প্রকাশ্যে খুন করা এতই সোজা কাজ!

চোখের সামনে এক জনকে গুলি করছে অনেকে মিলে। সেলুনের সামনেই মাটিতে কাটা গাছের মতো টাল খেতে খেতে পড়ে গেল লোকটা। এক জন রিভলভারের নলটা লোকটার মুখের মধ্যে একেবারে ঢুকিয়ে দিয়ে গুলি করতে লাগল। লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। আরে, এ তো গৌতম!

Advertisement

তরুণকান্তি ঘোষ (মধ্যমগ্রাম পুরসভার কর্মী)

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

এতগুলো ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। তবু স্বাভাবিক হতে পারছি না। রোজকার মতো শুক্রবার সকালেও বাজারে মাছ কিনছিলাম। হঠাৎ জোরে পরপর কয়েকটা শব্দ। সঙ্গে প্রচণ্ড চিৎকার, অকথ্য গালিগালাজ। দেখলাম, সামান্য দূরে রাস্তার মুখে একটা সেলুন থেকে এক জনকে টেনে বার করছে দু’জন। এক জন লোকটার বুকে রিভলভার ঠেকিয়ে গুলি চালাচ্ছে। শব্দটা আসলে গুলিরই। চোখের সামনে এক জনকে গুলি করছে অনেকে মিলে। বুক থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে লোকটার। সেলুনের সামনেই মাটিতে কাটা গাছের মতো টাল খেতে খেতে পড়ে গেল লোকটা। এক জন রিভলভারের নলটা লোকটার মুখের মধ্যে একেবারে ঢুকিয়ে দিয়ে গুলি করতে লাগল। সিনেমায় যেমন দেখা যায়, ঠিক সে রকম। লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। আরে, এ তো গৌতম! আমাদের পাড়াতেই থাকে। দিন কয়েক আগেই জেল খেটে বাড়ি ফিরেছে। বুঝলাম, দু’দল অপরাধীর লড়াইয়ের সামনে পড়ে গিয়েছি আমি।

Advertisement

ঘোরের মধ্যেই কয়েক পা এগিয়েছিলাম। হঠাৎ রাস্তায় একটা বোমা ফাটাল ওরা। কী প্রচণ্ড শব্দ! ধোঁয়ায় ভরে গেল চারপাশ। বোমাগুলো থেকে পাথরের মতো কী যেন ছিটকে বেরোচ্ছে। ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেলাম। তারই মধ্যে আরও বোমা ফাটতে লাগল। দেখলাম, ওরা গুলি ছুড়ছে। কিন্তু কাউকে তাক করে নয়। শূন্যে। ওরা ১২-১৪ জন। সবার মাথা-মুখ ঢাকা হেলমেটে। এক জন গৌতমের মুখটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখল, প্রাণ আছে কি না।

সেলুনের সামনে পরপর কয়েকটা মোটরবাইক দাঁড় করানো। তার মধ্যে চারটে মোটরবাইকে উঠে পড়ল ওরা। আর একটা বাইক তখনও দাঁড় করানো ছিল। পরে জানলাম, ওটা গৌতমের। ওই চারটে বাইকের একটার পিছনে বসে এক জন তখনও সমানে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। এর পরে দুটো বাইক আমাদের পাশ দিয়ে বাজারের দিকে আর অন্য দুটো উড়ালপুলে উঠে সোদপুরের দিকে চলে গেল।

Advertisement

তখন আতঙ্কে পাগলের মতো ছুটোছুটি করছে সবাই। স্কুলের ছেলেমেয়েরা ভয়ে কাঁপছে। দেখলাম, গৌতমের ভাই কার্তিক মাথা চাপড়াচ্ছে। গৌতমের সঙ্গেই ছিল ও। ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। সেলুনের মধ্যে ভয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে মিঠুন। ও-ই তো গৌতমের দাড়ি কাটছিল। আস্তে আস্তে আমরা এগিয়ে যাই। দেখি, রক্তে ভেসে যাচ্ছে সেলুনের মেঝে। গুলির খোল পড়ে আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। কোনও মতে গৌতমকে তুলে বারাসতের একটা নার্সিংহোমে নিয়ে যাই আমরা। কিন্তু রাস্তাতেই বুঝতে পারি, প্রাণটা আর নেই।

একই ওয়ার্ডের বঙ্কিমপল্লিতে পাশাপাশি বাড়ি আমাদের। গৌতমকে তাই অনেক দিন ধরেই চিনি। ওর নামে অনেক অভিযোগ। তবু এমনটা যে ঘটবে, তা মেনে নিতে পারছি না। ভাবছি, স্কুলের যে ছেলেমেয়েদের সামনে এটা ঘটল, তাদের কী অবস্থা! এ ভাবে ভরা বাজারে, এত লোকের মধ্যে বোমাবাজি করে এক জনকে গুলি করে খুন করা এত সহজ? এই ঘটনার পরে আর যা-ই হোক, নিজেকে কখনও নিরাপদ বলে ভাবতে পারব না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন