Coronavirus

লকডাউনে বিপাকে ৫০ হাজার শ্রমিক

শ্রমিকদের দাবি, মালিক পক্ষ তাঁদের বকেয়া প্রাপ্য মিটিয়ে দিক। শ্রমিকদের দাবি, সংসার চালানোর জন্য আগাম তাঁদের কিছু টাকা দিক মালিক পক্ষ।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

কারওর বাড়ি মোরাদাবাদে, তো কারওর ছাপরা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা এ রাজ্যের বাসিন্দা। বিভিন্ন চটকলের শ্রমিকবস্তিতে তাঁদের বাস। চটকলে তালা পড়লে তাঁদের অনেকেই দেশে পাড়ি দেন।

Advertisement

কারণ, সেখানে ‘খেতিবাড়ি’ রয়েছে তাঁদের। সেখানে তাঁদের খাওয়ার অভাব অন্তত নেই। কিন্তু আচমকা লকডাউনে চটকলের শ্রমিকেরা আটকে পড়েছেন ব্যারাকপুরের বিভিন্ন এলাকায়। এমনিতেই বন্ধ চটকল। ফলে মিলছে না বেতন। কিছু চটকলে বেতন বকেয়া রয়েছে বলে অভিযোগ। সেই জন্য অনেকেই সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। অন্য দিকে চটকল বন্ধ থাকলেও কেন্দ্র সরকার বেতন দেওয়ার কথা বললেও তা পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। ফলে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। এই অবস্থায় বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যক্তি সাহায্যই তাঁদের সহায়।

শ্রমিকদের দাবি, মালিক পক্ষ তাঁদের বকেয়া প্রাপ্য মিটিয়ে দিক। শ্রমিকদের দাবি, সংসার চালানোর জন্য আগাম তাঁদের কিছু টাকা দিক মালিক পক্ষ। যদিও মালিক পক্ষের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া মেলেনি। তবে কয়েকটি মিলে বুধবার থেকে শ্রমিকদের বেতনের টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

এই মুহূর্তে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ১৩টি চটকল রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু বন্ধ চটকল। চালু ১৩টির মধ্যে দু’টি চটকল বর্তমানে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়ে রেখেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক সরাসরি চটকলের সঙ্গে যুক্ত। এমন অনেক শ্রমিক রয়েছেন যাঁরা সংসারের একমাত্র রোজগেরে। ফলে পরিবারের ৪-৫ সদস্য তাঁদের উপরেই নির্ভরশীল। লকডাউনে সব থেকে বেশি মুশকিলে পড়েছেন তাঁরাই। চটকলে প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকদের বেতন হয়। তাকে হপ্তা বলে। শ্রমিকদের বক্তব্য, এমন অনেকেই রয়েছেন, হপ্তার টাকা না পেলে তাঁদের সংসার চলে না।

কাঁকিনাড়া জুটমিলের শ্রমিক লক্ষণ পাসোয়ান বলেন, “মালিকেরা তো কারণে-অকারণে চটকল মাঝে মধ্যেই চটকল বন্ধের নোটিস সেঁটে দেয়। তখন সংসার চালাতে বাজারে মুটে-মজুরের কাজ করি। তা না হলে কাঁকিনাড়া পাইকারি বাজারে লরি থেকে মাল খালাস করি। বেশি দিন বন্ধ থাকলে বিহারের ছাপরায় নিজের বাড়িতে চলে যাই। ওখানে খেতিবাড়ি রয়েছে। না খেয়ে মরতে হয় না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন মুটে-মজুরের কাজও পাচ্ছি না। আবার ট্রেন নেই যে দেশে ফিরব। এখন চাল-ডাল-আলু দিয়ে অনেকেই সাহায্য করছে, তাই কোনও রকমে দিন গুজরান হচ্ছে।”

একই বক্তব্য, অন্য শ্রমিকদেরও। এক শ্রমিক জানান, লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সপ্তাহের হপ্তাও দেওয়া হয়নি। তার ফলে তাঁর মতো বহু শ্রমিকই বিপাকে পড়েছেন। অনেকেরই দানাপানি জোটানোর মতো টাকা নেই। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে দিন চালাচ্ছেন।

পানিহাটির বিধায়ক, তথা শ্রমিক নেতা নির্মল ঘোষ বলেন, “আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলব। শ্রমিকেরা যাতে তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য পান তা দেখা হবে।” এআইইউটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস বলেন “কেন্দ্র ও রাজ্যর সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী লকডাউন পর্বের বেতন মালিকেরা এখনও দেননি। আমাদের দাবি এই সময়ের বেতন যাতে শ্রমিকেরা পান তা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার দেখুক।” বিজেপির শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের নেতা রমেশ সিংহ বলেন, “এই দুঃসময়ে মালিকেরা শ্রমিকদের পাশে না থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা ন্যায্য প্রাপ্যের দাবি জানাচ্ছি।”

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন