পূজালির আকাশে কি গেরুয়া মেঘ

এক বছরও পেরোয়নি। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া বিজেপি-ই এখন শাসক দলের প্রধান চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পূজালির পুর নির্বাচনে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১৭
Share:

এক বছরও পেরোয়নি। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া বিজেপি-ই এখন শাসক দলের প্রধান চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পূজালির পুর নির্বাচনে।

Advertisement

বিধানসভা নির্বাচনে পূজালির ১৬টি ওয়ার্ডে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের থেকে ১৩৪৬ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে উত্তরপ্রদেশ ও দক্ষিণ কাঁথির গেরুয়া হাওয়ায় পরিস্থিতি যে বছরখানেকের মধ্যেই বেশ অনেকটা বদলে গিয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ তৃণমূলের নেতারাও।

প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এখানে তৃণমূলের ঘর ভেঙেছে বিজেপি। তিনটি ওয়ার্ডে এলাকার পরিচিত তৃণমূল নেতারাই এখন বিজেপি-র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের ভোটও তাঁদের ঝুলিতে আসবে বলে দাবি করছে বিজেপি।

Advertisement

কংগ্রেস-সিপিএম নয়, বিজেপি-ই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন পূজালি নির্বাচনে তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌতম দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘দক্ষিণ কাঁথির নির্বাচনী ফলাফলের ভিত্তিতে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের অস্তিত্ব বিলোপ হওয়ার মতোই অবস্থা হয়েছে। ওই ধারা বজায় থাকলে বিজেপি-র ভোট আরও বাড়তে পারে।দ্বিতীয় আসনে থাকতে পারে ওরা। তবে আমার স্থির বিশ্বাস, পূজালির বাসিন্দারা উন্নয়নের নিরিখেই ভোট দেবেন। এখানে ধর্মের রাজনীতি কোনও ভাবেই কাজ করবে না। পূজালিতে মানুয ধর্মের খেলা নয়, উন্নয়ন চায়।’’

গত বিধানসভা নির্বাচনে পূজালির ১৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূল ১০,২২১, কংগ্রেস-সিপিএম জোট ৮৮৬৭ ও বিজেপি ২৪১৪ ভোট পেয়েছিল। সে ক্ষেত্রে তৃণমূল এবং সিপিএম-কংগ্রেস— তিন দলের ভোট ভেঙে যদি বিজেপি-র দিকে চলে যায়, তা হলে পরিস্থিতি শাসক দলের পক্ষে ঘোরালো হয়ে উঠতে পারে বলে দাবি করছেন বাসিন্দারা।

গত কুড়ি বছর ধরে পূজালি পুরসভা কংগ্রেসের দখলেই ছিল। গত নির্বাচনে তৃণমূল ও কংগ্রেসের আসন-সমঝোতা হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনের পরে চার নির্দল প্রার্থী নিয়ে বোর্ড গড়েছিল কংগ্রেস। তৃণমূল বিরোধীর আসনে ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে পুর চেয়ারম্যান ফজলুল হক নিজেই সদলবল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত হয় কংগ্রেস। বোর্ডের দখল নিয়ে নেয় তৃণমূল।

ফজলুল হকের তৃণমূলে যোগ দেওয়াটাই এখানে প্রচারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার করেছে বিজেপি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা (পশ্চিম) বিজেপি-র সভাপতি অভিজিৎ দাসের কথায়, ‘‘পুর এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এলাকার কোনও উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন আমাদের চোখে পড়েনি। তিনি কংগ্রেসের ভোটে জিতে নিজের আখের গুছিয়েছেন। এ বার মানুষ কংগ্রেস-সিপিএম ও তৃণমূলকে এর উপযুক্ত জবাব দেবে। পূজালির তিতিবিরক্ত মানুষ আজ পরিবর্তন চাইছে।’’

ফজলুল হক অবশ্য বিজেপি-র অভিযোগে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল প্রকল্প ও আইটিআই কলেজ-সহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। বিজেপি অপপ্রচার চালাচ্ছে।’’

পূজালিতে তাঁদের দলীয় সংগঠন যে তেমন মজবুত নয়, তা স্বীকার করে নিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ীও। এ বারের নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের কোনও জোট হয়নি। তবে কংগ্রেস ও সিপিএম আসন-সমঝোতা করে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে। সঙ্গে রয়েছেন দু’দলের সহমতে নির্দল প্রার্থীরা। নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা মুজিবর রহমান শেখ এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘মানুষ কংগ্রেসকেই যোগ্যতম দল হিসেবে বেছে নেবে। পূজালি তো কংগ্রেসের গড়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন