বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যায় বইখাতাও

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীফলতলা পূর্ব কলোনিতে কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। প্রায় দেড়-দু’কিলোমিটার দূরের প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে হয়।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

রায়দিঘি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৯
Share:

বেহাল: নিজস্ব চিত্র

সকাল সাড়ে ১১টা। একটি মাটির বাড়ির খোলা দাওয়ায় চট পেতে বসে কচিকাঁচার দল। তিন শিক্ষিকা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে পড়াচ্ছেন। রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের শ্রীফলতলা দাসপাড়া শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের কোনও ভবন নেই। ফলে এ ভাবেই দিনের পর দিন চলছে পঠনপাঠন।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীফলতলা পূর্ব কলোনিতে কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। প্রায় দেড়-দু’কিলোমিটার দূরের প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। ২০০৩ সালে বাম জমানায় ওই গ্রামে ওই শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের অনুমোদন মিলেছিল। পরে তিন জন শিক্ষিকাও নিয়োগ করা হয়। সে সময়ে ক্লাস শুরু হয়েছিল পাড়ার ঠাকুরদালানে। তারপর থেকেই যত দিন গিয়েছে কখনও বারান্দায়, কখনও বৈঠকখানায় পঠনপাঠন চলেছে। নিজস্ব ভবন জোটেনি কখনও।

ওই শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষিকা প্রতিমা নস্কর বলেন, ‘‘এ ভাবে দিনের পর দিন ক্লাস নেওয়া যায় না। নানা সমস্যায় মাঝে মধ্যেই ছুটি দিয়ে দিতে হয়। এখন অভিভাবকেরাও ছেলেমেয়েদের পাঠাতে চাইছেন না।’’ রায়দিঘির মথুরাপুর ২ বিডিও স্বাতী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বর্ষা কেটে গেলেই নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’’

Advertisement

মাস কয়েক ধরে ওই শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের স্থান হয়েছে ওই গ্রামের শম্ভুনাথ দাস নামে এক ব্যক্তির মাটির বাড়ির বারান্দায়। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও জায়গা না পাওয়ায় আমি ওখানে পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। না হলে তো অনেক দূরে গিয়ে ওদের পড়াশোনা করতে হবে। তা ছাড়া, বেশির ভাগই গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা এখানে পড়তে আসে। অতদূরে গিয়ে তাদের অভিভাবকদের পড়ানো সম্ভব নয়।’’ খোলা দাওয়ায় ক্লাস নিতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। বৃষ্টি পড়লে জলের ছাঁট আসে। শিশুরা তো ভেজেই, ছাড় পায় না বইপত্রগুলিও। তাই বর্ষায় বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে কেন্দ্র।

ওই কেন্দ্রে এখন পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ৬০ জন। তাদের মিড ডে মিলের জন্য কোনও রান্নাঘর নেই। পাশের একটি ক্লাব ঘরের পিছনে ত্রিপল টাঙিয়ে রান্নার কাজ চলে। আগাছা ও জঙ্গলে ভরা ওই জায়গায় শিশুরা নিরাপদও নয়। সাপ, নানা বিষাক্ত পোকামাকড়ের উপদ্রব। শিশু ও শিক্ষিকাদের জন্য শৌচাগার নেই। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। পাড়ার নলকূপ থেকে মিড ডে মিলের রান্নার জন্য পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয়।

ভবন নির্মাণের জন্য বছরখানেক আগে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা অনুমোদিত হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ দিন জমি না মেলায় কাজ শুরু করা যায়নি। মাসকয়েক আগে স্থানীয় এক ব্যক্তি ও ক্লাবের সদস্যেরা প্রায় ৩ শতক জলাজমি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে নির্মাণ কাজ এখনও শুরু করা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন