মশা নিধনে প্রচার চলছে রাজ্যে।
হেমন্ত ফুরিয়ে শীত এসেছে। কিন্তু গ্রীষ্মের প্রথমে শুরু হওয়া ডেঙ্গির দাপট এখনও অব্যাহত ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। দিন কয়েক আগেও নৈহাটিতে মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গি আক্রান্ত এক বৃদ্ধার। অভিযোগ, গারুলিয়া, ভাটপাড়া, নৈহাটি, হালিশহর কাঁচরাপাড়াতেও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বহু। পুরসভাগুলি বলছে, তারা ডেঙ্গির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়ছে। প্রশ্ন উঠছে, তাতেও ডেঙ্গি ঠেকানো যাচ্ছে কই?
গত বছরেও ডেঙ্গি ভুগিয়েছিল পুরো ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলকে। এ বার গ্রীষ্মের আগেই বারাসতে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিকে সাবধান করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত প্রধান এবং পুরপ্রধানদের তিনি নির্দেশ দেন, মশাবাহিত রোগ রুখতে অনেক আগে থেকেই লড়াই শুরু করতে হবে। সেই লড়াই চালাতে হবে বছরভর।
কিছু পুরসভা অনেক আগে থেকে শুরু করেছিল সচেতনতা কর্মসূচি। কিন্তু তারপরেও এ বছর ডেঙ্গি প্রাণ কেড়েছে কয়েক জনের। জ্বরে ভুগে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের। তাঁদের মৃত্যুর শংসাপত্রে ডেঙ্গি না লেখা হলেও পরিবারের দাবি, ডেঙ্গিতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের।
এ বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে তালিকায় প্রথমেই নাম রয়েছে ভাটপাড়া পুরসভার। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব বলছে, গত জানুয়ারি থেকে এ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১২৪৭ জন। যা এই বছরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় যে কোনও একটি পুর এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ।
এরপরে জেলার তালিকায় রয়েছে বিধাননগর পুরসভা। ওই একই সময়ে এই পুর এলাকায় সরকারি হিসেবে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০১৭ জন। এর পরে প্রায় সব ক’টি পুরসভা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের। বিধাননগরের পরেই সব থেকে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে গারুলিয়া পুর এলাকায়। সেখানে গত ১১ মাসে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭১ জন।
তারপরে রয়েছে টিটাগড়, খড়দহ, পানিহাটি, কামারহাটি। তালিকার পরের নাম নৈহাটি, হালিশহর, কাঁচরাপাড়া। নৈহাটি, কাঁচরাপাড়া, গারুলিয়া, হালিশহরের বাসিন্দারা বেশির ভাগ সময় নদিয়ার কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়। কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সুত্রে জানা গিয়েছে, সেখানেও এই সব পুর এলাকার প্রচুর জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। এখনও রয়েছেন। তাদের মধ্যে বহু রোগীর রক্তেই মিলেছে ডেঙ্গির জীবাণু।
ভাটপাড়ার পুরপ্রধান তথা এলাকার বিধায়ক অর্জুন সিংহ জানিয়েছেন, তাঁদের যা যা করনীয় সবই করা হয়েছে। বেশিরভাগ বাড়িতেই চৌবাচ্চায় জল জমিয়ে রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু বাড়িতে আমরা চৌবাচ্চা ভেঙে দিয়েছি। তার পরেও লোকে বিভিন্ন ভাবে জল জমিয়ে রাখছে। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু নাগরিকেরা সচেতন না হলে পুরসভার চেষ্টাও জলে যাবে।’’