প্রতীকী ছবি।
ফোনে এক চিকিৎসককে গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠল। ওই ঘটনার জেরে ওই চিকিৎসক এবং তাঁর পরিবারের সদস্যেরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গোপালনগর থানার পাল্লা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক তথা মেডিক্যাল অফিসার তুহিন রায়ের সঙ্গে ঘটেছে বলে অভিযোগ।
বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। ব্লক স্বাস্থ্য দফতর থেকে পুলিশের কাছেও অভিযোগ করা হয়েছে। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। কিছু দিন আগে ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক মহিলা চিকিৎসককে গালিগালাজ ও শারীরিক ভাবে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। তারপরে ওই চিকিৎসক চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
হুমকি-ফোন পেয়ে তুহিনবাবুও এতটা আতঙ্কিত, তিনি আর পাল্লা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চাইছেন না। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে তাঁকে স্থানীয় আকাইপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বদলি করে দেওয়া হয়েছে সাময়িক ভাবে। ওই চিকিৎসকের পরিবারও চাইছেন না, হুমকির মুখে তিনি পাল্লায় ফিরে যান।
তুহিনবাবুর বাড়ি হাবরায়। তিনি প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে পাল্লা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত। প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তুহিনবাবু। এখন তিনি আকাইপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এলেও তাঁর সঙ্গে পরিবারের কোনও না কোনও সদস্য আসছেন। বৃহস্পতিবার তুহিনবাবুর সঙ্গে আকাইপুরে এসেছিলেন মা অঞ্জুদেবী।
কেন হুমকি দেওয়া হল তুহিনবাবুকে?
তিনি জানান, দিন কয়েক আগে গভীর রাতে কয়েকজন মদ্যপ ব্যক্তি পাল্লা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসে। রোগী দেখতে হবে বলে চিকিৎসককে ডাকাডাকি করে। তুহিনবাবু দরজা খুললে তারা তাঁর কাছে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করে। কেন টাকা দিতে হবে, প্রশ্ন করায় বলা হয়, এখানে চাকরি করতে হলে টাকা দিতে হবে। তুহিনবাবু রাজি হয়নি। অভিযোগ, এরপরেই ফোনে তাঁকে গালিগালাজ করা হয়। বলা হয়, পাল্লায় এলে খুন করে ফেলা হবে। শুধু তাই নয়, রাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ।
তুহিনবাবু বলেন, ‘‘আমার বাবা ও স্ত্রীকে ফোনে গালিগালাজ করা হয়েছে। কোনও অবস্থাতেই আমি আর পাল্লায় ফিরে যাব না। তাতে চাকরি ছেড়ে দিতে হলে হবে।’’
বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, ‘‘এ ভাবে চলতে থাকলে তো পাল্লা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য কোনও চিকিৎসক পাওয়া যাবে না। ভবিষ্যতে কী ভাবে ওখানে চিকিৎসা পরিষেবা চালানো হবে জানি না।’’ মৃগাঙ্কবাবুর কথায়, ‘‘মানুষের সেবা করতে এসে চিকিৎসকদের জীবন বিপন্ন হবে, এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।’’
বনগাঁ মহকুমা প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টার পরে পাল্লা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী ভর্তি চালু হয়েছিল। ওখানকার মানুষ যদি চিকিৎসকদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তা হলে স্রেফ চিকিৎসকের অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি শুধু বহির্বিভাগে পরিণত হয়ে যেতে পারে।’’ তাঁর মতে, ওখানকার মানুষ ও জনপ্রতিনিধিদের উচিত, চিকিৎসকদের সঙ্গে সহযোগিতা করা।