একটু বাড়াবাড়ি নয় কি, উঠছে প্রশ্ন

হাবরায় বসছে ৫০০ ক্যামেরা

পুঁচকে একটা শহরে এতগুলো ক্যামেরা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে না, প্রশ্ন উঠছে বিরোধী মহলে। টাকা নয়ছয় হচ্ছে, জনান্তিকে বলছেন অনেকেই। তা ছাড়া, এর আগে হাবরায় খান কতক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবরা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:০৮
Share:

হাবরা থানায় সিসি ক্যামেরায় মনিটারিং চলছে। ছবি: শান্তনু হালদার

হাবরা শহরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে শহরের অলিগলি-সহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে, বাজার এলাকায় ১১২টি সিসি ক্যামেরা ইতিমধ্যেই বসেছে। কিছু দিনের মধ্যেই সিসি ক্যামেরার সংখ্যা হাবরা শহরে দাঁড়াবে ৫০০, এমনটাই জানাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

Advertisement

পুঁচকে একটা শহরে এতগুলো ক্যামেরা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে না, প্রশ্ন উঠছে বিরোধী মহলে। টাকা নয়ছয় হচ্ছে, জনান্তিকে বলছেন অনেকেই। তা ছাড়া, এর আগে হাবরায় খান কতক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। যেগুলি অধিকাংশই বিগড়েছে। ফলে ৫০০ ক্যামেরার হ্যাপা ঠিকঠাক সামলানো যাবে তো, উঠছে সেই প্রশ্নও। সিপিএমের এক নেতার কটাক্ষ, কলকাতা শহরে যেখানে মোটামুটি থানার সংখ্যা ৭৯, সেখানে সরকারি উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা বসেছে মেরেকেটে হাজার পাঁচেক। সেখানে একখানা থানা এলাকায় এতগুলো ক্যামেরা বসানো কি বাড়াবা়ড়ি নয়, প্রশ্ন তুলছেন তিনি। সম্প্রতি জ্যোতিপ্রিয়বাবু ক্যামেরা বসানোর কাজের সূচনা করেন। তিনি জানান, ‘গ্রিন সিটি প্রকল্প’-এ পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে হাবরা শহরে ৫০০ সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। পুলিশ জানায়, ক্যামেরার ফুটেজ দেখার জন্য ২৪ ঘণ্টা হাবরা থানার একটি কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে।

বিরোধীরা যতই কূটকচালি করুক, হাবরার ব্যবসায়ী মহল ৫০০ সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্তে খুশি। হাবরা ব্যবসা নির্ভর এলাকা। উত্তর ২৪ পরগনার সব থেকে বড় চালের আড়ত হাবরা বাজারে। এ ছাড়াও, সোনার দোকান, কাপড়ের হাট আছে। জেলার দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে আসেন। তাঁদের অনেকের কাছেই প্রচুর নগদ টাকা থাকে। দিনে কয়েক কোটি টাকার নগদ লেনদেন হয়। অতীতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ছিনতাই, লুঠের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কয়েক বছর আগে স্টেশন রোডের কাছে একটি সোনার দোকানে ভরসন্ধ্যায় ডাকাতি হয়। সিসি ক্যামেরায় শহর মুড়ে ফেলার সরকারি সিদ্ধান্তে ফলে আশ্বস্ত বোধ করছেন ব্যবসারীরা।

Advertisement

হাবরা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সম্পাদক নিরঞ্জন সাহা বলেন, ‘‘এতে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ভাবে বাড়বে। কিন্তু ক্যামেরাগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও জরুরি। অতীতেও শহরে ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছু ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়ে।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহররের গুত্বপূর্ণ এলাকা চোংদা মোড়, স্টেশন রোড, হাসপাতাল মোড়, বাণীপুর, জয়গাছি কইপুকুর— সর্বত্র ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বাণীপুর এলাকায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুষ্কৃতীরা এসে গা ঢাকা দেয় বলে দুর্নাম আছে। সিসি ক্যামেরার নজরদারি বাড়লে এলাকায় অপরাধপ্রবণতা কমবে বলে মনে করছেন হাবরা থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়। অপরাধীদের শনাক্ত করে দ্রুত পদক্ষেপ করা যাবে বলেও আশা তাঁর।

হাবরা শহরে এর আগে ছাত্রীদের পড়তে যাওয়া-ফেরার পথে শ্লীলতাহানি, কটূক্তির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। স্কুল পড়ুয়া এক ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘মেয়ে স্কুল থেকে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত চিন্তায় থাকি। ক্যামেরা বসানোর ফলে রোমিওরা নিশ্চয়ই উল্টোপাল্টা কিছু করার আগে দু’বার ভাববে।’’ শহরে একটি স্যুইমিং পুল রয়েছে। সেখানে মহিলারাও সাঁতার কাটতে আসেন। প্রায় ওই মহিলাদের বাইকে করে এসে যুবকেরা উত্যক্ত করে বলে অভিযোগ। শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটেছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘স্যুইমিং পুলের বাইরেও ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। কেউ আর মহিলাদের উত্যক্ত করার সাহস পাবে না।’’ হাবরার পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস জানান, শহরের প্রতিটি অলিগলিতে ঢোকা-বেরনোর মুখে ক্যামেরা থাকছে। কোথাও কেউ অপরাধমূলক কাজ করে পালিয়ে বাঁচতে পারবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন