Bibhutibhushan Bandyopadhyay

Bibhutibhushan Bandyopadhyay: অনাদরে পড়ে বিভূতিভূষণের বাড়ি, জন্মদিনে উঠল সংরক্ষণের দাবি

গাছগাছালিতে ভরা চারিদিকে দেওয়ালঘেরা এই বাড়িটি তালাবন্ধই থাকে। বারান্দায় রয়েছে বিভূতিভূষণ ও তাঁর স্ত্রীর আবক্ষ মূর্তি।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

গোপালনগর শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:৫৩
Share:

অবহেলা: রবিবার, কথাসাহিত্যিকের জন্মদিনে কয়েকজন দর্শনার্থী উপস্থিত হয়েছেন ‘স্মৃতির রেখা’-য়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

রং চটে বিবর্ণ। পলেস্তারা খসে পড়ছে। দেওয়ালের একাংশে শ্যাওলা জমেছে। ছাদে শুকনো পাতার স্তূপ। দেওয়ালে হাবিজাবি লেখা— কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসতবাড়ির প্রতিটি কোনায় এমনই অবহেলার ছাপ। বনগাঁ মহকুমার গোপালনগরের শ্রীপল্লি ব্যারাকপুরের ওই বাড়িটিতেই জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছিলেন ‘আরণ্যক’-এর স্রষ্টা। রবিবার ছিল এই সাহিত্যিকের জন্মতিথি। সেই উপলক্ষে ফের বাড়িটি সংরক্ষণের দাবি তুললেন এলাকার মানুষ, কবি ও সাহিত্যিকেরা।

Advertisement

রবিবার দুপুরে বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেল, কবি নীলাদ্রি বিশ্বাস বিভূতিভূষণের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “বাড়িটির প্রতি অনাদর দেখে খুবই কষ্ট পাই। যাঁদের বাড়িটি সংরক্ষণের কথা ছিল তাঁরা তা করতে পারেননি।” এদিন বসতবাড়িতে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু মানুষ এসেছিলেন। তাঁরা বিভূতিভূষণ এবং তাঁর স্ত্রী রমাদেবীর মূর্তিতে মালা
দিয়ে গিয়েছেন। সকলেরই দাবি, বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা কবি সমরেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিভূতিভূষণের পরিচয়ে আমরা পরিচিত। এটা অত্যন্ত বেদনার যে, আমরা আমাদের গর্বের বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারিনি। সকলকে এগিয়ে এসে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।”

Advertisement

পুরনো জরাজীর্ণ এই ‘স্মৃতির রেখা’ নামে বাড়িটি কয়েক বছর আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সংস্কার করা হয়েছিল। আদি বাড়িটির আদল একই রেখে নীল-সাদা রং করা হয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই বাড়ির দেওয়ালে এখন শ্যাওলা জমেছে।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তিতে মালা দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

গাছগাছালিতে ভরা চারিদিকে দেওয়ালঘেরা এই বাড়িটি তালাবন্ধই থাকে। বারান্দায় রয়েছে বিভূতিভূষণ ও তাঁর স্ত্রীর আবক্ষ মূর্তি। বছরভর তাঁদের মূর্তিতে ফুলের মালা শুকিয়ে থাকে। বারান্দায় ফ্লেক্সে লেখা ‘সাহিত্যিকের জীবনপঞ্জি’। সিঁড়ির পাশে বিভূতিভূষণের পুত্রবধূ চিত্রা মুখোপাধ্যায়ের একটি আবেদনপত্র রয়েছে। তাতে যদিও এই বাসভবনকে কলুষিত না করার অনুরোধ করা হয়েছে, কিন্তু বাড়ির পিছনের ঝোপ জঙ্গলের আবর্জনা অন্য কথা ব্যক্ত করল।

প্রকৃতিপ্রেমিক বিভূতিভূষণের শৈশব, শিক্ষা, কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন কেটেছে ব্যারাকপুরের বাড়িতে। তাঁর বাড়ির কাছেই ইছামতী নদী। নদীর পাড়ে বসেই তিনি সৃষ্টি করেছেন অনেক কালজয়ী উপন্যাস। সাহিত্যের বাড়িটি আজ উপেক্ষিত। প্রায় রোজই মানুষ আগ্রহভরে এই বাড়িটি দেখতে এলেও, এখানে সাহিত্যিকের কোনও স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। লেখা বা ব্যবহৃত জিনিসপত্র কিছুই নেই। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করুক এবং এখানে বিভূতিভূষণের একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক। সাহিত্য অনুরাগী ও আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে অন্তত এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।

ইছামতীর নদীর যে স্থানে বিভূতিভূষণ স্নান করতে আসতেন, সেখানে বাম আমলে তৈরি হয়েছিল ‘বিভূতিভূষণ স্মৃতিঘাট’। ২০০০ সালে স্মৃতিঘাটে সাহিত্যিকের একটি মূর্তি উন্মোচন করেছিলেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী। কিন্তু বাড়িটি সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ইতিমধ্যে।

সাহিত্যিকের বসতবাড়ির সংরক্ষণ নিয়ে জেলা পরিষদের মেন্টর গোপাল শেঠ বলেন, “রাজ্য সরকার চায় বাড়িটি নিজেদের হাতে নিয়ে সংগ্রহশালা তৈরি করতে। এ বিষয়ে সাহিত্যিকের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। শীঘ্রই আলোচনায় বসব।”

স্থানীয় বাসিন্দা তথা বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “বাড়িটি রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করে সংক্ষরণ করতে চেয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম। বিধায়ক তহবিলের টাকা দিয়েও বাড়িতে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। ফের চেষ্টা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন