বনগাঁয় পঞ্চায়েত দখলে বিজেপির কৌশল

জয়ীদের ওড়িশায় রেখে এসেছিল দল

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় পঞ্চায়েত বোর্ড দখল করল বিজেপি। সোমবার গাইঘাটা ব্লকের ধর্মপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিল পদ্ম শিবির। গত কয়েকদিন জয়ী সদস্যদের ওড়িশায় নিয়ে গিয়ে রেখেছিল দল। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৮ ০০:৩৭
Share:

আঁটোসাঁটো: গাইঘাটায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন চলছে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় পঞ্চায়েত বোর্ড দখল করল বিজেপি। সোমবার গাইঘাটা ব্লকের ধর্মপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিল পদ্ম শিবির। গত কয়েকদিন জয়ী সদস্যদের ওড়িশায় নিয়ে গিয়ে রেখেছিল দল।

Advertisement

ধর্মপুর ২ পঞ্চায়েতে আসন ১৬টি। ভোটে বিজেপি পেয়েছিল ৮টি আসন। তৃণমূল পায় ৬টি। ২টি আসনে জয়লাভ করেন নির্দল প্রার্থীরা। সোমবার পঞ্চায়েত অফিসে প্রধান নির্বাচনে দেখা যায় ৯-৭ ভোটে জয়ী হয়ে প্রধান নির্বাচিত হলেন বিজেপির নীলাদ্রি ঢালি। উপপ্রধান হয়েছেন মল্লিকা দেবনাথ। তিনি নির্দল প্রার্থী। তাঁকে সব পক্ষই সমর্থন করেছে। সূত্রের খবর, দু’জন নির্দল প্রার্থীর মধ্যে একজন বিজেপি ও একজন তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়েছেন এ দিন। প্রধান নির্বাচিত হয়ে নীলাদ্রি বলেন, ‘‘দলমত নির্বিশেষে এলাকার মানুষকে পরিষেবা দেওয়াই হবে আমার প্রধান লক্ষ্য। আর প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পগুলি গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।’’

এ দিনের বিজেপির বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া অবশ্য সহজ হয়নি। দলীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তাদের জয়ী প্রার্থীদের শাসক দলের তরফে টাকার লোভ দেওয়া হয়েছিল, ভয় দেখানো হয়েছিল। বিজেপি নেতৃত্ব জয়ী প্রার্থীদের দিন পনেরো ধরে ওড়িশায় নিয়ে গিয়ে রাখেন।

Advertisement

সোমবার সকালে গাড়ি করে তাঁদের আনা হয় এলাকায়। অভিযোগ, সকাল থেকে তৃণমূলের লোকজন এলাকা দখল করে রেখেছিল। বহিরাগতেরা জড়ো হয়েছিল। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘আমাদের জয়ী সদস্যদের নিয়ে পঞ্চায়েত অফিসের দিকে এগোতেই তৃণমূলের লোকজন আমাদের বাঁশ-লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে। বোমাও ছোড়া হয়। অনেক কষ্টে সদস্যদের চোরের মতো পঞ্চায়েত অফিসে পৌঁছে দিতে পেরেছি।’’ বোর্ড গঠনের পরে বিপ্লব বলেন, ‘‘এটা মানুষের জয়।’’

এ দিকে, পঞ্চায়েতের ক্ষমতা হারিয়ে শাসকদলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা সুভাষ হালদার করেন, ‘‘মানুষের রায় আমি মাথা পেতে নিয়েছি। তবে এই পরাজয়ের কারণে পিছনে রয়েছে দলের গাইঘাটা ১ ব্লকের সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহর মদত। ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতেই ধ্যানেশের জন্য ফল খারাপ হয়েছে।’’ দলীয় নেতৃত্বের কাছে তিনি দাবি করেছেন, দ্রুত ধ্যানেশকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। যা শুনে ধ্যানেশ বলেন, ‘‘ওই এলাকায় সুভাষের অহঙ্কার, তোলাবাজির কারণে পরাজয় হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওই এলাকার মানুষ ভোট দেননি। দিয়েছেন ব্যক্তি সুভাষের বিরুদ্ধে।’’ বাগদা ব্লকের কোনিয়াড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতাও দখল করেছে বিজেপি। সোমবার ওই পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন অনামিকা বিশ্বাস। উপপ্রধান হয়েছেন বিজেপির কিশোর বিশ্বাস। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছিল ৯টি আসনে। তৃণমূল পায় ৪টি আসন। কংগ্রেস ও সিপিএম একটি করে আসনে জয়ী হয়েছিল।

ভোটের পরে জেলা তৃণমূল থেকে জানানো হয়েছিল, জেলায় একটিও পঞ্চায়েত বোর্ড বিজেপিকে গঠন করতে দেওয়া হবে না। তথ্য বলছে, সে কথা রাখা গেল না। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ দিন বলেন, ‘‘এই দু’টি পঞ্চায়েতে যা ঘটল, তা দুর্ভাগ্যজনক। এতে এলাকায় উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে যাবে। কারণ, যারা বোর্ড গঠন করল, তারা কাজ করতে জানে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন