পানবাজারেও সিন্ডিকেটের অভিযোগ

নোট সমস্যার জন্য মহকুমার অন্যতম অর্থকরি ফসল পানের বাজার খারাপ হয়েছে। কিন্তু তার উপর সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের পাইকারদের সঙ্গে তৃণমূল প্রভাবিত পরিবহণ ইউনিয়নের জুলুমে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে কাকদ্বীপের পানবাজারের বেচাকেনা।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১১
Share:

কাকদ্বীপ আরএম পান বাজারে পানের দরদাম চলছে। নিজস্ব চিত্র।

নোট সমস্যার জন্য মহকুমার অন্যতম অর্থকরি ফসল পানের বাজার খারাপ হয়েছে। কিন্তু তার উপর সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের পাইকারদের সঙ্গে তৃণমূল প্রভাবিত পরিবহণ ইউনিয়নের জুলুমে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে কাকদ্বীপের পানবাজারের বেচাকেনা।

Advertisement

একদিকে দর হঠাৎ পড়ে গিয়ে যেমন চাষির ঘাড়ে কোপ পড়ছে, তেমনি কোটি টাকার পানবাজারে রাজনৈতিক সিন্ডিকেটেরও অভিযোগ উঠছে। পাইকাররা যদি পান না কেনেন, তাতে পান চাষের সঙ্গে যুক্ত কয়েকলক্ষ মানুষের রুজিতে টান পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ইউনিয়নের মাথায় রয়েছেন খোদ সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা। তিনি অবশ্য বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কাকদ্বীপ ছোট ও মাঝারি যান পরিবহণ ইউনিয়নের সভাপতি তথা মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘সমস্যা ছিল না পানের বিপণনে। কিন্তু আড়তদার এবং পাইকাররা চালকদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছেন বলে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া হবে শীঘ্রই।’’

রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার গাড়ি ভাড়া নিয়ে পান পরিবহণের রেওয়াজ ছিল। তাতে কাকদ্বীপেরও কিছু গাড়ি চলত। প্রায় দু’মাস আগে থেকে সমস্যার জট পাকতে শুরু করে। কাকদ্বীপে নতুন তৈরি হওয়া ছোট ও মাঝারি যান পরিবহণ ইউনিয়নের নেতাদের দাবি, কাকদ্বীপের কিছু মালিকের বসে থাকা গাড়ি কাজে লাগানোর জন্য পান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত অন্য গাড়ির থেকে ভাড়া বেশি চায় তৃণমূল প্রভাবিত ওই ইউনিয়ন।

Advertisement

পাইকাররা তাতেও রাজি হন। অন্য এলাকার গাড়ি বসিয়ে সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে সুযোগ দেওয়া হয় কাকদ্বীপের গাড়ি মালিকদেরও। কিন্তু গত এক মাসে কাকদ্বীপের সেই সমস্ত গাড়ির পরিষেবা, চালকদের দাপট, রাস্তা না চেনা—ইত্যাদি কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাইকাররা। অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে, অন্য এলাকার গাড়ি নিলেই ধমকেরর মুখেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের।

কাকদ্বীপ থেকে নানা জায়গায় পান যায়। একটা বড় বাজার রয়েছে উত্তরবঙ্গেও। সপ্তাহে অন্তত ৪০ গাড়ি পান যায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরে। শিলিগুড়ির পাইকার বিশ্বজিৎ সাহা ১৭ বছর ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘দেখুন আমরা ব্যবসায়ী। সময়ে না পেলে পান কিনে লাভ নেই।’’

অভিযোগ, ভাড়া করা গাড়ি, ভাড়া করা চালক কখনও বা মাটি তোলার গাড়িতে পান তুলতে বাধ্য করছে তৃণমূল প্রভাবিত ওই ইউনিয়ন। সম্প্রতি এই নিয়ে ঝামেলার জেরে পাইকাররা পান কিনতে অস্বীকার করলে এক ধাক্কায় পানের দর নেমে আসে অনেকটাই। তাতে চাষিদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে। এখন বাজার চালু থাকলেও এই নিয়েই নিত্য অশান্তির জেরে পিছিয়ে পড়ছেন অনেক পাইকার।

নামখানার হরিপুরের পানচাষি গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘টাকা পয়সার ঝামেলার পর থেকে পানের বাজার অনেকটাই মার খেয়েছে। বরজ থেকে পান তুলে নিয়ে গিয়ে দেখি, পাইকাররা পান কিনবে না। এরকম হলে আমাদের সংসার চালানো দায় হয়ে পড়বে।’’

মহকুমায় পান চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ। কাকদ্বীপের আরএম পানবাজার সমেত আরও ৪টি পানবাজার থেকে সপ্তাহে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু সেখানে এ ভাবে জুলুম চললে পানের বাজারগুলি অচিরেই শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

কাকদ্বীপ আরএম পান বাজারের কর্ণধার অদ্বৈত মণ্ডলের দাবি, ‘‘ব্যবসায় মানুষ যেখানে কমে ভাল পরিষেবা পাবে, সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করবে। একটা সময় কাকদ্বীপে গাড়ি কম ছিল, তখন অন্য জায়গার গাড়ি ঢুকেছে। স্থানীয় কর্মসংস্থান দেখতে এখানকার চালকদেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে পাইকারদের অসুবিধার জায়গাটাও তো মাথায় রাখতে হবে সবাইকেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন