চোখের সামনে মেয়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন বাবা। সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাট পুর এলাকার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভ্যাবলা স্টেশনের কাছে দাসপাড়ায়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মনোরঞ্জন সরকার (৬৫)। দেহ ময়না-তদন্তের জন্য রেলপুলিশ বারাসত নিয়ে যায়। তদন্তও শুরু করেছে রেলপুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভ্যাবলা স্টেশনের পাশে দাসপাড়ায় রেলের খাসজমিতে বাস করতেন মনোরঞ্জনবাবু। কয়েক বছর আগে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। দুই মেয়ের বিয়ের পর একাই থাকতেন তিনি। রেলের ওই জমিতেই গড়ে ওঠা কলোনিতে শ্বশুর-জামাই পাশাপাশি থাকতেন। অভিযোগ, মনোরঞ্জনের এক ফালি জমির উপর দৃষ্টি পড়ে জামাই কৃষ্ণ মণ্ডলের। জামাইয়ের সঙ্গে জোট বাঁধে স্থানীয় পচন দাস, পরিতোষ দাস। তাদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদ চলছিল মনোরঞ্জনের। সম্প্রতি সাত হাজার টাকার বিনিময়ে ওই জমির দখলিস্বত্ব মনোরঞ্জন স্থানীয় এক প্রতিবন্ধীকে মৌখিক ভাবে হস্তান্তর করেন। জামাই ওই টাকার ভাগ চায়। তা নিয়ে উভয়পক্ষের বচসার সময়ে বাবাকে বাঁচাতে মেয়ে এগিয়ে এলে তাঁকে অপমান করা হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ আরও জানায়, এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ জমিবিবাদ চরমে ওঠে। জামাই-সহ দু-তিনজন প্রতিবেশী মেয়েকে অপমান করছে দেখে প্রতিবাদ করেন মনোরঞ্জন। তাতেও জামাইকে নিরস্ত করা যায় না। তখন তিনি আত্মহত্যার হুমকি দেন। এর পরেও মেয়েকে এবং তাঁকে অপমান করা হচ্ছে দেখে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন মনোরঞ্জন। এই ঘটনা চলাকালীন দুপুর একটা নাগাদ তিনি শিয়ালদহগামী ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। এলাকাবাসী মনোরঞ্জনের মৃত্যুর জন্য প্রতিবেশী-সহ জামাইকে দায়ী করে তাদের শাস্তির দাবি তোলেন।
এ দিন মৃতের মেয়ে কানন মণ্ডল বলেন, ‘‘বাবা একটা ঝুপড়ি ঘরে কোনও রকমে দিন কাটাতেন। নিজের চিকিৎসার টাকার প্রয়োজনে বাবা এলাকার এক প্রতিবন্ধীকে জমি বিক্রি করেন। আমার অপমান সহ্য করতে না পেরে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন তিনি। রেল পুলিশের কাছে প্রতিবেশী পরিতোষ দাস, পচন দাস ও তার স্ত্রী-সহ মোট চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি।’’
অভিযুক্তরা এলাকা-ছাড়া। অভিযুক্তদের পরিবারের অবশ্য দাবি, তাঁদের পরিবারের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়।