রাজস্ব দফতরে দালালরাজের নালিশ 

অভিযোগ, এমন কোনও আবেদন বা আপত্তি নুরুল জানাননি। অভিযোগ, নোটিসে রেভিনিউ অফিসারের কোনও স্বাক্ষরও নেই এবং নুরুলের সই-ও নকল করা হয়েছে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাসন্তী শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫১
Share:

ভূমি রাজস্ব দফতর। এই অফিস ঘিরেই ক্ষোভ স্থানীয়দের। নিজস্ব চিত্র

বাসন্তী ব্লকের ভরতগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নুরুল ইসলাম সর্দার চলতি বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি বাসন্তী ব্লক ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে একটি নোটিস পেয়েছিলেন। নুরুলের বাবা মকবুল সর্দার মারা গিয়েছেন। মকবুলের সম্পত্তিতে শরিকদের নামপত্তনের প্রক্রিয়াটিতে আপত্তিকারী হিসেবে নুরুলকে ৮ জুলাই ওই নোটিসটি পাঠানো হয়েছিল। ১১ জুলাই তাঁকে দফতরে হাজির হতে বলা হয়েছিল।

Advertisement

অভিযোগ, এমন কোনও আবেদন বা আপত্তি নুরুল জানাননি। অভিযোগ, নোটিসে রেভিনিউ অফিসারের কোনও স্বাক্ষরও নেই এবং নুরুলের সই-ও নকল করা হয়েছে!

আরও অভিযোগ, নুরুলের শরিকরা প্রধানের সই নকল করে নুরুলের মৃত বাবার নামে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ও বের করেন। এ বিষয়ে ভরতগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সবিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘মকবুল সর্দারের ডেথ সার্টিফিকেটে যে তারিখ আছে, সেই সময়ে আমি প্রধান ছিলাম না। অথচ ওতে আমার সই নকল করা হয়েছে। যারা এই জালিয়াতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

Advertisement

নুরুল ইসলাম সর্দার এই জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে বাসন্তী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। নুরুল বলেন, ‘‘আমাকে অন্ধকারে রেখে আমার বাবার ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেটের উপর ভিত্তি করে সম্পত্তির নামপত্তন করা হয়েছে।’’

এ বিষয়ে বাসন্তীর বিএলআরও শঙ্কর পাঁজা বলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’’

শঙ্করবাবু বলেছেন বটে, এমন কোনও ঘটনার কথা তাঁর জানা নেই। কিন্তু অভিযোগ, ওই বিএলআরও অফিসের কাজকর্মে অনেক দিন ধরেই নানা অসংগতি দেখা যাচ্ছে। যা নিয়ে অসন্তুষ্ট স্থানীয় মানুষ। গোটা পদ্ধিতিটির নানা ধাপেই হয়রানির শিকার সাধারণ মানুষ। সাধারণত, রাজস্ব কর জমা দেওয়ার পর দফতর থেকে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্‌ট) দেওয়া হয়। রেকর্ড বা নামপত্তন কিংবা জমির চরিত্র বদলের ক্ষেত্রে সমস্ত বকেয়া খাজনা মিটিয়ে তবেই ডিসিআর নিতে হয়। ব্যাঙ্কে টাকা জমা করে রাজস্ব দফতরে আবেদন করতে হয়। পরে দফতর থেকে আবেদনকারী ও আপত্তিকারীকে নোটিস দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট তারিখে কাগজপত্র দেখে শুনানি হয়। শুনানির উপর ভিত্তি করেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে জমির নামপত্তন করা হয়। অভিযোগ, এই গোটা পদ্ধতিরই নানা ধাপে সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বাসন্তী ব্লক ভূমি রাজস্ব দফতরে। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, বিএলআরও অফিসের কর্মীদের গাফিলতির জেরে থমকে থাকছে সরকারি নানা প্রকল্পও। কোনও প্রকল্পের জন্য জমি নিতে হলে তার ‘সার্চিং’ সংক্রান্ত কাজেও গাফিলতি করা হচ্ছে। অভিযোগ, অনেক চেষ্টা করেও এখন জমির ‘মিউটেশন’ করা যায় না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও হয় না শরিকদের বৈধ নামপত্তন। কখনও দলিল থাকা সত্ত্বেও সম্পত্তি সরকারি ভাবে রেকর্ড হয় না। কোথাও আবার একজনের রেকর্ড অন্যজনের নামে হয়ে যাচ্ছে। জমি-সংক্রান্ত কাজে এই অফিসে গিয়ে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন স্থানীয় ফারুক আহমেদ সর্দার। তিনি বলেন, ‘‘এখানে কাজকর্ম ঠিক ভাবে হয় না। ভুল-ভ্রান্তি হয়। সে জন্য আমাদের হয়রানিও হতে হয়। এ সব নিয়ে অফিসে অভিযোগ জানাতে গেলে শোনাই হয় না আমাদের সমস্যার কথা।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, এ সবের প্রতিবাদ করলে রাজস্ব দফতর থেকে আপত্তিকারীদের হঠাৎ-হঠাৎ নানা কাগজপত্র চেয়ে হয়রানি করা হয়। কিছু কিছু কাজ আবার দালাল মারফত গেলে সহজেই হয়ে যায়। দালাল চক্রের জন্য সাধারণ মানুষকে গুনতেও হয় বাড়তি টাকা।

বাড়তি টাকা অবশ্য অন্য কারণেও গুনতে হচ্ছে। কেননা, হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছে রাজস্ব কর। ফলে, বিপাকে সাধারণ মানুষ। সরকারি নতুন আইনে আগে কৃষিজমিতে রাজস্ব কর ছিল প্রতি শতক ১ টাকা। নতুন আইনে তা বেড়ে হয়েছে শতক পিছু ৪০ টাকা এবং একর পিছু ৪০০০ টাকা। অকৃষি, অবাণিজ্যিক অর্থাৎ বাস্তুজমি আগে শতক পিছু ছিল ১০ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। একর প্রতি ‘রেট’ ধার্য হয়েছে ১০ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক বা শিল্পের জন্য জমির ক্ষেত্রে শতক পিছু নেওয়া হত ২০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকা (দশ শতক পর্যন্ত)। একরে তা ৫০ হাজার টাকা।

বর্ধিত টাকা না হয় দিলেন মানুষ। কিন্তু তাতেই যে হয়রানির পরিমাণ কমছে, তা তো নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন