Durgapuja

ঢাকে এ বার কাঠি পড়বে কি, চিন্তায় পড়েছেন বাসন্তীরা

মনে আনন্দ নেই। আর্থিক সমস্যায় দিন কাটছে। সংসার চালাতে কেউ বেছে নিয়েছেন পার্লারের কাজ, কেউ গৃহসহায়িকার কাজ করছেন, কেউ সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। 

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র 

  হাবড়া শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪৪
Share:

এ ভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করেন ওঁরা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

দুর্গাপুজোর মাস দু’য়েক আগে থেকে তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। নতুন করে ঢাক বেঁধে মহড়া শুরু হত। পুজোর কয়েক দিন আগে তাঁরা পাড়ি দিতেন অসম, মহারাষ্ট্র, দিল্লি বেঙ্গালুরু, মুম্বই, কলকাতা এমনকী ভিনদেশেও। মোটা টাকা উপার্জন হত দলের সকলের।

Advertisement

কিন্তু এ বার করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে হাবড়ার মছলন্দপুর এলাকার মহিলা ঢাকিদের কাছে পুজোর কার্যত কোনও বায়না আসেনি। মনে আনন্দ নেই। আর্থিক সমস্যায় দিন কাটছে। সংসার চালাতে কেউ বেছে নিয়েছেন পার্লারের কাজ, কেউ গৃহসহায়িকার কাজ করছেন, কেউ সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

বছর পাঁচেক আগে মছলন্দপুর রেলকলোনি এলাকার বাসিন্দা নামকরা ঢাকি শিবপদ দাস এলাকার পিছিয়ে পড়া মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করার জন্য ঢাক বাজানোর প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছিলেন। মহিলা ঢাকিদের নিয়ে তৈরি হয় ‘সাদপুর মোহিনী কাহারবা ঢাকি সমিতি’। মহিলাদের একত্র করে ঢাক বাজাতে নিয়ে আসার কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। একজন-দু’জন ছাত্রীকে পেয়েছিলেন শিবপদ। নিজের স্ত্রীকেও ঢাক বাজানোর তালিম দিতে শুরু করেন।

Advertisement

ক্রমশ আগ্রহ দেখান আরও অনেকে। পরবর্তী সময়ে জনা পঞ্চাশ মহিলা শিবপদর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাক বাজিয়ে রোজগারের পথ খুঁজে পেয়েছেন। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গোটা ভারত।

তবে এ বার করোনা আবহে সবই ম্রিয়মাণ। দুর্গাপুজোর সময় বেশি আয় হলেও সারা বছর ধরেই মহিলা ঢাকিদের চাহিদা ছিল। মাসে গড়ে ১০ হাজার টাকা আয় করতেন বলে জানিয়েছেন। বাসন্তী বিশ্বাস নামে এক মহিলা ঢাকির কথায়, ‘‘ছ’মাস কাজ নেই। পুজোয় বায়না নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করতাম। ভেবেছিলাম, পুজোতে কাজ পাব। এ বার তা হল না। খুবই মন খারাপ। সরকারের পক্ষ থেকে মাসে ১ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। তা দিয়ে কি আর সংসার চলে! বাধ্য হয়ে আয়ার কাজ করছি।’’

মানসী দত্তর কথায়, ‘‘অসম, দিল্লি, কলকাতায় ঢাক বাজাতে যেতাম। নিজেরা আনন্দ পেতাম, মানুষকে আনন্দ দিতে পারতাম। কিন্তু এখন ঢাকের কাজ সব বন্ধ। বাড়িতে পার্লার করে কাজ করছি।’’

অঞ্জলি দাস বলেন, ‘‘সারা বছর সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান, পুজোয় আমরা কাজ পেতাম। এ বার কোনও কাজ নেই। লোকের বাড়ি কাজ করছি।’’

সমস্যার কথা নিজেও বুঝতে পারছেন শিবপদ। বললেন, ‘‘ঢাক বাজিয়ে এই মহিলারা অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর হয়েছিলেন। কিন্তু এ বার খুবই বিপাকে পড়েছে ওঁরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন