•উৎসুক: বাড়ির সামনে ভিড়। নিজস্ব চিত্র
এক চিলতে ঘর। অভাবের চিহ্ন স্পষ্ট। ঘরে আসবাব বলতে টুকিটাকি কিছু জিনিস আর একখানা তক্তপোষ। সেখানেই পড়ে বাবা-মেয়ের নিথর দেহ।
রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটার গাজনা তেঘরিয়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম পরিতোষ দে (৬২) ও টিয়া দে (২২)। দেহ দু’টি ময়না-তদন্তের জন্য বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পরিতোষবাবুর বড় মেয়ে রুম্পা শিকদারের বিয়ে হয়েছে গোপালনগরে। তিনি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে দাবি করেছেন, বোনকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। বাঁচাতে গেলে মারা হয়েছে বাবাকেও। পরিতষবাবুর বাড়ি কিছুটা নির্জন জায়গায়। তাঁর বড় মেয়ের দাবি, এর আগেও বোনের উপরে একাধিক বার রাতের অন্ধকারে অপরিচিত দুষ্কৃতীরা এসে যৌন নির্যাতন।
জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। সেই মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
পুলিশ দেহের পাশ থেকে বাটি-ভরা সিন্নি পেয়েছে। তা থেকে কোনও বিষক্রিয়া হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এলাকার মানুষের সন্দেহ অন্য। তাঁদের অনেকে জানালেন, মাস তিনেক আগে ওই তরুণীর উপরে যৌন নির্যাতন চালিয়ে পালিয়েছিল এক যুবক। তাকে ধরা যায়নি। পরিচয় মেলেনি। থানা-পুলিশও হয়নি। রুম্পার মতোই স্থানীয় বাসিন্দাদেরও দাবি, ফের কেউ মেয়েটির উপরে যৌন নির্যাতন চালাতে এসে বাবা-মেয়ে চিনে ফেলায় খুন করেছে।
দেহ ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকেরা অবশ্য দেহ এনআরএস হাসপাতালের কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে ময়না-তদন্তের সুপারিশ করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাজনা তেঘরিয়া এলাকায় স্থানীয় গোপালপুর সড়কের পাশে বাড়ি পরিতোষবাবুর। বাড়িটি টিন ও টালির ছাউনি দেওয়া। ইটের দেওয়াল। পরিতোষবাবুর স্ত্রী কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দিনমজুরি করতেন ওই বৃদ্ধ। লোকজনের বাড়ির ছোটখাট ফাইফরমাশ খাটতেন। প্রতিবেশীদের দাবি, তাঁদের কোনও শত্রু ছিল না বাবা-মেয়ের। তরুণী মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না। বাড়ির বাইরে বিশেষ বেরোতেন না।
রবিবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশী এক মহিলা পরিতোষবাবুর বাড়ির টিউবওয়েলে জল আনতে যান। তিনি দেখেন, ঘরে আলো জ্বলছে না। দরজা খুলে টর্চ জ্বেলে দেখতে পান, বাবা-মেয়ের দেহ তক্তপোষের উপরে পড়ে। পরিতোষবাবুর মুখে রক্ত লেগেছিল।
পুলিশ কুকুর আনার দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। ঘটনাস্থলে ওসি অনুপম চক্রবর্তী, সিআই গাইঘাটা পার্থ সান্যাল, এসডিপিও অনিল রায় আসেন। অনিলবাবু বাসিন্দাদের ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিলে রাত ১২টা নাগাদ জনতা শান্ত হয়। দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।