Cyclone Amphan

ক্ষতিপূরণের টাকা পঞ্চায়েত সদস্যের পরিবারের ৫ জনের নামে

সাগরের রুদ্রনগর পঞ্চায়েতের এই ঘটনা সামনে আসায় বিস্মিত প্রশাসনের কর্তারাও। বিডিও জানিয়েছেন, যাঁদের বাড়ির ক্ষতি হয়নি অথচ পরিবারের একাধিক সদস্য টাকা পেয়েছেন— তাঁরা টাকা ফেরত দিচ্ছেন।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

সাগর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০৫:৫৬
Share:

ফাইল চিত্র।

পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী, ছেলে, নাবালিকা মেয়ে, ভাসুর ও শাশুড়ি— সকলের নামে ব্যাঙ্কে ঢুকেছে আমপানে ঘরভাঙার সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা।

Advertisement

সাগরের রুদ্রনগর পঞ্চায়েতের এই ঘটনা সামনে আসায় বিস্মিত প্রশাসনের কর্তারাও। বিডিও জানিয়েছেন, যাঁদের বাড়ির ক্ষতি হয়নি অথচ পরিবারের একাধিক সদস্য টাকা পেয়েছেন— তাঁরা টাকা ফেরত দিচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ জনের টাকা করে ফেরত এসেছে।

সাগর ব্লকে ৯টি পঞ্চায়েত। আমপান ঝড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল দ্বীপ এলাকায়। প্রায় সমস্ত মাটির বাড়ি ভেঙে তছনছ হয়েছে। ভেঙে পড়ে পানের বরজ।

Advertisement

অভিযোগ, যাঁদের পাকা দোতলা বাড়ি আছে, তাঁরা এক দিকে অনেকে ক্ষতিপূরণ পেলেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবার পাননি বাড়িঘর ভাঙার টাকা। এই সব মানুষ অনেকে এখনও খোলা আকাশের নীচে, বা এক টুকরো ত্রিপল-প্লাস্টিক টাঙিয়ে কিংবা আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

ধসপাড়া সুমতিনগর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান শোভা মাইতির ছেলে ও এক আত্মীয়ের নামে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে। প্রধানের দোতলা বাড়ি কয়লাপাড়া গ্রামে। তাঁর দাবি, ‘‘ছেলে ও এক আত্মীয়ের নামে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছিলাম। টাকা ঢোকার মেসেজ মোবাইলে এসেছে। কিন্তু কোনও টাকা ঢোকেনি। তাড়াতাড়ি তালিকা পাঠাতে গিয়ে নাম ঢুকে গিয়েছিল। তবে টাকা ঢুকলে ফেরত দেব।’’

কিন্তু ফেরতই যদি দেবেন, তা হলে আবেদন করেছিলেন কেন?

প্রধানের সাফাই, ‘‘আমার বাড়ির ছাদের অ্যাসবেস্টস ভেঙে গিয়েছিল। তাই আবেদন করেছিলাম।’’

রুদ্রনগর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য, কমলপুর গ্রামের বাসিন্দা সুধামণি মাইতি আবার ৫ জনের নামে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছিলেন। ব্যাঙ্কে টাকা ঢুকেও গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। সুধামণির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য ফোন ধরেনি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি।

তবে ওই সদস্যের পরিবারে অনেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন, তা মেনে নিয়েছেন পঞ্চায়েতে প্রধান নমিতা হাজরা। তিনি বলেন, ‘‘তাড়াহুড়োতে তালিকা তৈরি করতে গিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। এক পরিবারের অনেকে নাম ঢুকে গিয়েছিল। তবে সকলে টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছেন।’’

সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন ‘‘রুদ্রনগর পঞ্চায়েতের যে সদস্য টাকা নিয়েছিলেন, তিনি অন্যায় স্বীকার করে টাকা ফেরত দিয়েছেন।’’

ওই এলাকার বিজেপির নেতা অশোক নায়কের বক্তব্য, ‘‘আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা শাসকদলের নেতা-কর্মীরাই পেয়েছেন। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা না দিয়ে স্বজনপোষণ করা হয়েছে।’’

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রুদ্রনগর পঞ্চায়েতে এখনও পর্যন্ত ১৭০০ পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তবে যাঁদের পাকাবাড়ির ক্ষতি হয়নি, তাঁদের নোটিস করে টাকা ফেরত নেওয়া হচ্ছে।

নতুন করে তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে সর্বত্র। তাতেও ঘটছে বিভ্রান্তি। বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘নতুন করে যাঁরা আবেদন করছেন, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করার পরে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৮০ শতাংশ ভুল। এ রকমও দেখা গিয়েছে, একই পরিবারে কয়েক ভাই একই বাড়িতে বসবাস করলেও সকলেই আবেদন করেছেন। বাবার নামেও ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়েছে।’’

তাঁর মতে, এ ধরনের নাম তালিকায় থাকায় সরকারি কর্মীদের তদন্ত করতে যথেষ্ট সময় নষ্ট হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন