বসিরহাটে খাতা খুলল বিজেপি

বিধানসভায় বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে খারাপ হলেও বসিরহাট মহকুমার তিনটি পুরসভার ভোটে ৯টি আসন পেয়ে খাতা খুলল বিজেপি। তাদের দাবি, বহিরাগতদের দিয়ে তৃণমূল ভোট লুঠ না করলে বিজেপির আসন আরও অনেক বাড়ত। এমনকী, বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রেও তাদের বড় ভূমিকা থাকতে পারত।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৯
Share:

বসিরহাটে জয়ী দুই বিজেপি প্রার্থীকে সম্বর্ধনা। —নিজস্ব চিত্র।

বিধানসভায় বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে খারাপ হলেও বসিরহাট মহকুমার তিনটি পুরসভার ভোটে ৯টি আসন পেয়ে খাতা খুলল বিজেপি। তাদের দাবি, বহিরাগতদের দিয়ে তৃণমূল ভোট লুঠ না করলে বিজেপির আসন আরও অনেক বাড়ত। এমনকী, বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রেও তাদের বড় ভূমিকা থাকতে পারত।

Advertisement

কয়েক মাস আগেই বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে ৭৬,৫৭৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। সিপিএম নেতা নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছিল। নিকটতম তৃণমূলের দীপেন্দু বিশ্বাসের থেকে প্রায় ১৭ শো ভোটে এগিয়ে ছিলেন তিনি।

ওই ফলাফলের নিরিখে বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বসিরহাট পুরসভার ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি এবং টাকি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টিতে তৃণমূলের থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বিজেপি। স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল, টাকি এবং বসিরহাট পুরসভায় তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থীদের জোর টক্কর হবে।

Advertisement

মঙ্গলবার পুর নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, এই দু’টি পুরসভায় বিজেপি প্রার্থীরা মাত্র ৩টি করে মোট ৬টি আসনে জয়ী হয়েছে। সেখানে বসিরহাটে তৃণমূল পেয়েছে ১৩টি আসন এবং টাকিতে পেয়েছে ৮টি আসন।

তবে ২০১০ সালের পুরভোটে এই দুই পুরসভায় কোনও আসনই পায়নি বিজেপি। সেই তুলনায় আবার বিজেপির ফল ভালই বলতে হয় এই দুই পুরসভায়।

বিজেপি নেতৃত্ব মনে করেন, তৃণমূল ভোটের আগে ও ভোটের দিন সন্ত্রাস না করলে তাদের ফল আরও ভাল হতে পারত। তা ছাড়া, বিজেপির দাবি, বসিরহাট ও টাকি পুরসভায় ২০১০ সালে একটিও আসন ছিল না তাদের। সে ক্ষেত্রে দেখতে গেলে এ বারে তো ৬টি আসন পাওয়ায় ফল ভালই হয়েছে।

বিজেপির ফল ভাল হয়েছে বাদুড়িয়াতেও। সেখানেও এ বার ৩টি আসন পেয়েছে তারা। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের আবার দাবি, ৪টি আসন পাওয়ার আশা ছিল তাঁদের।

বসিরহাট পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির জয়ী প্রার্থী তপন দেবনাথ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘বহিরাগতদের নিয়ে তৃণমূল যে ভাবে ছাপ্পা ভোট মেরেছে, তা না হলে আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে জয়ী হতে পারতাম আমরা। তবে দলের সংগঠন বাড়ানোর দিকটাতেও আমাদের লক্ষ রাখতে হবে।’’

তবে শুধু সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে কি পরিস্থিতির পুরো ব্যাখ্যা মেলা সম্ভব?

নিচুতলার বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একটি অংশ মনে করছে, সংগঠন এখনও তেমন জোরদার হয়নি এই সব এলাকায়। সব স্তরের মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা হয়নি। তা ছাড়া, স্থানীয় স্তরে নেতৃত্বের জায়গাতেও শূন্যস্থান আছে। শুধু বাইরের নেতাদের ভরসায় আর বড় সভা কবে হবে, সে দিকে তাকিয়ে থাকলে স্থানীয় স্তরে সংগঠন কখনও মজবুত হবে না।

শমীকবাবু বলেন, ‘‘মানুষ যেখানে শাসক দলের বহিরাগতদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে সেখানে বিরোধী দলের প্রার্থীরা ভাল ফল করেছে। সঠিক নির্বাচন হলে আমাদের আরও ভাল ফল হত।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘বসিরহাটের তিনটি পুরসভায় যেখানে একটিও আসন ছিল না আমাদের, সেখানে আমরা ৯টি আসন পেয়েছি। তবে এটাও পুরোপুরি সন্তোষজনক নয়। আমাদেরও আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন আছে।’’

বসিরহাটের সাংসদ তথা তৃণমূল নেতা ইদ্রিশ আলি বলেন, ‘‘পুর নির্বাচনের ফলাফল তো বলছে বিরোধীরাই বহিরগতদের নিয়ে এসে ছাপ্পা মেরেছে। তা না হলে তো তৃণমূলের ফলাফল আর ভাল হত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন