যশোর রোডের ধারে পড়ে রয়েছে পিপিই কিট। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
কোথাও পড়ে রয়েছে সড়কের পাশে। কোথাও উঁকি মারছে ঝোপ থেকে। জলাশয়ে ভেসে বেড়াতেও দেখা যাচ্ছে কোথাও কোথাও। আবার অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে পথ কুকুরের মুখে। পরিত্যক্ত পিপিই কিট আতঙ্ক ছড়াচ্ছে পেট্রাপোল স্থলবন্দর সংলগ্ন এলাকায়। করোনা-সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য দফতরও।
মঙ্গলবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, যশোর রোড এবং ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে পড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি নীল-সাদা রঙের পিপিই কিট। বন্ধ দোকানের সামনে, রাস্তার পাশে ঝোপে, এবং জলাশয়েও দেখা গিয়েছে ওই বস্তু। দেখা গিয়েছে, পিপিই কিট-এর পাশে বসে খাবার খাচ্ছেন ভবঘুরেরা।
পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য হয়। রোজ পণ্যবোঝাই কয়েকশো ট্রাক পেট্রাপোল হয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলে যায়। বেনাপোলে যাওয়ার আগে ট্রাকের চালক ও খালাসিদের পিপিই কিট পরতে হয়। ট্রাক নিয়ে ফেরার পথে পেট্রাপোল পেরিয়ে তাঁদের অনেকে সেই পিপিই কিট রাস্তার পাশে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। হাওয়ার উড়ে বা কুকুরের মুখে মুখে পরিত্যক্ত সেই পিপিই কিট ছড়িয়ে পড়ে সংলগ্ন এলাকায়।
পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে যাত্রীদের যাতায়াত এখন নিয়ন্ত্রিত। তবে বিশেষ অনুমতি নিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে। বাণিজ্য চলছে স্বাভাবিক নিয়মে। ট্রাক চালক, খালাসি, সাধারণ ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ রোজ বন্দরে ভিড় করেন। সেখানে দোকানের সংখ্যাও অনেক। ওই রকম ব্যস্ত এলাকায় পিপিই কিট পড়ে থাকায় ক্ষুব্ধ তাঁরা।
‘পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত বছর করোনা সংক্রমণের সময় বেনাপোল থেকে আসা এ দেশের ট্রাক-চালক ও খালাসিদের জন্য পিপিই কিট ফেলার নির্দিষ্ট ব্যবস্থা করেছিলেন ‘ল্যাণ্ডপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ কর্তৃপক্ষ। সেখানেই তাঁরা ওই সামগ্রী ফেলতেন। এ বার সেই ব্যবস্থা না থাকায় চালক-খালাসিদের একাংশ পিপিই কিট রাস্তায় ফেলছেন।’’
বন্দর এলাকা পড়ে ছয়ঘড়িয়া পঞ্চায়েতের মধ্যে। ‘ল্যাণ্ডপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে পিপিই কিট ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা করার অনুরোধ জানিয়েছে পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন ‘‘পঞ্চায়েত থেকে কর্মী নিয়োগ করে আমরা পরিত্যক্ত পিপিই কিট তুলে নিচ্ছি। সেই কাজ করতে গিয়ে এক সাফাই-কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’
এ দিন পিপিই কিট ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করেছে ‘ল্যাণ্ডপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’। সংস্থার পেট্রাপোলের ম্যানেজার কমলেশ সাইনি বলেন, ‘‘সোমবারই বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ইতিমধ্যেই পিপিই কিট ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ডাস্টবিন রাখা হয়েছে। চালক ও খালাসিদের সচেতন করতে সাইনবোর্ড লাগানো হচ্ছে।’’
বিএমওএইচ (বনগাঁ) মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, ‘‘করোনা-আক্রান্ত কোনও মানুষের ব্যবহার করা পিপিই কিট অন্য কেউ স্পর্শ করলে তাঁর সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকে।’’
বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় ১৮০-২০০ টাকায় পিপিই কিট পাওয়া যায়। অনেক ট্রাকচালক ও খালাসি সেগুলি কেনেন। নিম্নমানের ওই পিপিই কিটগুলি সংক্রমণ ঠেকানোর উপযুক্ত নয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।