ঘুমের মধ্যেই ককিয়ে উঠেছিল ছেলেটি। থাবড়ে ফের ঘুম পারিয়ে দেওয়ার আগে, মা বলেছিলেন, ‘‘পিঁপড়ে কামড়েছে বোধহয়!’’
খানিক পরে ছোট্ট মেয়েটিও। মশারির মধ্যে এমন কী পিঁপড়ে ঢুকল? এ বার খোঁজাখুঁজি শুরু করতেই বেরিয়ে পড়েছিল ‘পিঁপড়ে’, আস্ত এক কালাচ সাপ।
বছর নয়েকের হাকিম আর তার সাত বছরের ছোট্ট বোন মমতাজ— দু’জনকেই ছোবল দিয়ে মশারির গায়ে লেপ্টে ছিল সে। সাপটিকে পিটিয়ে মেরে শুক্রবার রাতেই, ওঝার কাছে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ছুটেছিলেন বাবা-মা। তবে, বেগতিক দেখে ওঝা নিদান দিয়েছিল, ‘দেরি হয়ে গেছে, আমার আর করার কিছু নেই।’
এ বার ভ্যান রিকশা ভাড়া করে তাঁরা গিয়েছিলেন সাত কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা ব্লক হাসপাতালে।
তবে, ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের পথেই মারা যায় হাকিম। এভিএস দিয়ে চিকিৎসা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় হাকিমের বোন মমতাজও। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওঝা আর হাসপাতাল, দুয়ের মাঝে সময় নষ্ট করার ফলেই এই পরিণতি।
ছেলেমেয়ে দু’টির বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার বনমালিপুরে। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী তথা সর্প বিশারদ বিজন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘আফসোসটা যাচ্ছে না। গ্রীষ্ম-বর্ষা গ্রামে ঘুরে এত প্রচার করি আমরা, গ্রামের মানুষ তবু, ওঝা-গুনিনের ভরসা ছাড়তে পারছেন না। সময় নষ্ট করার ফলেই মারা গেল ভাই-বোন।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এ ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। গত বছর, একই ভাবে সাপের ছোবলে মারা গিয়েছিল এক পরিবারের স্বামী-স্ত্রী-ছেলে। ২০১৪ সালেও মশারির ভিতরে সাপের ছোবল ছিনিয়ে নিয়েছিল দুই ভাইকে।
বিজন বলছেন, ‘‘পালস পোলিও থেকে নাবালিকা বিয়ে রুখতে সরকারি প্রচারের শেষ নেই। এ ব্যাপেরও সরকার যদি একটু উদ্যোগী হতো...।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, হাকিম-মমতাজের পরিবার ফের স্থানীয় এক ওঝার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শনিবার রাত পর্যন্ত মৃতদেহ নিয়ে ঝাড়ফুঁক চলতে থাকে। বলাইবাহুল্য, তাতে প্রাণ ফেরেনি।
ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সাপের কামড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাদের পরিবারের বিশ্বাস, ঝাড়ফুঁক করলে ঠিক হয়ে যাবে। তা সম্ভব নয় জেনেও পরিস্থিতি বিচার করে আমরা পরিবারটিকে জোর করিনি।’’
বিজনবাবু বলেন, ‘‘বিজ্ঞানের যুগে দাঁড়িয়েও মানুষের মধ্যে এমন বহু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এ সব দূর করতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। সাপের কামড়ে ওঝা-গুনিনদের যে কিছু করার থাকে না, হাসপাতালেই সঠিক চিকিৎসা হয়, তা বোঝাতে লাগাতার প্রচার চালানো উচিত।