তৃণমূলে-তৃণমূলে বোমাবাজি, মাঝখানে পড়ে জখম ছাত্রী

শাসক দলের একটি পার্টি অফিসেও ভাঙচুর চলে। ভরা বাজারে বোমাবাজিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। রাজা সরকার এবং সুদীপ্ত দাস নামে দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩৮
Share:

যন্ত্রণা: হাসপাতালে বর্ষা।— নিজস্ব চিত্র

মায়ের সঙ্গে ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিল বর্ষা। গোলমালের মাঝে পড়ে যায়। এ দিক ও দিক থেকে তখন বোমা পড়তে শুরু করেছে। একটি বোমা এসে পড়ে বর্ষাদের গায়ের কাছে। স‌প্লিন্টার লেগেছে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া মেয়েটির কোমর, পায়ে।

Advertisement

সোমবার রাতে ঘটনাস্থল কাঁচরাপাড়ার জোনপুর। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দলেই এই পরিস্থিতি বলে অভিযোগ। শাসক দলের একটি পার্টি অফিসেও ভাঙচুর চলে। ভরা বাজারে বোমাবাজিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। রাজা সরকার এবং সুদীপ্ত দাস নামে দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ দিকে, দুই নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তাঁদের অনুগামীরা বিক্ষোভ শুরু করে। হালিশহরে রেল অবরোধ হয়। মিনিট কুড়ি পরে পুলিশ অবরোধ তুলে দিলে কাঁচরাপাড়া গাঁধী মোড়ে এসে রাস্তা অবরোধ করে ওই লোকজন। আধ ঘণ্টা পরে পুলিশ সেখান থেকেও তাদের হঠিয়ে দেয়। দুই নেতার মুক্তির দাবিতে এরপরে থানার সামনে বিক্ষোভ চলে রাত পর্যন্ত।

Advertisement

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহ। অন্য দিকে, বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়ের বক্তব্য, ‘‘যারা পার্টি অফিস ভাঙচুর, বোমাবাজি করেছে, তারা দুষ্কৃতী। দলের কেউ নয়।’’ কী ঘটেছিল সোমবার রাতে? তৃণমূলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের দুই যুব নেতা রাজা-সুদীপ্তর মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকা দখলের লড়াই চলছে। অভিযোগ, দু’পক্ষের লোকই তোলাবাজি চালাচ্ছে স্থানীয় বাজারে। সেই বাজারে কমিটি তৈরি হবে। কমিটির দখল কাদের হাতে থাকবে, তা নিয়ে ফের হাওয়া গরম হয়েছে ক’দিন ধরে। রাজা এবং সুদীপ্ত দু’জনেই বর্তমানে এক বিধায়কের অনুগামী হলেও তাদের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলানো যায়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে সুদীপ্তর গোষ্ঠীর এক জনের বাড়িতে চড়াও হয় রাজার গোষ্ঠীর লোকেরা। তাকে মারধর করা হয়। বাড়িতে ভাঙচুর চলে বলে অভিযোগ। পাল্টা হামলা চালায় রাজার গোষ্ঠীর লোকেরা।

রাতে কাঁচরাপাড়ার জোনপুর কুলিয়াপাড়া বাজার এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সে সময় বাজারে যথেষ্ট ভিড় ছিল। লক্ষ্মীপুজোর বাজার করছিলেন মহিলারা। তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। তার মধ্যেই শুরু হয় বোমাবাজি। তৃণমূলের পার্টি অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এক দল। পার্টি অফিস লক্ষ্য করে বোমাবাজি শুরু হয়। জখম হয় ন’বছরের বর্ষা। স্থানীয় মানুষজন তাকে রেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে পাঠানো হয় কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে।

ক’দিন আগেই নাগেরবাজারে বোমা ফেটে মারা গিয়েছিল ন’বছরের এক বালক-সহ ৩ জন।

সোমবারের ঘটনায় আতঙ্কিত ছোট্ট মেয়ে বর্ষা। বার বার আঁতকে উঠছে সে। ভয়ে, যন্ত্রণায় কেঁদে ফেলছে। ঘুমের মধ্যে থেকে থেকে জেগে উঠছে বলে জানালেন মা। বর্ষার সঙ্গে বেরিয়েছিল তার এক সহপাঠী। আতঙ্কিত সে-ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন