে দুরন্ত সর্দার, বিশ্বনাথ সর্দার, সনৎ সর্দার, বিষ্ণু সর্দারের বাড়ি ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ।

অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করে তৃণমূল নেতা দীপেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিরোধীরা প্রার্থী জোগাড় করতে না পেরে এখন আমাদের উপরে ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’

নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে বিডিও অফিসে ঢুকেছিলেন বলে দাবি, বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির ৫ নম্বর আসনের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী বীণা ব্যাপারীর। কিন্তু অভিযোগ, বিডিও অফিসে থাকা কিছু লোকজন মনোনয়নপত্র জমা দিতে তাঁকে বাধা দেন। তাঁদের দাবি, বীণা নির্দিষ্ট সময়ের পরে এসেছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রার্থীকে বিডিও অফিসে গিয়ে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিট) কাটতে হবে। ফরওয়ার্ড ব্লক সূত্রে জানানো হয়েছে, বীণা ৩টে বাজার আগেই ঢুকেছিলেন। কিন্তু তখন তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগ, তাঁকে নিগ্রহ করা হয়। অভিযোগ, সরকারি কর্মীরাই তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করেন অফিসের মধ্যে। খবর পেয়ে বনগাঁর বিডিও সঞ্জয়কুমার গুছাইত ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তিনি জানান, বীণা সঠিক সময়ে ঢুকেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে।

কিন্তু শেষমেশ বীণার মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। কারণ, ফব নেতা মৃত্যুঞ্জয় চক্রবতীর অভিযোগ, ‘‘বিডিও ঘর থেকে চলে যাওয়ার পরে বীণার প্রস্তাবক ও সমর্থককে কিছু লোক চ্যাঙদোলা করে বিডিও অফিসের বাইরে নিয়ে বাইকে করে চলে যান। ফলে বীণার মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।’’ যদিও বীণার তরফে বিডিও বা পুলিশের কাছে রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। বীণার দাবি, ‘‘ওই লোকজন শাসক দলের মদতপুষ্ট।’’ যদিও তৃণমূলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন