ছেলের থেকে বৃদ্ধা ফেরত পেলেন পাসবই

সহায়-সম্বলহীন হয়ে সাতদিন ধরে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের জন্য নির্দিষ্ট বিশ্রামের এলাকাতেই ঠাঁই নিয়েছিলেন বারাসতের বনমালীপুরের বছর ঊনষাটের সুমিতা দাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৭
Share:

সুমিতা দাস।

ঘর থাকতেও তিনি ‘বে-ঘর’! ব্যাঙ্কে টাকা রয়েছে। কিন্তু তুলতে পারছিলেন না। পাসবই এবং পেনশন বই ছিল ছেলে-বউমার জিম্মায়।

Advertisement

সহায়-সম্বলহীন হয়ে সাতদিন ধরে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের জন্য নির্দিষ্ট বিশ্রামের এলাকাতেই ঠাঁই নিয়েছিলেন বারাসতের বনমালীপুরের বছর ঊনষাটের সুমিতা দাস। বুধবার তাঁর কিছুটা স্বস্তি ফিরল। পুলিশে সাহায্যে ছেলের কাছ থেকে ফিরে পেলেন ব্যাঙ্কের পাশবই এবং পেনশন বই। কিন্তু ছেলে-বউমার নামে থানায় কোনও অভিযোগ জানাননি। তাঁর এটাই স্বস্তি, ‘‘এখন বনগাঁতে বাড়ি ভাড়া করে থাকব। কোনও অসুবিধা হবে না। শান্তিতে থাকা আমার কাছে জরুরি।’’

সুমিতাদেবী আদতে বনগাঁর চাঁপাবেড়িয়ার বাসিন্দা। তাঁর স্বামী, প্রয়াত বরুণবাবু বনগাঁ হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে বারাসতের বনমালীপুরে ছেলে-বউমার কাছেই থাকতেন সুমিতাদেবী। আগেও ছেলে-বউমার ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন বলে জানান। তা নিয়ে থানা-পুলিশও হয়েছিল। ছেলে পুলিশের কাছে মাকে ভাল ভাবে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধা ফের সাত দিন আগে ঘর ছাড়েন।ক’দিন ধরে মলিন পোশাকে ওই হাসপাতালের মেঝেতে পলিথিনের উপরে চাদর পেতে রাত কাটাতে দেখে তাঁকে কম্বল দিয়েছিলেন এক রোগীর আত্মীয়। আরও কয়েক জন তাঁকে চা-খাবার দিচ্ছিলেন। তাঁদের ভরসাতেই দিন কাটছিল। কারণ, তাঁর অর্থের সংস্থান ছিল না।বুধবার দুপুরে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিলেন বৃদ্ধা। পুলিশকর্তার কাছে তাঁর অনুরোধ ছিল, ছেলের কাছ থেকে পেনশন বই ও পাশবই ফিরিয়ে দিতে। অভিজিৎবাবু বারাসত থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন। বৃদ্ধাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে পুলিশ তা ফিরিয়ে দেয়। তাঁকে বনগাঁ ফেরার টিকিট কেটে বাসেও তুলে দেয়।

Advertisement

সুমিতাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে-বৌমা এখনও বলেনি, বাড়ি থেকে চলে যেতে। কিন্তু ছেলের এমন আচরণ যে বাড়িতে থাকতে পারিনি। ছেলেই পেনশনের ৩৮০০ টাকা তুলে নিত। ও শান্তিতে থাকুক। আমি একাই থাকব।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, বৃদ্ধাকে অভিযোগ দায়ের করার কথা জানানো হয়েছিল। তিনি রাজি হননি। শুধু পেনশন বই এবং পাশবই ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানান।

পুলিশকর্মীরা বলছেন, এই হল মায়ের মন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement