মাটিয়া-মগরাহাটেও মিলল করোনা আক্রান্তের সন্ধান
Coronavirus in West Bengal

আক্রান্ত অজমের থেকে ফেরা যুবক

১২ মে সন্দেশখালি ২ ব্লকের জেলিয়াখালির এক বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত হন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ০১:৩৭
Share:

আটকে দেওয়া হয়েছে রাস্তা। চলছে পাহারা। ন্যাজাটে। ছবি: নবেন্দু ঘোষ

দেরিতে হলেও করোনা থেকে রক্ষা পেল না সুন্দরবন এলাকা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার দ্বীপ ঘেরা এলাকায় এখনও করোনা-সংক্রমণের খবর না মিললেও, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির দু’টি ব্লকেই সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে। শেষ ঘটনাটি প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়েছে। কারণ, এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছিলেন। অজমের ফেরত আক্রান্ত যুবক যদিও গৃহ নিভৃতবাসে ছিলেন বলে আশ্বস্ত করেছে প্রশাসন। আপাতত ওই যুবক বারাসতের কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

১২ মে সন্দেশখালি ২ ব্লকের জেলিয়াখালির এক বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত হন। তার মাত্র ৫ দিনের মধ্যে এ বার সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাট থানার দক্ষিণ আখরাতলার বছর সাতাশের এক যুবকের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। প্রথমজন বেশ কিছু দিন ধরে ভাঙড় ও চিংড়িঘাটার কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকেই আক্রান্ত হন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। লকডাউন ঘোষণার পরে রাজ্যে আসা প্রথম ট্রেনের সওয়ারি ছিলেন পরের আক্রান্ত যুবক।

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, করোনা আক্রান্ত যুবক তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ১৩ মার্চ অজমেরশরিফ যান। তাঁদের ফেরার ট্রেন ছিল ২২ মার্চ। লকাডাউন ঘোষণা হওয়ায় তাঁরা সেখানেই আটকে পড়েন। ৫ মে বিশেষ ট্রেনে ডানকুনি পৌঁছন। ন্যাজাট থানা এলাকার আরও তিন জন ওই ট্রেনে ছিলেন। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে তাঁদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই ছ’জনকে ১৪ দিন গৃহ নিভৃতবাসে থাকতে বলা হয়েছিল। সন্দেশখালি ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে ১২ মে রিপোর্ট আসে। তাতে পাঁচ জনের ফল নেগেটিভ ছিল। কিন্তু ওই যুবকের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ ছিল।

Advertisement

পর দিন ওই যুবককে বসিরহাট ২ ব্লকের কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়। বৃহ্স্পতিবার ফেরে তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শনিবার সেই রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। সন্দেশখালি ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, ১৭ জন সরাসরি আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছিলেন। পরোক্ষ-সংস্পর্শে এসেছেন আরও চার জন। আক্রান্তের স্ত্রী-সন্তানের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও তাঁদের উপরে আমাদের নজর রয়েছে।” দেবব্রত জানান, সোমবার আক্রান্তের সরাসরি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির এলাকায় এখনও পর্যন্ত কারও করোনা-উপসর্গ পাওয়া যায়নি। শনিবার রাতেই ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ আক্রান্তের বাড়ির এলাকা সিল করে দেয়। তাঁর পাড়াকে গণ্ডিবদ্ধ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। পাশের দক্ষিণ আখরাতলা গ্রামকে ‘বাফার জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এলাকার বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল গঠন করে গণ্ডিবদ্ধ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকা জীবাণুমুক্ত করার কাজও চলছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

আরও এক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ মিলল বসিরহাটের মাটিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি বিধাননগরে দমকল বাহিনীতে কাজ করেন। এ মাসের ১০ তারিখ অসুস্থ বোধ করায় বসিরহাটের বাড়িতে ফেরেন। স্বাস্থ্য দফতর তাঁর লালারস পরীক্ষা করে। শনিবার ওই ব্যক্তির করোনা পজেটিভ মিলেছে। এ বিষয়ে বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ ধরা পড়ায় দত্তপুকুর কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁর সংস্পর্শে আসা লোকজনের লালারস পরীক্ষা করা হচ্ছে। এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করে আশপাশের দোকান-বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে বাড়িতে ওই ব্যক্তি থাকতেন, সেটি জীবাণুমুক্ত করার কাজ করেছে দমকল বিভাগ। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘বসিরহাটের মহকুমাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

উস্তির মগরাহাট ১ ব্লকের হরিহরপুর পঞ্চায়েতের গ্রামে বছর চল্লিশের ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পরে ফের মগরাহাটের গ্রামে শিশুর করোনা পজিটিভ মিলল। রবিবার সকালে রঙ্গিলাবাদ পঞ্চায়েত এলাকায় ১১ মাস বয়সের একটি শিশুর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জন্ম থেকেই ওই শিশুর হার্টের সমস্যায় আছে। দিন কয়েক আগে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তার লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার পরে পজিটিভ মেলে। মগরাহাটের বিএমওএইচ অরূপ নস্কর বলেন, ‘‘ওই শিশুর দেহে করোনা পজিটিভ মেলার পরে তাকে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’’ এ দিন গ্রামে যান সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা এবং মগরাহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা। পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মানবেন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই গ্রামে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে। বাইরে বেরোনো বন্ধ করতে মাইকে প্রচার চলছে। বাসিন্দাদের আনাজপাতি ও খাবারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

মগরাহাট ১ বিডিও বিশ্বজিৎ মণ্ডল জানান, শিশুটির সংস্পর্শে আসা পরিবারের ১১ জন সহ প্রতিবেশী কয়েকজনকে নিভৃতবাসে থাকতে বলা হয়েছে। সকলের থার্মাল স্ক্রিনিং করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গণ্ডিবদ্ধ এলাকা ঘোষণার জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন