Coronavirus

গৃহবন্দি থাকার পরামর্শ বাবাকে 

পরিবারটি সচেতনতার যে নিদর্শন তৈরি করল, তা এই মুহূর্তে আমাদের সকলেরই মাথায় রেখে চলা উচিত। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকতরুণীর সচেতনতার প্রশংসায় ইতিমধ্যে পঞ্চমুখ রাজ্যের মানুষ। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও তারিফ করছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন, সহ প্রতিবেদন: অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য, সীমান্ত মৈত্র, সুজিত দুয়ারি

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০৩:৫৭
Share:

ফাইল চিত্র

পাড়ার লোক আন্দাজ করেছিলেন, স্কটল্যান্ড থেকে ফিরেছেন এলাকার এক তরুণী। শুনেই ভয় ধরে যায় অনেকের। কানাঘুষো শুরু হয়, সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ঠিকঠাক হয়েছে তো? চার দিকে যা পরিস্থিতি, তাতে খানিকটা আতঙ্কও ছড়ায়। খবর পৌঁছয় থানায়।

Advertisement

সেই মতো শুক্রবার রাতে হাবড়া থানার পুলিশ পৌঁছয় বাড়িতে। মেয়েটির বাবা জানান, মেয়ে বিদেশ থেকে ফিরেছে ঠিকই, শরীরও ভাল নেই। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে সে নিজেই বেলেঘাটা আইডিতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। সেই মতো বাড়ি না ফিরে সেখানেই গিয়েছে মেয়ে। কিন্তু আপনি তো ছিলেন মেয়ের সঙ্গে। বাবার দাবি, ‘‘ছিলাম ঠিকই, কিন্তু অন্য গাড়িতে। যতটুকু কথা হয়েছে, তা-ও দূরত্ব বজায় রেখে। মেয়েই বলেছিল সে কথা। বলেছিল সতর্ক থাকতে হবে। মুখে মাস্কও পরেছিল।’’ মেয়ের বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন, এরপরেও সতর্ক থাকার জন্য তিনি বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর থেকে ফিরে বাড়িতেই আছেন। সেখান থেকে বেরোননি।

তরুণীর সচেতনতার প্রশংসায় ইতিমধ্যে পঞ্চমুখ রাজ্যের মানুষ। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও তারিফ করছেন। বিশেষ করে লন্ডন-ফেরত আমলা-পুত্র ও তাঁর পরিবারের গাফিলতির যে উদাহরণ তৈরি হয়েছে সম্প্রতি, তার বিপরীতে হাবড়ার তরুণী ও তাঁর পরিবারের তুলনা টানছেন সকলে।

Advertisement

শনিবার সকালে জানা যায়, পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে ওই তরুণীর শরীরে। বাড়ির সামনে জড়ো হতে থাকেন অনেকে। হাবড়া থানার পুলিশ ফের পৌঁছয়। আসেন হাবড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস। নীলিমেশ বাড়ির সামনে থেকে ফোনে তরুণীর বাবার সঙ্গে কথা বলেন। পরে পুলিশ মেয়েটির বাবা, গাড়ির চালক এবং সঙ্গী এক যুবককে বেলেঘাটা আইডিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। পুলিশের আধিকারিকদের বক্তব্য, পরিবারটি খুবই দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছে। তবে যেহেতু তরুণীর ক্ষেত্রে ভাইরাস পজিটিভ, তাই আরও বেশি সতর্কতার জন্যই বাকি কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাড়ার লোকও তাই চাইছিলেন।

হাবড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও বিষয়টি নিয়ে সকাল থেকে খোঁজখবর করা শুরু করেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, এয়ারপোর্টে নেমে তরুণী হাবড়ার বাড়িতে যাননি। সরাসরি বেলেঘাটা আইডিতে চলে যান। তবে তরুণীর করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া মাত্রই আমরা তরুণীর বাবা-সহ তিন জনকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করি।’’ নীলিমেশ পরে জানান, আইডি-র চিকিৎসকেরা তিনজনকে পরীক্ষা করে আপাতত বাড়িতেই হোম কোয়রান্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।’’ সেই মতো এ দিন বিকেলে হাবড়ায় ফিরে নিজের বাড়িতেই ফিরেছেন সকলে।

তবে সতর্কতার কারণেই পুরসভার তরফে তরুণীর বাড়িটির চারপাশের পাঁচিলে জীবাণুনাশক তেল এবং ব্লিচিং ছড়ানো হয়। প্রশাসন সূত্রে জানান হয়েছে, ওই তিনজন এ ক’দিন কারও সঙ্গে মেলামেশা করে থাকলে তাঁদেরও সতর্ক থাকা জরুরি।

জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘পরিবারটি সচেতনতার যে নিদর্শন তৈরি করলেন, তা এই মুহূর্তে সকলের মাথায় রাখা উচিত।’’ একই বক্তব্য স্থানীয় মানুষেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন