বিদ্যুৎ চুরি করতে দিন, দাবি কামারহাটিতে

সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কামারহাটি এলাকায়। মঙ্গলবার সকালে সেখানে গিয়ে বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফের পিলার বক্সে তালা ঝুলিয়েছেন কর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৬
Share:

বেআইনি: এই পিলার বক্সের তালা ভেঙেই চলছিল বিদ্যুৎ চুরি। মঙ্গলবার, কামারহাটিতে। —নিজস্ব চিত্র।

কোনও রাখঢাক নয়। বাসিন্দাদের সরাসরি দাবি, তাঁদের বিদ্যুৎ চুরি করতে দিতেই হবে। তাতে আপত্তি জানিয়ে কাজ করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হতে হল সিইএসসি কর্মীদের। এমনকি, তাঁরা এলাকা ছাড়তেই রীতিমতো গ্যাস কাটার ও শাবল দিয়ে ভেঙে ফেলা হল বিদ্যুৎ সরবরাহের নতুন পিলার বক্স।

Advertisement

সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কামারহাটি এলাকায়। মঙ্গলবার সকালে সেখানে গিয়ে বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফের পিলার বক্সে তালা ঝুলিয়েছেন কর্মীরা। ২০০৩ সালের বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী ১৩৫ এবং ১৩৮ নম্বর ধারায় বেলঘরিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সিইএসসি কর্তৃপক্ষ।

রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিইএসসি আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। এ রকম তো চলতে পারে না। প্রশাসন সব রকম সহযোগিতা করবে। প্রয়োজনে জেলাশাসক ও পুলিশ কমি‌শনারকে ফোন করে বিষয়টি দেখতে বলব।’’

Advertisement

সিইএসসি সূত্রের খবর, গোটা কামারহাটি এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে পুরনো ওভারহেড তার বদলে নতুন কেব্‌ল লাগানো হয়েছে। ওই কেব্‌ল সুরক্ষার দিক থেকে যেমন উন্নত, তেমনই ঝড়-বৃষ্টিতেও ছিঁড়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। সোমবার বিকেলে পুরনো পিলার বক্স বদলে কামারহাটির ছোট ছাই মাঠ ও দাশু গলির কাছে জার্মান প্রযুক্তির দু’টি বক্স বসানো হয়। আধিকারিকেরা জানান, ওই পিলার বক্স দু’টিতে দু’টি দরজা রয়েছে। কিন্তু তা থেকে বিদ্যুৎ চুরির সুযোগ খুব কম।

অভিযোগ, রাতের দিকে দাশু গলি এলাকায় যখন পিলার বক্সে তালা লাগানো হচ্ছিল, তখনই কয়েকশো মহিলা ও পুরুষ এসে সিইএসসি-র কর্মীদের ঘিরে ফেলেন। তাঁরা দাবি তোলেন, ওই পিলার বক্সে তালা লাগানো যাবে না। কারণ, সেখান থেকে তাঁরা বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেবেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি সিইএসসি-র আধিকারিকেরা। খবর পেয়ে সেখানে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর। আসে পুলিশও। কোনও মতে বাসিন্দাদের বুঝিয়ে পিলার বক্সে তালা ঝুলিয়ে চলে যান কর্মী ও আধিকারিকেরা। রাতে তাঁরা জানতে পারেন, দাশু গলির ওই বাসিন্দারা শাবল, গাঁইতি এবং গ্যাস কাটার দিয়ে ওই বক্সের দরজা ভাঙছেন। খবর পেয়ে পুলিশ গেলেও তত ক্ষণে কাজ হাসিল করে ফেলে ওই বাসিন্দারা।

এ দিন সকালেই সিইএসসি-র আধিকারিকেরা এলাকায় গিয়ে দেখেন, ওই পিলার বক্স থেকে মোটা তার দিয়ে বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে চারটি বাড়িকে চিহ্নিত করে দেখা যায়, পিলার বক্স থেকে সেখানে সরাসরি বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ ঢুকছে। কর্মীরা সেগুলির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কামারহাটি পুরসভার ওই ঘিঞ্জি দাশু গলিতে প্রায় ৭০০টি পরিবার থাকে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই হুকিং করে বিদ্যুৎ নিয়ে দেদার এসি, ফ্রিজ, টি‌ভি চালানো হচ্ছে।

সিইএসসি সূত্রের খবর, স্থানীয় দুই ব্যক্তি বেআইনি ভাবে ওই পিলার বক্স থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় বলে জানা গিয়েছে।

এর জন্য বাড়ি-পিছু তারা মাসে ২০০-৩০০ টাকা করে নেয়। এ দিন চেলুয়া ও অন্নু নামের ওই দুই ব্যক্তি এবং যে চারটি বাড়ি চিহ্নিত করা হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরি এবং বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (জোন ২) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। মামলা দায়ের করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন