সোমনাথ সরকার
প্রেসক্রিপশনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। কিন্তু তাতে লেখা এমডি, ডিএম, এমসিএইচ, এফআরসিএস (ডবল) এর মতো ডিগ্রির কথা।
ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে সোমবার বিকেলে একজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বনগাঁর একটি ফার্মেসি থেকে সোমনাথ সরকার নামে বছর ৭৯ এর ওই ব্যক্তিকে ধরা হয়। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বীথিকা সরকার নামে এক মহিলা সোমনাথবাবুর কাছে চিকিৎসা করাতে যান। তাঁকে দেখে ওই চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করতে বলেন। বীথিকাদেবী রিপোর্ট নিয়ে সোমনাথবাবুর কাছে গেলে তিনি বলেন, বীথিকাদেবীর হার্টে তিনটি ব্লক রয়েছে। একটি কিডনি সম্পূর্ণ খারাপ হয়ে গিয়েছে। বীথিকাদেবী জানান, সোমনাথবাবু তাঁকে বলেছিলেন যে বিদেশ থেকে তিনি একটি ওষুধ আনিয়ে দেবেন যা খেলে বীথিকাদেবী সুস্থ হয়ে যাবেন। সেই ওষুধ না খেলেও বীথিকাদেবী ওই চিকিৎসকের কথামতো অন্য ওষুধ খেতে শুরু করেন। কিন্তু তাতে তাঁর শরীর আরও খারাপ হয়ে যায়। তখন বীথিকাদেবীর মেয়ে অন্য চিকিৎসকের কাছে যান। সেখানে গেলে জানা যায় যে, বীথিকাদেবীর কোনও হার্ট কিংবা কিডনির অসুখই হয়নি।
এরপরই রবিবার বীথিকাদেবীর মেয়ে পবিত্রা থানায় অভিযোগ করেন। ফার্মেসিতে গিয়ে সরকার পরিবারের সদস্যেরা তাকে চেপে ধরেন। তিনি কোনও উত্তর দিতে পারেননি বলে পুলিশ জানিয়েছে। খবর পেয়ে বনগাঁ থানার পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি ইতালিতে ডাক্তারি পড়াশোনা করেছেন। ওখানকার ডিগ্রিই পেয়েছেন। তা ছাড়া তিনি এসএসকেএম, চেন্নাইয়ের শ্রী রামচন্দ্র হাসপাতাল, বেঙ্গালুরুর সত্যসাঁই ইনস্টিটিউশনে চিকিৎসা করেন। তিনি মেডিসিন, কার্ডিওলজি ও নিওরলজিতে বিশেষজ্ঞ। এখন তিনি বনগাঁর ট বাজার এলাকার একটি ফার্মেসিতে কয়েক মাস ধরে রোগী দেখছিলেন। রোগী প্রতি তিনশো টাকা করে নিতেন। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, অতীতে তাঁর বনগাঁতেও বাড়ি ছিল।
পুলিশ জানায়, সোমনাথবাবুর কাছে রেজিস্ট্রেশন নম্বর জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা দেখাতে পারেননি। শুধু তাই নয়, সোমনাথবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁর জন্ম বাংলাদেশে। এখন বাড়ি কলকাতার কালীঘাটে। তবে তাঁর বাড়ির ঠিকানা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে পুলিশের। তাঁর কাছ থেকে কয়েকটি সচিত্র ভোটার কার্ডও পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এমনকী জেরার সময় তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, ১৯৯৮ সালে বনগাঁর সভাইপুর গ্রামে এক রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তিনি ৬ মাস জেলও খেটেছিলেন।