অগ্নিমূল্য গ্যাস। হেঁশেল সামলাতে হিমসিম মানুষ। এ দিকে, পেট্রল-ডিজ়েলের ঊর্ধ্বমুখী দামের প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। বাড়ছে জিনিসের দাম। পথে গাড়ি বের করতে পকেটে চাপ পড়ছে সকলেরই। এই পরিস্থিতিতে সস্তার ‘কাটা তেল’-এর রমরমা জেলায় জেলায়। তার জেরে আবার বাড়ছে দূষণ। খোঁজ নিল আনন্দবাজার
Fuel Price

Duplicate fuel: ফের বাড়ছে কাটা তেলের চাহিদা

ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, ভাঙড়, জীবনতলা, কুলতলি ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ সর্বত্রই চলছে কাটা তেলের ব্যবসা।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৫৮
Share:

বেআইনি: বাসন্তীতে রাস্তার ধারে বিকোচ্ছে কাটা তেল। নিজস্ব চিত্র

পানের দোকান, চায়ের দোকান, মুদিখানা— দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে নজরে আসবে, দড়ি বেঁধে পুরনো নানা আকারের বোতলে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তেল।

Advertisement

ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, ভাঙড়, জীবনতলা, কুলতলি ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ সর্বত্রই চলছে কাটা তেলের ব্যবসা। পেট্রল-ডিজ়েলের দর যে ভাবে বেড়েছে, তাতে খরচ কমাতে অটো বা ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চালকদের অনেকেই কাটা তেলের উপরে ভরসা রাখছেন। ভুটভুটি, ট্রেকারেও ব্যবহার হয় এই তেল। প্রশাসনের নাকের ডগায় এই কারবার চললেও প্রশাসনের ভূমিকা কার্যত নীরব দর্শকের বলে অভিযোগ পরিবেশ সচেতন মানুষের।

মূলত কেরোসিনের সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি হয় কাটা তেল। গদখালি-ক্যানিং রুটের গাড়ির চালক সুকুমার সর্দার, গোসাবার ভুটভুটি চালক নবিরালি মোল্লারা জানালেন, পেট্রল ১০২ টাকা লিটার। ডিজ়েল ৯২ টাকার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। এই পরিস্থিতিতে কাটা তেল মিলছে ৭০-৭৫ টাকা লিটারে। ইঞ্জিনের ক্ষতি হতে পারে জেনেও কাটা তেল ব্যবহার ছাড়া তাঁদের এই মুহূর্তে রোজগার সামাল দেওয়ার উপায় নেই বলে জানালেন তাঁরা।

Advertisement

কাকদ্বীপ ও ডায়মন্ড হারবারের বহু ট্রলার বর্ষার মরসুমে ইলিশ মাছ ধরতে সমুদ্রে যায়। একে তো ইলিশ তেমন ধরা পড়ছে না জালে, তার উপরে ডিজ়েলের দাম সামলাতেও হিমসিম অবস্থা ট্রলার মালিকদের। তাঁদের অনেকেও কাটা তেল ব্যবহার করছেন বলে জানা গেল।

কাকদ্বীপের ট্রলার মালিক সুধাংশু জানা বলেন, ‘‘এমনিতেই সমুদ্রে মাছ নেই। বেশিরভাগ ট্রলার খালি হাতে ফিরছে। অতিরিক্ত দামে ডিজ়েল কিনতে হলে লোকসানের বহর বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কাটা তেলই ভরসা।’’

যে এলাকায় পেট্রল পাম্প কম বা দূরে দূরে, সেই এলাকায় কাটা তেলের ব্যবসা আগেও রমরমিয়ে চলত দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সুন্দরবনের দ্বীপাঞ্চলে কাটা তেল বহুদিন ধরেই ভরসা মানুষের। ইদানীং তেলের দাম বাড়ায় কাটা তেলের বিক্রিও বাড়ছে।

বাসন্তীর কাটা তেল ব্যবসায়ী সইদুল সর্দার বলেন, “পেট্রল, ডিজ়েলের দাম বাড়ায় মাস দু’য়েক ধরে আমাদের এই তেলের চাহিদা বেড়েছে।’’ তাঁর মতে, রাস্তার পাশে অনেক পেট্রল পাম্প হয়ে যাওয়ার ব্যবসায় মন্দা চলছিল কিছুদিন ধরে। কিন্তু পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়ায় ফের কদর বাড়ছে কাটা তেলের।

কাটা তেল বিক্রি ও মজুত বেআইনি। একাধিকবার কাটা তেলের দোকান, গুদামে আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার পর পুলিশি তৎপরতা চোখে পড়লেও সারা বছর অভিযান হয় না বলে জানাচ্ছেন মানুষ।

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘কাটা তেল পেট্রল, ডিজ়েলের চেয়ে কমপক্ষে চারগুণ বেশি দূষণ ছড়ায় পরিবেশে। অবিলম্বে এর ব্যবহার বন্ধ করা দরকার।’’

বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “কাটা তেলের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালানো হয়। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন