অপরিকল্পিত সুপার মার্কেট, ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা

ব্যবসার সুবিধা হবে বলে আশা দেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। বেকাররা স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাবলম্বী হওয়ায়। কিন্তু যাকে ঘিরে এতকিছু দেগঙ্গার বেড়াচাঁপায় সেই সুপার মার্কেট কিন্তু ব্যবসায়ী, বেকারও কারও আশাই পূরণ করতে পারেনি। অভিযোগ, সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাবেই এই অবস্থা।

Advertisement

নির্মল বসু

দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০১:৩২
Share:

বেহাল সুপার মার্কেট। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

ব্যবসার সুবিধা হবে বলে আশা দেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। বেকাররা স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাবলম্বী হওয়ায়। কিন্তু যাকে ঘিরে এতকিছু দেগঙ্গার বেড়াচাঁপায় সেই সুপার মার্কেট কিন্তু ব্যবসায়ী, বেকারও কারও আশাই পূরণ করতে পারেনি। অভিযোগ, সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাবেই এই অবস্থা। জেলা পরিষদের তৈরি ব্যবসা কেন্দ্রের সামনে আজ আবর্জনার স্তুপের দুর্গন্ধ, বাজারে ঢোকার রাস্তায় গাড়ি পার্কিং, ঘরে ফাটলের মধ্যে থেকে উকিঁ মারছে আগাছা। ফাটা ছাদ দিয়ে জল পড়ে। ফলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পরিকল্পনাহীন ভাবে গড়ে তোলা সুপার মার্কেট ঘিরে অনেকেই হতাশ।

Advertisement

কয়েক বছর আগে দেগঙ্গা ব্লকের বেড়াচাঁপায় ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় জেলাপরিষদ। উদ্দেশ্য, বেকারদের স্বাবলম্বী করে তোলা। ২০০৩ সালে বেড়াচাঁপা বাজারের কাছে টাকি রাস্তার পাশে দেবালয় সুপার মার্কেটের শিলান্যায় করেন তৎকালীন জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি ভ্রান্তি অধিকারী। কিন্তু জমি জটের কারণে বাজারের বাড়ি তৈরির কাজ পিছিয়ে য়ায়। পাঁচ বছর পর ২০০৭-’৮ সাল নাগাদ জেলা পরিষদের সদস্য তারকেশ্বর চক্রবর্তীর প্রচেষ্টায় বাজার তৈরির কাজ শুরু হয়।

একতলা বাজারের দু’দিকে গাড়ি রাখার জায়গা। রয়েছে শৌচাগার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীদের কথা ভেবে বাজারের মধ্যে ৩২টি ঘর করা হয়। কিন্তু বাজার তৈরির পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা বেহাল হয়ে পড়ে। বাজারে ঢোকার মুখ আটকেই এখন চলে গাড়ি পার্কিং। ছাদ ফেটে জল পড়ে। ঝাঁ চকচকে বাজার ঘিরে এখন আবর্জানার স্তুপ। যা পথচলতি মানুষের শৌচাগারে পরিণত হয়েছে। ফলে বাজারের মধ্যে দোকানে ঢোকা তো দুরের কথা, বাজারের সামনে দিয়ে হাঁটলেও নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়। পরিকল্পনাহীন বাজারের মধ্যে বিভিন্ন সুয়োগ সুবিধার অভাবে আটটির বেশি দোকান খোলা সম্ভব হয়নি। বারি বেশিরভাগ দোকানই এখন গুদাম। ফলে নামে সুপার মার্কেট হলেও আদতে তার ব্যবহার হচ্ছে গুদাম হিসাবেই।

Advertisement

বাজারের ব্যবসায়ী রতন সাধুখাঁ বলেন, ‘‘নোংরা-আবর্জনা পরিষ্কার তো দূরঅস্ত, বাজারের ঘর সংস্কারের উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে য়ায়। ফলে ক্রেতারাও বড় একটা ঢুকতে চান না এখানে। তাই ব্যবসা মার খাওয়ায় অনেকেই নিজেদের দোকানকে গুদাম হিসাবে ব্যবহার করছেন।’’ বাজারে বই-খাতার দোকান উৎপল দাসের। তাঁর কথায়, ‘‘ছাদ ফেটে পড়া জল পড়ায় বই-খাতা সব নষ্ট হচ্ছে। বাজারের সামনেটা আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। দেওয়ালের ফাটল থেকে উঁকি মারছে আগাছা। খরিদ্দাররা বড় একটা আসতে চান না। ব্যবসা চলবে কী করে।’’ আসবাবপত্রের ব্যবসায়ী কাঞ্চন বণিকের গলায় হতাশার সুর। বললেন, ‘‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সব দোকান খুললে হয়তো কিছু মানুষ আসতেন। কিন্তু এত বছর হয়ে গেল, বাজারের যা পরিবেশ দাঁড়িয়েছে তাতে আর কোনও ব্যবসায়ী দোকান নিতে আগ্রহী নন। ঝাঁ চকচকে বাজার হবে বলে এক সময় স্বপ্ন দেখেছিলাম। এখন তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।’’

সুপার মার্কেট তৈরির পিছনে যাঁর উদ্যোগ রয়েছে সেই তারকেশ্বরবাবুকে বাজারের হাল নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ছোট ব্যবসায়ীদের সুবিধা করতে সুপার মার্কেট করা হয়েছিল। বর্তমানে জেলা পরিষদে থাকা দলের পক্ষে একটু চেষ্টা করে উন্নয়নের পরিকল্পনা নিলে হয়তো ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন পূরণ হবে।’’ দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা আব্দুল ওদুত বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের জন্য ওই বাজারের কাছে একটি শৌচাগার তৈরি করা হবে। বাজারের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য জেলাসভাপতিকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।’’ স্থানীয় শ্যামসুন্দর ভট্টাচার্য়, অমল মাইথি, সুজয় ঘোষ, কমলা মণ্ডল বলেন, ‘‘সুপার মার্কেট হবে শুনে আশার আলো দেখেছিলাম। ব্যবসার উন্নতি হলে এ লাকার চেহারাটাও বদলাত। কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন ভেঙেছে। সুপার মার্কেট দেখে তা বাজার না অটো এবং ট্রেকারের স্ট্যান্ড বোঝা যায় না।’’

বেড়াচাঁপার অন্যতম আকর্ষণ চন্দ্রকেতুগড়ের খনা-মিহিরের ঢিবি সংলগ্ন এলাকায় মাটি নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু মূল্যবান প্রত্ন সামগ্রী। যার অনেক কিছু নিয়ে নিজের উদ্যোগে এক সংগ্রহশালা গড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ মৈত্র। তাঁর কথায়, ‘‘ইচ্ছা ছিল আমার কাছে থাকা প্রত্ন সামগ্রীগুলি সংরক্ষণের জন্য সুপার মার্কেটের দু’তলায় একটি মিউজিয়াম তৈরি করার। মিউজিয়াম হলে এখানে এসে পর্যটকেরা সে সব দেখার সুযোগ পেতেন। যা এলাকার অর্থনীতিকেও উন্নত করত।’’

জেলা পরিষধের সভাধিপতি রহিমা বিবি বলেন, ‘‘কেবল বেড়াচাঁপায় নয়, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় য়ে কটি সুপার মার্কেট আছে সেগুলির আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দিলীপবাবুর বিষয়টি অবশ্যই আলোচনা করে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন