২৬ বছর আগে বধূ নির্যাতনের মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন নামখানা দক্ষিণ দুর্গাপুরের বাসিন্দা শেখ জলিল বক্স। তখন ডায়মন্ড হারবার কোর্টেই বিচার শুরু হয়েছিল। ২০০৫ সালে কাকদ্বীপ আদালতে সেই মামলা চালু হয়। তারপর থেকে তাঁর মামলা চলছে।
এই আদালতে চারটি বিচারকের পদ শূন্য থাকায় দিনের পর দিন জমছে মামলা। তার জেরে কাকদ্বীপ মডেল আদালতে বিচার পেতে দেরি হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মামলার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাক্ষীরা বেঁকে বসছেন। কারণ অভিযুক্তদের জামিন দিয়ে দেওয়ার দীর্ঘদিন পর পড়ছে মামলায় নতুন শুনানির দিনক্ষণ। আইনজীবীদের একটি অংশের দাবি, জামিন পেয়ে অভিযুক্তরা ছাড়া পাচ্ছে। সেই সময় সাক্ষীদের প্রভাবিত করা হচ্ছে। ফলে তাঁরা আদালতে আর সাক্ষী দিতে চাইছেন না।
জলিল বক্সের কথায়, ‘‘আমার শালার স্ত্রী মামলা করেছিলেন। তাঁর শালার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর আবার অন্যত্র বিয়ে হয়েছে। তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি মামলা থেকে এখনও রেহাই পেলাম না।’’ তিনি জানান, কোর্টে ৮ মাস অন্তর দিন পড়ে। কাকদ্বীপের আইনীজীবীরা জানান, দোষ প্রমাণ হলে ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত হতে পারে এরকম মামলায়ও দিনের পর দিন জামিন নিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে অভিযুক্তরা। কাকদ্বীপ আদালতের সরকারি আইনজীবী দেবাশিস দাসের কথায়, ‘‘অন্তত ৮০ শতাংশ মামলার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সাক্ষীরা বয়ান বদলে ফেলছে। আমরাও বিরক্ত, কারণ দ্রুত মামলার নিস্পত্তি প্রয়োজন। তা না হলে একটি মামলায় অনেক রকমের রদবদল ঘটে যায়।’’
বারের নেতাদের দাবি, এই মুহুর্তে আরও দু’জন এডিজে বিচারক, দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক এবং একজন সিভিল বিচারকের আশু প্রয়োজন।
কবে হবে নিয়োগ?
রাজ্যের আইন ও বিচারমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘‘আদালতে নিয়োগ হাইকোর্টের তরফেই হয়। সেটা আমরা বলতে পারব না হাইকোর্ট কবে নিয়োগ করবে।’’ আইনজীবীদের দাবি, রাজ্য সরকার আদালতের কাছে বিষয়টি তুলুক।
এই মুহূর্তে কাকদ্বীপে এসিজেএম, জেএম, এডিজে এবং সিভিল বিচারক জুনিয়র ডিভিশনের কোর্টে ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা ১১ হাজারের একটু বেশি। তৎকালীন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তুলে দিয়ে ২০১৪ সালে শুরু হয়েছিল এডিজে আদালত। সেখানে মামলার শুনানির দিন পড়লে পরের দিন দিয়ে দিতে হচ্ছে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। সরকারি আইনজীবী গুরুপদ দাস বলেন, ‘‘একটা এডিজে আদালত অবিলম্বে প্রয়োজন।’’ বাকি আদালতগুলিতেও ৬ মাস বা ৮ মাসের আগে দিন পড়ছে না। বার বার আদালতে বিচারক নিয়োগ করার কথা হলেও ফল কিছুই হচ্ছে না।
কাকদ্বীপ আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফেও এ বিষয়ে বার বার জেলা বিচারকের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবপ্রকাশ জানা বলেন, ‘‘চারটি আদালতেই বিচার শুরু করার জন্য যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি। আমরা অনেকদিন ধরেই শুনছি, নিয়োগ হবে কিন্তু হচ্ছে না। বিচারপ্রার্থীরা খুবই অসুবিধায় পড়ছেন।’’