প্রতীকী ছবি।
বড় দোতলা বাড়ি। এক তলায় পাশাপাশি দু’টি ঘর। স্যাঁতসেঁতে এক ফালি রান্নাঘর। ভাড়াটিয়া এক মহিলা-সহ জনা ছয়েক ব্যক্তি। সাকুল্যে আড়াইখানা ঘরের দৈনিক ভাড়া দু’হাজার টাকা। অর্থাৎ মাসিক ভাড়া ৬০ হাজার টাকা। নৈহাটির মতো শহরে বাড়ি ভাড়ার এমন অঙ্ক কপালে ভাঁজ ফেলার মতোই।
মাস দুয়েক আগে অবশ্য বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করে নৈহাটি থানার পুলিশ। সঙ্গে ছয় ভাড়াটিয়াকেও। কারণ, ঘরটি ভাড়ায় নিয়েছিল কিডনি পাচার চক্রের সদস্যেরা। পাচার চক্রের দু’জন সদস্য গ্রেফতার হলেও চাঁই এখনও অধরা।
এই ঘটনার পরে একটা বিষয় পরিষ্কার, ভাড়াটিয়াদের বিস্তারিত পরিচয় জানা না থাকলে গৃহস্থের বাড়িতে বিপদ ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। প্রশাসনের তরফ থেকে বরাবরই বলা হয় ভাড়াটিয়াদের সচিত্র পরিচয়পত্র জমা রাখতে। তা পুলিশের কাছেও থাকার কথা। কিন্তু, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের প্রায় কোনও শহরেই তেমন নিয়ম মানা হয় না। তার ফলে ভাড়াটিয়ার বেশে অন্যত্র যে এমন কোনও চক্রের সদস্যরা আত্মগোপন করে নেই, সে কথা জোর দিয়ে বলা যায় না।
বলা বাহুল্য, কিডনি পাচার চক্রের সদস্যেরা গ্রেফতারের পরেও হুঁস ফেরেনি বাড়ির মালিকদের। এমনকী, থানা থেকেও ভাড়াটিয়ার পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্যও প্রচার চালানো হয়নি। নৈহাটির পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরা পুলিশকে অনেকবার বলেছি। তারা যাতে আরও সক্রিয় হয় তার জন্য ফের বলব।’’
এই বিষয়ে পুরসভার কাউন্সিলররা কি কোনও ভূমিকা নিতে পারেন না? অশোকবাবু জানান, সেই বিষয়ে আমরা আলোচনা করব। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ১) কে কান্নন বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রচার করব। যাতে ভাড়াটিয়াদের সব তথ্য থানায় থাকে তার জন্য থানাগুলিকে আরও সচেষ্ট হতে বলব।’’
বছরকয়েক আগে কাঁকিনাড়াতেই ঘটেছিল একটি ঘটনা। স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি বাড়ির একতলার দু’টি ভাড়ায় নিয়েছিল এক ‘দম্পতি’। জানিয়েছিল তাঁদের বাড়ি বিহারে। মাস তিনেক পরে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সেই বাড়িতে হানা দেয়। গ্রেফতার করা হয় ওই যুবক-যুবতীকে। পুলিশ জানায় যুবতীর স্বামী এবং চার বছরের ছেলেকে খুনের অভিযোগ রয়েছে দু’জনের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন পুলিশ জেরা করেছিল বাড়ির মালিককে। মামলার সাক্ষ্য দিতে তাঁকে ছুটতে হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে।
পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ভাড়াটিয়ার তথ্য যাতে থানায় থাকে, তার জন্য অবশ্যই পুলিশের সচেষ্ট হওয়া উচিত। কিন্তু সাধারণ নাগরিক যদি সচেতন না হন, তা হলে একা পুলিশের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়।
নৈহাটি-সহ শহরতলির প্রায় সব শহরেই বহু বাড়িই ভাড়াতে দেওয়া হয়। পুলিশের বক্তব্য, দু’-এক জন ছাড়া কোনও বাড়ির মালিকই ভাড়াটিয়াদের নথি থানায় জমা দেন না। যখন কোনও ঘটনা ঘটে বা সমস্যা হয়, তখন তাঁরা থানায় ছোটেন।