যেখানে ফণীর ভয়

যে সমস্ত চাষিদের এখনও মাঠে বোরো ধান রয়েছে, তা অবিলম্বে তুলে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে কৃষি দফতরের তরফে। লতানো সব্জি গাছগুলিকে শক্ত খুঁটি দিয়ে বেঁধে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ০১:৪৭
Share:

মাতলার উপরে ঘনিয়েছে মেঘ। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা

বেসামাল বাঁধ

Advertisement

বাঁধ মেরামতিতে গাফিলতির অভিযোগ সুন্দরবনে দীর্ঘ দিনের। আয়লার পরেও কাজে গতি আসেনি বলে অভিযোগ। এরই মধ্যে ফণীর আতঙ্ক দানা বেঁধেছে। বাসিন্দাদের সাহস জোগাতে এবং তাঁদের সতর্ক করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কাকদ্বীপ মহকুমা প্রশাসন। বুধবার থেকে এলাকার প্রতিটি পঞ্চায়েত ও কোস্টাল পুলিশ চোঙা ফুঁকে সতর্কবার্তা দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, সমুদ্র বা নদীবাঁধের কাছে কেউ থাকবেন না, মাছ ধরতে যাওয়া নিষেধ, সৈকতে ঘোরাঘুরি করতেও বারণ করা হচ্ছে। ত্রাণ শিবিরের জন্য এলাকায় ফ্লাড সেন্টার ও স্কুলগুলিকে তৈরি রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ত্রিপল ও চিঁড়ে-গুড় পাঠানো হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক শৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, নদী ও সমুদ্র এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরও ত্রাণ এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

তৈরি ফ্লাড সেন্টার

Advertisement

ফণীর প্রস্তুতিতে সতর্ক ক্যানিং মহকুমা প্রশাসনও। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক অদিতি চৌধুরী বলেন, ‘‘পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই সমস্ত উপকূল এলাকার মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে গোসাবা, বাসন্তী ব্লকের সমস্ত ফ্লাড সেন্টার, বড় স্কুলগুলিকে তৈরি রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার ও ত্রিপলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’’ তিনি জানান, ব্লক স্তরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে ইতিমধ্যেই। এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, পুলিশ, বন দফতর, স্বাস্থ্য দফতরের সকলকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।”

যে সমস্ত চাষিদের এখনও মাঠে বোরো ধান রয়েছে, তা অবিলম্বে তুলে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে কৃষি দফতরের তরফে। লতানো সব্জি গাছগুলিকে শক্ত খুঁটি দিয়ে বেঁধে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্যানিং ১ ব্লক কৃষি আধিকারিক গোপা সমাদ্দার ও বাসন্তী ব্লকের কৃষি আধিকারিক অভীক ঘোষ বলেন, “সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছে।” ক্যানিংয়ের চাষি সৌমেন বর, গোপাল নস্কর বলেন, ‘‘শীতের মরসুমে অকাল বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছিল ধান-সহ বিভিন্ন সব্জি চাষে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফণীর আতঙ্ক।’’

আগাম সতর্কতা হিসাবে সুন্দরবনে পর্যটকদের আসা-যাওয়ার উপরেও সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও বন দফতরের তরফ থেকে আপাতত পর্যটকদের কোনও জলযান সুন্দরবনের নদী, খাঁড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। যে পর্যটকেরা ইতিমধ্যেই ঘুরতে গিয়েছিলেন, তাঁদের দ্রুত ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন পিপল ওয়াটার সোসাইটির সভাপতি হরেন ঘোড়ুই বলেন, “সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সর্তকতা: কৈখালি নদীর ধারে মাইকে প্রচার। ছবি: সুমন সাহা

সতর্কতা

সমুদ্র বা নদীবাঁধের কাছে কেউ থাকবেন না মাছ ধরতে যাওয়া নিষেধ সৈকতে ঘোরাঘুরি মানা সরানো হচ্ছে পর্যটকদের ফসল কেটে নেওয়ার পরামর্শ

​ব্যবস্থা

খোলা হল কন্ট্রোল রুম তৈরি রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল তৈরি স্পিড বোট মজুত করা হয়েছে পর্যাপ্ত

নিরাপদ দূরত্বে

ফণীর ক্ষয়ক্ষতি রুখতে কুলতলি ব্লক প্রশাসন, কুলতলি থানা ও মৈপীঠ কোস্টাল থানার উদ্যোগে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে শুরু হয়েছে জোরদার প্রচার। বছর দশেক আগে আয়লায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল এই সব এলাকায়। এ বার তাই আগে থেকেই সতর্ক প্রশাসন। বুধবার থেকেই এলাকায় এলাকায় ঘুরে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। মৎসজীবীদের নদীতে যেতে বারণ করা হয়েছে। নদীর কাছাকাছি যাঁরা বাস করেন, তাঁদের নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে বলা হয়েছে। বারুইপুরের মহকুমাশাসক দেবারতি সরকার জানিয়েছেন, ঝড়ের মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত। বিভিন্ন ব্লকে ২৪ ঘণ্টার সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পুলিশ-সহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

ভোট নিয়ে ভাবনা

সুন্দরবন এলাকার অন্যতম সমস্যা নোনা জল। সে ক্ষেত্রে ঝড়ের প্রকোপে গভীর নলকূপ বিকল হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর। আয়লার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ফণীর মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পানীয় জল মজুত করা হচ্ছে। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি, সেচ দফতরের সঙ্গেও সমন্বয় সাধন করে চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে কী করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে বিএসএনএল দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্লক অফিসে ওয়্যারলেস সেট পাঠানো হয়েছে। তৈরি রাখা হচ্ছে উদ্ধারের প্রয়োজনে তৈরি রাখা হচ্ছে স্পিড বোট।

১৯ মে সুন্দরবন এলাকায় ভোট। ইতিমধ্যে ইভিএম মেশিন, ভিভি প্যাট মেশিন প্রতিটি ব্লকে স্ট্রং রুমে রাখা হয়েছে। ৫ মে ভোট কর্মীদের প্রশিক্ষণ রয়েছে। ফণীর আতঙ্কের মধ্যে তা নিয়েও মাথাব্যথা আছে প্রশাসনের। কোন দিক কী ভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়ে রীতিমতো চাপে প্রশাসন। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘ফণীর দাপট মোকাবিলার পাশাপাশি নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু রাখার সব রকম ব্যবস্থা চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ জেলাশাসকের কথায়, ‘‘সাগর ও কাকদ্বীপ ব্লকের উপকূলবর্তী এলাকায় দশ হাজার মানুষকে ইতিমধ্যেই নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমস্ত দফতরের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা হয়েছে।’’

মজুত প্রতিষেধক

উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকাতেও ফণী নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি ১ ও ২, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ এলাকায় দুর্যোগ হতে পারে বলে আশঙ্কা। বিভিন্ন ব্লকে সরকারি স্তরে সতর্কতামূলক প্রচার শুরু হয়েছে। বুধবার টাকিতে জরুরি বৈঠক করেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। উপস্থিত ছিলেন বসিরহাটের মহকুমাশাসক, এসডিপিও-সহ বিভিন্ন বিডিওরা। ছুটি বাতিল হয়েছে সরকারি কর্মীদের। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। খাদ্যদ্রব্য মজুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। সন্দেশখালি ২ বিডিও কৌশিক ভট্টাচার্য জানান, বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলি তৈরি রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নদীর ঘাটে নৌকোর পরিবর্তে ৪টি ভেসেলে যাত্রী পারাপারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সন্দেশখালির ধামাখালি ফেরিঘাটে রবার বোট, লাইফ জ্যাকেট, স্পিডবোট-সহ উদ্ধার কাজের বিভিন্ন সামগ্রী-সহ বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ৩৪ জনের একটি দল পৌঁছেছে। নদীর ধারের বাসিন্দাদের নিকটবর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাসনাবাদের বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় জানান, পানীয় জল সরবরাহে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য ইতিমধ্যেই একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জলের পাউচ তৈরি করা শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে স্বাস্থ্য দফতরকে প্রয়োজনীয় ওষুধ, প্রতিষেধক মজুত রাখার জন্য বলা হয়েছে। জেলাশাসক জানান, রেডক্রস-সহ প্রয়োজনীয় সব দফতরকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।

বসিরহাট কন্ট্রোল রুম: ০৩২১৭-২৬৭২৯৭/ ৯৪৩৪০১০১৭০

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কন্ট্রোল রুম: ০৩৩-২৪৩৯-৯২৪৭

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন