জাম্বো ঘুড়িতে ছেয়েছে আকাশ

গঙ্গা পাড়ের ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়া অর্ক খানিকটা হতাশ হয়েই মায়ের কাছে বায়না করল, ‘‘মা ডোরেমন কাইটের মতো একটা কাইট চাই আমারও।’’ নৈহাটির বাসিন্দা অরুণিমা ঘোষও এমন ঘুড়ি দেখে অবাক হয়েছিলেন।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২১
Share:

হাতের-কাজ: ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

স্কুল থেকে ফেরার পথে পাড়ার মোড়ে বন্ধুদের কাছ থেকে লাটাই নিয়ে অর্কও নীল ডোরেমনকে কাটার চেষ্টা করল তার হাতে ধরা সুতোর মাথায় বাঁধা মিকি মাউসকে দিয়ে। কিন্তু ডোরেমনের গায়ে এলইডি আলোর পাশাপাশি সোলার ফ্যান লাগানো। যা সাধারণ ঘুড়ির থেকে দ্রুত দিক বদলাতে ও গতি বাড়াতে সাহায্য করে।

Advertisement

গঙ্গা পাড়ের ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়া অর্ক খানিকটা হতাশ হয়েই মায়ের কাছে বায়না করল, ‘‘মা ডোরেমন কাইটের মতো একটা কাইট চাই আমারও।’’

নৈহাটির বাসিন্দা অরুণিমা ঘোষও এমন ঘুড়ি দেখে অবাক হয়েছিলেন।

Advertisement

কল-কারখানা ঘেরা এই শিল্পাঞ্চলের আকাশে ঘুড়ি ওড়ে ফি বছর সরস্বতী পুজো, বিশ্বকর্মা পুজোর সময়ে। কিন্তু তা বলে এমন আলো জ্বলা, পাখা চলা, রঙ-বেরঙের বিরাট বিরাট ঘুড়ি সচরাচর নজরে পড়ে না।

কিন্তু এমন ঘুড়ি পাওয়া যাবে কোথায়?

জানা গেল, টিটাগড়ের পিকে বিশ্বাস রোডে গেলেই মিলবে এই ঘুড়ি। এখানেই গোটা শিল্পাঞ্চলের ঘুড়ির আড়ত। জে কাইট, কে কাইট, পি কাইট এর মতো অসংখ্য দোকান আর লাগোয়া কারখানায় হরেক রকমের ঘুড়ি তৈরি হচ্ছে। চিন ও কোরিয়া থেকেও আসছে পাতলা কাপড়ের আর প্লাস্টিকের ঘুড়ি। তাতেই মূলত, আলো, পাখা লাগানো থাকছে। সেগুলি দেখেই এখানকার কারখানাতেও তেমন ঘুড়ি তৈরির পরীক্ষা নিরিক্ষা চলছে বলে জানান স্থানীয় ঘুড়ি ব্যবসায়ীরা।

জে কাইটের মালিক মানিক সাউ বলেন, ‘‘আগেও ঢাউস ঘুড়ি তৈরি হয়েছে। প্রচুর কসরত করে ওড়ানো হয়েছে। এখনও তৈরি হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ হওয়ায় আর আগের মতো কসরত করতে হয় না।’’

একটা সময় ছিল, যখন জাম্বো সাইজের ঘুড়ি আরও বেশি বেশি উড়ত আকাশে। বড় ঘুড়ি ওড়াতে অন্তত দু’জন লোক লাগত। ছিল বড়লোকিআনাও।

আধুনিক প্রজন্মের ঢাউস ঘুড়িতে সে সবের বালাই নেই। নাইলন কাপড়ের এই ঘুড়ি যেমন হালকা তেমনি মজবুতও। বৃষ্টি নামলেও ঘুড়ি নষ্ট হবে না। বরং ডিজাইন এমন ভাবে করা, যাতে হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে উড়তে পারে। প্লাস্টিকের সুতো ভো-কাট্টা হওয়ারও ভয় নেই। ডোরেমন, মিকি মাউস, ছোটা ভীম, হনুমান অনেক চরিত্রের ঘুড়ি। সাত-আট ফুটের অমিতাভ বচ্চন, ক্যাটরিনা কাইফ, অনুষ্কা শর্মা, রণবীর কপুরদেরও এখন আকাশে উড়তে দেখা যাচ্ছে।

সাইজ অনুযায়ী দাম আলাদা। সব থেকে ছোটটার দাম পড়বে ৫০ টাকা। বড় ২৫০। হাল ফ্যাশনের ছাতায় যে ধরণের প্লাস্টিকের কাঠি ব্যবহার করা, এই ঘুড়িতেও তাই হয়েছে। এমনিতেও এখন নাইলন আর প্লাস্টিক সুতোই বেশি বিক্রি হয়। বড় ঘুড়ি, লাটাই মিলিয়ে প্রায় ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পঞ্চাশ টাকার লাটাই ঘুড়িও বাজার থেকে উঠে যায়নি বলেন কে কাইটের মালিক পাঁচু সাউ। কাগজের বদলে এখন পাতলা প্লাস্টিকের ঘুড়ির বাজার বেশি। তার দামও কম। বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার চিন্তাও নেই।

স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে ভিড় ঠেলে ঘুড়ি কিনছেন প্রবীণেরাও। শ্যামনগরের বাসিন্দা সঞ্জয় সেন বলেন, ‘‘ছোটবেলায় ঘুড়ি ওড়ানোর শখ ছিল। এক সময়ে বাক্স ঘুড়ি উড়িয়েছি পাড়ার সকলে মিলে। এই জাম্বো ঘুড়ি দেখে আবার শখ চাপল। আকাশে এত বড় বড় ঘুড়ি ধুঁকতে থাকা কল কারখানাগুলোর উপের উড়লে আকাশটাও কিছু সময়ের জন্য অন্য রকম লাগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন